নিউজ ডেস্ক | অধিকারপত্র
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি বিচে ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনার পর ফের আন্তর্জাতিক আলোচনায় উঠে এসেছে ফিলিপাইনের দীর্ঘদিনের ইসলামপন্থী উগ্রবাদের ইতিহাস। রোববারের ওই হামলায় ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত করতে গিয়ে অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে হামলাকারীদের ফিলিপাইন সফরের বিষয়টি। অস্ট্রেলীয় পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় জড়িত বাবা-ছেলে সাজিদ ও নাভিদ আকরাম হামলার এক মাস আগে ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় এক মাস অবস্থান করেছিলেন। দেশটি ছেড়ে যাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই তারা সিডনির জনপ্রিয় বন্ডি বিচে ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি অনুষ্ঠানে গুলি চালায়। হামলার পর তাদের গাড়ি থেকে ঘরে তৈরি ইসলামিক স্টেট (আইএস) পতাকাও উদ্ধার করা হয়। যদিও তারা ফিলিপাইনের ঠিক কোন এলাকায় ছিলেন, কী উদ্দেশ্যে সফর করেছিলেন কিংবা স্থানীয় কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল কি না সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত তথ্য প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ফিলিপাইনে তাদের সফরের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম তদন্তাধীন রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবিসি জানিয়েছে, দেশটির সন্ত্রাসবাদবিরোধী সংস্থাগুলোর ধারণা ফিলিপাইনে অবস্থানকালে তারা সামরিক ধাঁচের প্রশিক্ষণ নিতে পারে। তবে ফিলিপাইনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এডুয়ার্ডো আনো দাবি করেছেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে তারা মিন্দানাও অঞ্চলে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিলিপাইনে সন্ত্রাসবাদ কিছুটা কমলেও দক্ষিণাঞ্চলে এখনো বেশ কয়েকটি সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
ফিলিপাইন ইনস্টিটিউট ফর পিস, ভায়োলেন্স অ্যান্ড টেররিজম রিসার্চের চেয়ারম্যান রোমেল বানলাই বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিপাইনকে এশিয়ার সন্ত্রাসবাদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়। ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ মিন্দানাওয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদ, দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আবু সায়্যাফসহ একাধিক জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় ছিল। ২০১৭ সালে মারাওয়ি শহর দখলের মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে। সে সময় ইসলামিক স্টেট এশিয়ার যোদ্ধাদের ইরাক-সিরিয়ার বদলে ফিলিপাইনে আসার আহ্বান জানিয়েছিল। তবে ২০২০ সালে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন এবং বিভিন্ন শান্তি চুক্তির ফলে এসব গোষ্ঠীর তৎপরতা অনেকটাই কমেছে। ২০২৫ সালের গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্সে ফিলিপাইনের অবস্থান ২০তম, যেখানে ২০১৯ সালে দেশটি ছিল নবম স্থানে। তারপরও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বিপদ পুরোপুরি কাটেনি। কিছু গোষ্ঠীর ভেতরে এখনো বিচ্ছিন্ন ও বিদ্রোহী অংশ সক্রিয় রয়েছে। বানলাই সতর্ক করে বলেন, সন্ত্রাসবাদের হুমকি পুরোপুরি শেষ হয়নি। এদিকে ফিলিপাইন সরকার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে তদন্তে সহযোগিতা করছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের দপ্তর এক বিবৃতিতে ফিলিপাইনকে ‘আইএস প্রশিক্ষণকেন্দ্র’হিসেবে আখ্যা দেওয়ার প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্তিকর বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। বন্ডি বিচ হামলার তদন্ত এখনো চলমান। তবে এই ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা ও নজরদারি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
--মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: