ঢাকা | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন

Admin 1 | প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০১৭ ১৮:০৫

Admin 1
প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০১৭ ১৮:০৫

প্রাপ্তবয়স্ক না হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ ছেলে-মেয়ের বিয়ের সুযোগ রেখে তৈরি বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটি সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তা সংশোধন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন উচ্চ আদালতের একজন বিচারক।

হাই কোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ শুক্রবার ঢাকায় এক সেমিনারের অংশ নিয়ে ওই আইনে কম বয়সে বিয়ের অজুহাত হিসেবে ‘প্রেমের সম্পর্ক’ ব্যবহার নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন।

সিরডাপ মিলায়তনে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইনের সঠিক প্রয়োগ’ নিয়ে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, নতুন আইনের ১৯ ধারার বিধানের মাধ্যমে নাবালিকা হলেও কোনো মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ‘ভিকটিম’- ছেলে হোক বা মেয়ে- নাবালক হওয়ায় তার বিয়ের চুক্তিতে সই করার যোগ্যতা নেই।

“আইনের এই একটি ধারাই (১৯ ধারা) আমাদের বার্নিং ইস্যু। এখানে সংবিধানের বেসিক প্রিন্সিপলের সাথে সাংঘর্ষিকতা আছে।”

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে পাস হওয়া বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে ছেলে ও মেয়ের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ২১ ও ১৮ বছর বহাল থাকলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ কম বয়সেও বিয়ের সুযোগ তৈরি হয়।

আইনের বিশেষ বিধানে বলা হয়, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।”

আইনটির ১৯ ধারার সংশ্লিষ্ট বিধিমালার খসড়ায় বিশেষ প্রেক্ষাপটের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,  “(ক) প্রেমের সম্পর্কের কারণে ছেলে-মেয়ে নিজেরা বিবাহ করিয়াছে এবং মেয়েটি গর্ভবতী/সন্তানের মা হইয়াছে; অথবা (খ) অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের নিকটবর্তী আত্মীয় যেমন- পিতা-মাতা, ভাই-বোন, নানা-নানী ইত্যাদি কেহই জীবিত নাই এবং মেয়েটির ভরণ-পোষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দুঃসাধ্য।”

বিচারপতি কৃষ্ণা বলেন, “প্রেমের সম্পর্ক, এটা কি ধরনের কথা? এটা খুব দুঃখজনক, আমাদের ভাষাগত বিষয়গুলো শিখতে হবে। এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি।

“আমার চেয়ারে থেকে বলা উচিত না, কিন্তু আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই প্রথম আমি একটি বিধির মধ্যে এই ধরনের শব্দ দেখতে পেলাম, খুবই দুঃখজনক ঘটনা। যারা এটা করেছেন, আমি তাদেরকে ব্লেইম করি। এই ধরনের শব্দ আসতে পারে না।”

এর জন্য আইনের খসড়া তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়ি করে তাদেরকে ‘ভাষাগত বিষয়গুলো শিখতে’ পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ক আইনগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ এই ধারার অপপ্রয়োগ হবে বলে আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ ফৌজদারি মামলার এই বিচারক।

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, যারা আইন প্রণেতা তারা এর ভাল দিক চিন্তা করেই এটা করেছেন। কিন্তু আমি ভয় পাই। আমি উৎকণ্ঠিত যে, এটার অপপ্রয়োগ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আমি জানি না।”

নতুন এই আইন পাস হওয়ার পর গত ২২ মার্চ দুই পরিবারের সম্মতিতে প্রথম বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের একটি আদালতে। ধর্ষণের মামলার এক আসামির সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্ক ধর্ষিতা মেয়েটির বিয়ে দেওয়া হয়েছে।সে সঙ্গে গ্রেপ্তার ওই আসামিকে জামিন দেয় আদালত।

বিশেষ বিধানে বিয়েকে একটি মেয়ের ‘সর্বোত্তম স্বার্থ’ হিসেবে উল্লেখ করার আপত্তি জানিয়ে কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, “একটি শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ তার বিবাহ সম্পাদন হতে পারে না।

“এখানে অবশ্যই তার সর্বোত্তম স্বার্থ খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা; সবচেয়ে বড় কথা মেয়ে শিশুটির স্বাস্থ্য।”

বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ বিধান সংশোধনের দাবি জানিয়ে উচ্চ আদালতের এই বিচারক বলেন, “আমরা যদি ঠিকভাবে এটা উপস্থাপন করতে পারি তাহলে আইন প্রণেতারা অবশ্যই এটা নেবেন। তারা তো আমাদেরই ভাই অথবা বোন। তারা এই সমাজ থেকেই এসেছেন। আমি মনে করি, এই ধারাটি চ্যালেঞ্জ হওয়ার মতো প্রচুর উপাদান আছে।”

‘আমরাই পারি- পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের’ আয়োজনে  জোটের কো-চেয়ারম্যান শাহীন আনামের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপসকান্তি বল, ঢাকা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকা, সমাজ সেবা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খান আবুল বাসার ও অক্সফামের জেন্ডার ম্যানেজার নাজমুন নাহার।

জোটের সমন্বয়কারী জিনাত আরা হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট ফরিদা ইয়াসমীন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: