নিউজ ডেস্ক | অধিকারপত্র
বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI প্রযুক্তির জয়জয়কারের মধ্যেই এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে শিশুদের বাঁচাতে নড়েচড়ে বসেছে চীন। সম্প্রতি দেশটির সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (CAC) এআই সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একগুচ্ছ কঠোর খসড়া নীতিমালা প্রস্তাব করেছে। এই নিয়মের মূল লক্ষ্য হলো শিশুদের মধ্যে আত্মহনন, সহিংসতা এবং জুয়ার মতো ক্ষতিকর প্রবণতা রোধ করা।
নীতিমালায় যা থাকছে
চীনের নতুন এই প্রস্তাবিত নীতিমালায় এআই ডেভেলপারদের জন্য বেশ কিছু বাধ্যতামূলক শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে:
অভিভাবকের সম্মতি: শিশুদের 'ইমোশনাল কম্প্যানিয়নশিপ' বা মানসিক বন্ধুত্বের সেবা দেওয়ার আগে অবশ্যই বৈধ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে।
ব্যবহারের সময়সীমা: এআই চ্যাটবট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমা (Time Limit) এবং ব্যক্তিগত সেটিংস চালুর সুবিধা থাকতে হবে।
জরুরি হস্তক্ষেপ: কোনো কথোপকথনে যদি আত্মহত্যা বা আত্মক্ষতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তবে সাথে সাথে এআই-এর পরিবর্তে একজন মানুষকে সেই আলোচনার দায়িত্ব নিতে হবে এবং ব্যবহারকারীর অভিভাবক বা জরুরি সেবাকে দ্রুত অবহিত করতে হবে।
জাতীয় নিরাপত্তা ও নৈতিকতা
সিএসি (CAC) স্পষ্ট জানিয়েছে যে, এআই প্রযুক্তি কোনোভাবেই এমন কোনো বিষয়বস্তু তৈরি করতে পারবে না যা চীনের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে কিংবা জাতীয় সংহতি ও সম্মানহানি করে। তবে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য উপায়ে বয়স্কদের সাহচর্য দেওয়া বা স্থানীয় সংস্কৃতি প্রচারের জন্য এআই-এর ব্যবহারের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে সংস্থাটি।
প্রেক্ষাপট ও বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ
চীনের এই উদ্যোগ এমন এক সময়ে এলো যখন DeepSeek, Z.ai এবং Minimax-এর মতো চীনা এআই স্টার্টআপগুলো বিশ্বজুড়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু এই প্রযুক্তির অন্ধকার দিকটিও এখন স্পষ্ট। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ওপেনএআই (OpenAI)-এর বিরুদ্ধে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরের আত্মহত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) ওই কিশোরকে আত্মহননে প্ররোচনা দিয়েছিল। এমনকি খোদ ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যান স্বীকার করেছেন যে, আত্মক্ষতি সংক্রান্ত আলাপে চ্যাটবটের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ।
আগামীর পথ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে এআই নীতিমালার ক্ষেত্রে একটি বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দ্রুত বর্ধনশীল এই প্রযুক্তির প্রভাবে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য যেন ঝুঁকির মুখে না পড়ে, সেটিই এখন বড় দেশগুলোর প্রধান মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
--মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: