ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ব্রেক্সিট শুরু করল যুক্তরাজ্য

Admin 1 | প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০১৭ ১৩:০৩

Admin 1
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০১৭ ১৩:০৩

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্কের হাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র চিঠি তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে।

ইইউ’য়ে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত স্যার টিম ব্যারো বুধবার ব্রাসেলসে টাস্কের হাতে ছয়-পাতার চিঠিটি হস্তান্তর করেছেন। ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করতে এদিনই চিঠিতে সই করেন মে। লিসবন চুক্তির আর্টিকেল ফিফটির আওতায় সই করা এ চিঠি দিয়েই মে ইইউ কে জানিয়ে দিয়েছেন, তার দেশ আর ২৮ সদস্যের এই পরিবারে থাকছে না।

চিঠিটি হাতে পেয়ে বিচ্ছেদ বেদনার সুরে টাস্ক বলেন, “আমরা এখনই আপনাদেরকে মিস করতে শুরু করেছি। আজ খুশীর কোনও দিন নয়। খুশী খুশী ভাব করারও কোনও কারণ নেই। না ব্রাসেলসে, না লন্ডনে। কারণ, সর্বপোরি ব্রিটিশ ভোটারদের প্রায় অর্ধেকসহ বেশির ভাগ ইউরোপীয়ই আলাদা হয়ে যাওয়া নয় বরং একসঙ্গে থাকারই ইচ্ছা পোষণ করে।”

ওদিকে, হাউজ অব কমন্সে এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিদায়ের সময় গণনা শুরুর এ মুহূর্তকে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করেছেন।  তিনি বলেন, “আর পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ব্রিটেন ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।”

ব্রেক্সিট আলোচনার সময় মে যুক্তরাজ্যের প্রতিটি মানুষেরই প্রতিনিধিত্ব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এদের মধ্যে আছে ব্রিটেনে বসবাসরত ইইউ নাগরিকরাও। ব্রেক্সিটের পর যাদের ভাগ্যে কী হবে সেটি এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু দেশের প্রতিটি মানুষের জন্যই সঠিক একটি চুক্তি করতে মে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে বিবিসি।

গতবছর জুনে এক ঐতিহাসিক গণভোটে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেয় ব্রিটিশ নাগরিকরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনের পর যুক্তরাজ্যই প্রথম দেশ, যারা এই জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।

২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর কার্যকর হওয়া লিসবন চুক্তি ইইউর অন্যতম সাংবিধানিক ভিত্তি।  চুক্তির আর্টিকেল-ফিফটিতে জোট ছেড়ে যাওয়ার নিয়ম-কানুন সংক্ষেপে বলা রয়েছে। আর্টিকেল ফিফটি অনুযায়ী, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জোট ছাড়ার ইচ্ছা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার পর বিচ্ছেদের দর কষাকষি শেষ করতে দুই বছর সময় পাওয়া যাবে। ওই সময়ে জোটের বাকি ২৭ দেশ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আলোচনায় বসবে।

ব্রেক্সিট চুক্তি:

বিচ্ছেদের পর সম্পর্ক কীভাবে এগোবে সেই দর কষাকষির আলোচনা করবে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।  ইউরোপীয় কাউন্সিলের বাকি ২৭ দেশের সামনে তুলে ধরা হবে বিচ্ছেদের খসড়া চুক্তি।

ওই চুক্তি কার্যকরের জন্য অন্তত ২০টি দেশের সম্মতি লাগবে, যারা ইইউর ৬৫ শতাংশ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রয়োজনীয় সমর্থন পেলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুসমর্থন প্রয়োজন হবে সেই বিচ্ছেদ চুক্তিতে।

টেরিজা মে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ এবং ইইউ এর সঙ্গে বাণিজ্য অংশীদারিত্ব নিয়ে দুবছর সময়ের মধ্যেই আলোচনা শেষ করতে চান। যদিও ইইউ কর্মকর্তারা বলছেন, সম্পর্কের গভীরতার কারণে এটি করা কঠিন হবে।

ডোনাল্ড টাস্ককে দেওয়া চিঠিতে ইইউ এর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মে। কোনও চুক্তি ছাড়া যুক্তরাজ্য ইইউ ত্যাগ করলে তাদেরকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার শর্ত মেনে বাণিজ্য করতে হবে, বলছেন মে।

বাণিজ্য ও নিরাপত্তা

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মে ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশের সবচেয়ে বড় সম্ভাব্য পথটি খোলা রাখতে চান। তবে ইউরোপের একক বাজারের সদস্য যুক্তরাজ্য থাকবে না বলে সাফ জানিয়েছেন তিনি।

ব্রিটেনের লক্ষ্য থাকবে ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর সঙ্গেও নিজস্ব মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা এবং মহাদেশ থেকে অভিবাসী আগমন সীমিত করা। ‍

ওদিকে, ইইউ’ও তাদের সদস্যদেশগুলোর নাগরিকদের এবং ব্যবসা বাণিজ্যে ব্রেক্সিটের মূল্য যতটা কম দিতে হয় সে চেষ্টা চালাবে। ব্রাসেলস চায় ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি ধারবাহিকভাবে হোক।

দু’বছরের ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া:

ব্রেক্সিট আলোচনার জন্য দুবছর সময়সীমা দেওয়া হলেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ও অনিশ্চয়তা থাকার কারণে এ প্রক্রিয়া সময়ের মধ্যে শেষ নাও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

“সময়সীমাটা খুবই কম,” বলেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

সম্প্রতি কয়েকমাস ধরেই জার্মান কর্মকর্তারা বলে আসছেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের জন্য ব্রেক্সিটের পরপরই কার্যকর করার মতো একটি চুক্তি করার যথেষ্ট সময় আছে বলে তারা মনে করেন না। শুল্ক, বাণিজ্য, ব্যাংক ব্যবস্থাসহ অভিবাসী, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ইইউ নাগরিক এবং ইউরোপে বসবাসরত ব্রিটিশদের অধিকারের বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে।

এর চেয়েও বড় যে অনিশ্চয়তাটি এখন মে’র সামনে আছে তা হচ্ছে ফ্রান্স এবং জার্মানিতে কে নেতৃত্বে আসবে সেটি। কারণ, দুটি দেশেই এখন নির্বাচন আসন্ন।

যুক্তরাজ্যের অখন্ডতা:

যুক্তরাজ্যেই বিরাজ করছে বিভক্তি। যার কারণে যুক্তরাজ্য ভেঙেও পড়তে পারে। ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট দিলেও স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড ভোট দিয়েছিল ইইউ য়ে থাকার পক্ষে।

স্কটিশরা এখন স্বাধীনতার জন্য একটি গণভোট দাবি করছে। কিন্তু মে তা অনুষ্ঠান করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। উত্তর আয়ারল্যান্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী পার্টিগুলো বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটে জর্জরিত এবং সিন ফেইন জাতীয়তাবাদীরা যুক্তরাজ্য ছেড়ে আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য ভোট দাবি করছে।

মে বলেছেন, তিনি জানেন ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া কারও জন্য আনন্দের আর কারো জন্য হতাশার হবে। কিন্তু এখন যখন ইইউ থেকে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েই গেছে এবং সে প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গেছে ফলে সবারই এখন একযোগে একাজটিই করা উচিত বলে মে মন্তব্য করেছেন।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: