ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ চৈত্র ১৪৩১

বগুড়ার শেরপুরে মাদকসেবীরা ঝুঁকছে এ্যালকোহল ও ঘুমের ট্যাবলেটে

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০১৮ ১৭:১৮

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০১৮ ১৭:১৮

 
আব্দুর রাহিম, শেরপুর (বগুড়া)ঃ
শেরপুরে পুলিশের অব্যাহত অভিযানে মাদকদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি মাদকের দুস্প্রাপ্যতা দেখা দিয়েছে। ফলে মাদকসেবীরা ভিন্ন কৌশলে নেশা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ হোমিও দোকান থেকে এ্যালকোহল কিনে সেবন করছে, কেউবা আবার ওষুধের দোকান থেকে ঘুমের ট্যাবলেট কিনে খাচ্ছে। আর যাদের অবস্থা একেবারেই শোচনীয় তারা গাম (জুতার আঠা পলেথিনের মধ্যে নিয়ে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে) নেশা করছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হোমিও চিকিৎসালয় থেকে এ্যালকোহল কিনে সেবন করছে। এ অবৈধ ব্যবসা করে অনেকেই লাখপতি হলেও প্রশাসনের সেদিকে কোন নজর নেই। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চললেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এতে তরুণ ও যুবসমাজের একটি বড় অংশ বিপথে যাচ্ছে। আর হোমিও চিকিৎসার আড়ালে অনেকেই চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সারা দেশের মত শেরপুরে সা¤প্রতিককালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করে। এই মাদক বিরোধী অব্যাহত অভিযানে উপজেলার প্রতিটি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরী করে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটকের পাশাপাশি মাদক মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। ফলে উপজেলায় মাদকের দুস্প্রাপ্যতা দেখা দেয়ার পাশাপাশি দামও হুহু করে বেড়ে যায়। এয়াড়াও অনেক মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের ভয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। ফলে মাদক সেবনকারীরাও তাদের কৌশল কিছুটা পাল্টিয়ে ফেলেছে। যে সকল মাদকসেবীরা এখনো পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে পেরেছে তারা এ্যালকোহল, ঘুমের ট্যাবলেট ও জুতার আঠা হিসেবে বিকল্প নেশা হিসেবে চালিয়ে নিচ্ছে।
একজন ফেনসিডিল নেশাখোর নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাক্তি জানান, আমি নিয়মিত ফেন্সিডিল খেতাম কিন্ত পুলিশের অব্যাহত অভিযানে এটি এখন আর তেমন একটা পাওয়া যায়না। আর যে দুএকটি পাওয়া যায়, তার দাম অনেক (প্রতি পিস ২ হাজার টাকা) তাই খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। এই কথাটি শুধু ফেনসিডিলের নেশায় আশক্ত ব্যাক্তির নয়, যারা ইয়াবা, গাঁজায় আক্রান্ত তারাও নেশা দ্রব্য না পেয়ে অনেকেই ভিন্ন পথে পা বাড়িয়েছে। আবার অনেকেই নেশাদ্রব্য পরিহারের চেষ্টা করছে। একজন পেশায় শ্রমিক এই প্রতিবেদককে জানান, আমি গাঁজা সেবন ছাড়া একদিনও চলতে পারিনা। কিন্ত এখন কোথাও গাঁজা না বেশ কয়েকদিন হলো শেরপুরের শেষ এলাকা রানীরহাটে গিয়ে তাড়াশ এলাকার লোকজনের নিকট থেকে কিনে আনি। তাও খুব একটা বেশি পাওয়া যায়না।
এ ছাড়াও বাহির এলাকা থেকে শেরপুরে প্রবেশ করে ফেরিকরে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব মাদকবিক্রেতা মোবাইলের মাধ্যমে নির্দিষ্ট জায়গায় মাল পৌছে দিয়ে দ্রæত সরে পরছে।
আরো জানা গেছে, ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা ফেনসিডিল ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য এবং মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা দিন দিন সাধারণ মাদকসেবীদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে দিন দিন এ্যালকাহোলের চাহিদা বাড়ছে। ফলে উপজেলার গ্রামে গঞ্জে ও হাটে বাজারে গজিয়ে ওঠা হোমিও ওষুদের দোকান ও ফার্মেসী থেকে নেশাদ্রব্য বিক্রি বেড়ে গেছে। অনেক দোকানেই সারাদিন কোন রোগীর দেখা না মিললেও সন্ধ্যার দিকে ঊঠতি বয়সের তরুনদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। এসব দোকানে এ্যানটিম টার্ট-৩০ নামে এ্যালকোহল ৭০ থেকে ১০০টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের নামসর্বস্ব হোমিও চিকিৎসালয়কে ঘিরে চলে এলকোহল বিক্রির মহোৎসব। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানাবয়সী মাদকসেবীরা দল বেঁধে প্রকাশ্যে এসব মাদকদ্রব্য কিনে নিয়ে যায়। শেরপুরে বেশ কিছু পাইকারি হোমিও ওষুধ বিক্রেতা গোপনে অবৈধ ভাবে এই এ্্যালকোহল বিক্রি করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করছে।
কাজেম হোমিও ফার্মেসীর মালিক ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক জানান, যদি কেউ হোমিও চিকিৎসার নামে এই সকল অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকে অবশ্যই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা জরুরী।
এ ব্যাপারে শেরপুর থানার ইন্সপেক্টর বুলবুল ইসলাম জানান, মাদককের ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া হবেনা। আর যে সেকল হোমিও চিকিৎসক এই অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত আছে, তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: