ক্রাইম প্রতিনিধি, অধিকার পত্র ডটকম
ঢাকা | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ড ছিল একটি সুপরিকল্পিত মিশন—গোয়েন্দা তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। হত্যার নেপথ্যে মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ হাদির দলে ভিড়ে মাত্র সাত দিনের মধ্যে হত্যার ছক কষে তা বাস্তবায়ন করে বলে তদন্ত সূত্রে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল বিদেশ থেকে ফিরে একটি ‘শুটার টিম’ গঠন করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে হাদির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা হয়। এরপর সুযোগ বুঝে চালানো হয় প্রাণঘাতী হামলা। হামলার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ফয়সাল দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ আলামত গায়েব করা হয়।
ইনকিলাব মঞ্চ থেকেই শুরু পরিচয়
তদন্তে জানা যায়, ইনকিলাব মঞ্চের কালচারাল সেন্টারেই হাদি ও ফয়সালের প্রথম পরিচয়। শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে—কীভাবে ফয়সাল ধাপে ধাপে হাদিকে অনুসরণ করে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
গত ৪ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১৮ মিনিটে বাংলামোটরের ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে ফয়সাল ও তার সহযোগী কবির হাদির সঙ্গে প্রায় ছয় মিনিট বৈঠক করেন। সেখানে ফয়সাল নির্বাচনী প্রচারণায় একসঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেন—যা ছিল হাদির আস্থাভাজন হওয়ার প্রথম ধাপ।
প্রচারণার ভেতরে ঢুকে পড়ে শুটার
এরপর ৯ ডিসেম্বর রাতে ফয়সাল আবার কালচারাল সেন্টারে আসেন, সঙ্গে ছিলেন আলমগীর। ওই বৈঠকে নির্বাচনী প্রচারণার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। পরদিন ১০ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় হাদির প্রচারণায় সরাসরি অংশ নেন ফয়সাল। এই পর্যায়েই হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয় বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
রেকি, প্রস্তুতি ও রিসোর্ট বৈঠক
হত্যা বাস্তবায়নের আগে ফয়সাল নরসিংদী, সাভার ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রেকি করেন। ১১ ডিসেম্বর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায় অবস্থান নিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেন।
হামলার দিন ভোরে ফয়সাল উবারে করে যান হেমায়েতপুরের গ্রিন জোন রিসোর্টে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভোর ৫টা ২২ মিনিটে ফয়সাল ও আলমগীরের গাড়ি রিসোর্টে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া ও তার বোন। সেখানে হাদির একটি ভিডিও দেখিয়ে ফয়সাল মাথায় গুলি করার পরিকল্পনার কথা জানান এবং ঘটনার পর সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখতে বলেন।
দুপুরে হামলা
প্রচারণা শেষে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে হাদি মতিঝিলের উদ্দেশে রওনা হলে শুটাররা তাকে অনুসরণ করতে থাকে। নামাজ শেষে দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে হাদি আবার রওনা হলে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে প্রবেশ করে তারা।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা সুযোগ খুঁজে শেষে দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে খুব কাছ থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়ে ফয়সাল।
চিকিৎসা ও মৃত্যু
আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
পরে তাঁর মরদেহ দেশে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হয়।
📌 যেভাবে হাদির দলে ভিড়ে হত্যার ছক কষেছিল শুটার ফয়সাল, ফাঁস চাঞ্চল্যকর তথ্য
#হাদি_হত্যা #শরিফ_ওসমান_হাদি #ফয়সাল_করিম #ইনকিলাব_মঞ্চ #রাজনৈতিক_হত্যা #ক্রাইম_নিউজ #বাংলাদেশ #odhikarpatra

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: