কিয়েভ, ইউক্রেন | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এখন কেবল দুই দেশের সামরিক সংঘর্ষ নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী ভূ-রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষার মঞ্চে পরিণত হয়েছে। ২০২৬ সালে যুদ্ধের পঞ্চম বছরে পা রাখার আগে সামরিক কর্মকর্তা, সাবেক জেনারেল ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট—পূর্ণ শান্তি নয়, বরং একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি বা ‘ফ্রোজেন কনফ্লিক্ট’ই সবচেয়ে সম্ভাব্য পরিণতি।
ইউক্রেনীয় সেনা কর্মকর্তা ভাসিলির বক্তব্য এই বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। তিনি বলেন, রুশ সেনারা মানসিকভাবে দুর্বল হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন অস্ত্র ও জনবলের সংকটে রয়েছে। রাশিয়ার বিশাল জনবল, শক্তিশালী অর্থনীতি এবং দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালানোর সক্ষমতা ইউক্রেনের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করছে।
সামরিক ভারসাম্য: সাহস বনাম সক্ষমতা
ইউক্রেনের সৈন্যদের মনোবল এখনো দৃঢ় হলেও বাস্তবতা হলো—
- ইউক্রেন এখনো পশ্চিমা সহায়তার ওপর প্রায় ৬০ শতাংশ নির্ভরশীল
- গোলাবারুদ ও দূরপাল্লার অস্ত্রের ঘাটতি রণকৌশল সীমিত করছে
- বিপরীতে রাশিয়া যুদ্ধ অর্থনীতিতে পুরোপুরি রূপান্তরিত হয়েছে
ইউক্রেনের সাবেক চার তারকা জেনারেল ইহোর রোমানেঙ্কোর মতে, এই যুদ্ধের পূর্ণ সমাপ্তি তখনই সম্ভব, যখন ইউক্রেন ১৯৯১ সালের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা পুনরুদ্ধার করতে পারবে—যা বর্তমান বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব।
২০২৬ কেন ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সাল কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ—
1 যুদ্ধের ক্লান্তি (War Fatigue):
রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয় দেশেই অর্থনৈতিক চাপ, জনবল ক্ষয় এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে।
পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকা বদল:
যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে ‘গ্লোবাল পুলিশ’ ভূমিকা থেকে সরে আসছে। ইউরোপ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত, ফলে ইউক্রেন ইস্যুতে ঐক্য দুর্বল হতে পারে।
পুতিনের রাজনৈতিক হিসাব:
যদি ক্রেমলিন বুঝতে পারে যে যুদ্ধ থেকে কৌশলগত লাভ আর বাড়ছে না, তখনই আলোচনা সম্ভব।
কিয়েভভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ‘পেন্টা’-র প্রধান ভলোদিমির ফেসেঙ্কো বলেন, ২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে শান্তি আলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে, তবে সেটি হবে কঠিন আপসের মাধ্যমে।
সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি: কে কী ছাড় দেবে?
বিশ্লেষকদের ধারণা অনুযায়ী, সম্ভাব্য সমঝোতার কাঠামো হতে পারে—
- ইউক্রেন দোনেৎস্ক অঞ্চলের কিছু নিয়ন্ত্রিত এলাকা ছাড়তে পারে
- বিনিময়ে রাশিয়া উত্তর ও পূর্ব ইউক্রেনের কয়েকটি অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে
- ন্যাটো সদস্যপদ আপাতত স্থগিত থাকবে
- যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন হতে পারে
তবে এই আপস ইউক্রেনের ভেতরে রাজনৈতিক ও জনমত সংকট তৈরি করতে পারে।
‘ফিনিশ মডেল’—ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ভয়
বিশ্লেষক ইহার তিশকেভিচ সতর্ক করে বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে তথাকথিত ‘ফিনিশ সিনারিও’।
এর অর্থ—যুদ্ধ বন্ধ হলেও ইউক্রেনকে দখলকৃত অঞ্চল রাশিয়ার অংশ হিসেবে কার্যত মেনে নিতে বাধ্য হওয়া।
এই মডেল ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি তৈরি করবে।
সামগ্রিক মূল্যায়ন:
সব বিশ্লেষণ মিলিয়ে বলা যায়—
✔️ ২০২৬ সালে যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম
✔️ একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি বা সীমিত শান্তি চুক্তি হতে পারে
✔️ সংঘাত নতুন রূপে ২০২৭ সাল পর্যন্ত গড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে
বিশ্ব রাজনীতি ইউক্রেন ইউক্রেন শান্তি চুক্তি Russia Ukraine ceasefire ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি Ukraine war future 2026 রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্লেষণ

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: