নিউজ ডেস্ক | অধিকারপত্র
ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্মিত বিশাল প্রতিরক্ষামূলক আবরণ যা বিশ্বের ভয়াবহতম পারমাণবিক দুর্ঘটনার ধ্বংসাবশেষকে আটকে রাখতে তৈরি করা হয়। ড্রোন হামলার পর আর তার মূল নিরাপত্তা ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা IAEA। সাম্প্রতিক এক পরিদর্শন শেষে সংস্থাটি জানায় এই সুরক্ষা-ঢালের প্রাথমিক নিরাপত্তা কার্যকারিতা বিশেষ করে রেডিয়েশন আটকানোর সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন দাবি করে রাশিয়া চেরনোবিল স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে। মস্কো অভিযোগ অস্বীকার করলেও IAEA জানায়, হামলায় বিশাল স্টিলের কাঠামোটির বাইরের অংশে আগুন ধরে এবং গুরুতর ক্ষতির চিহ্ন দেখা যায়। IAEA-এর দল নিশ্চিত করেছে লোড-বেয়ারিং স্ট্রাকচার বা ওজন বহনকারী অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সচল আছে। কিছু প্রাথমিক মেরামতও করা হয়েছে। তবে সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পারমাণবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠন অপরিহার্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্কের কারণ নেই তবু মেরামত জরুরি। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জিম স্মিথ বিবিসিকে বলেন, চেরনোবিল নিয়ে অতিরিক্ত আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তার মতে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো রেডিওএকটিভ ধুলাবালি ছড়িয়ে পড়া। কিন্তু তা এখনো মূল কংক্রিটের সারকোফাগাস এর ভেতরে সুরক্ষিত রয়েছে। এই সারকোফাগাসের উপরেই বসানো ছিল অতিরিক্ত প্রতিরক্ষামূলক স্টিলের শিল্ড। ১৯৮৬ সালের বিস্ফোরণে ইউরোপজুড়ে যে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও দূষণ সৃষ্টি হয়েছিল। তার পরই সোভিয়েত ইউনিয়ন কংক্রিটের অস্থায়ী আবরণ তৈরি করে। এর আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র ৩০ বছর। তাই পরে নির্মিত হয় ১০০ বছর রেডিয়েশন প্রতিরোধ করতে সক্ষম বৃহৎ ধাতব শিল্ড যেটি এখন ক্ষতিগ্রস্ত। ডিসেম্বরের শুরু থেকে IAEA ইউক্রেনের জ্বালানি ও পারমাণবিক নিরাপত্তা অবকাঠামো পর্যবেক্ষণ করছে। গত রাতে রাশিয়া কেন্দ্রীয় শিল্পনগরী ক্রেমনচুকে তীব্র বিমান হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে IAEA চেরনোবিল ছাড়াও বিভিন্ন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র পরিদর্শন করছে, যেগুলো নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের কুলিং সিস্টেম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ঘটনার পর স্পষ্ট হয়েছে চেরনোবিল কেবল অতীতের এক বিপর্যয়ের স্মৃতি নয় বরং চলমান সংঘাতের মধ্যেও ঝুঁকির বাস্তব উৎস। ড্রোন হামলায় সুরক্ষা ঢালের ক্ষতি এখনো বড় বিপদ তৈরি না করলেও দ্রুত মেরামত জরুরি। কারণ দীর্ঘমেয়াদে সামান্য দুর্বলতাও ভবিষ্যতে বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ ডেকে আনতে পারে।
মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: