ঢাকা | শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

কুখ্যাত চেঙ্গিসখানের শোচনীয় পরাজয় ঘটে

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারী ২০১৯ ১২:১৪

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারী ২০১৯ ১২:১৪

ইসলামী ডেস্ক

প্রায় শতাব্দীকাল পর্যন্ত মধ্য এশিয়াসহ মুসলিম দুনিয়ার সর্বত্র হিংস্র বর্বর চেঙ্গিসখানের বংশধর তাতার-মুঘলদের ধ্বংসলীলা ও অপ্রতিরোধ্য জয়যাত্রা ঠেকানোর কোনো শক্তি ছিল না। হালাকু খানের বর্বরতা ও নৃশংসতা ইসলামের কলঙ্কিত অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। তাতারী সয়লাব প্রতিহত করার কথা চিন্তা করা যেত না। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম শিক্ষা, রক্তপিপাসু শক্তিকে একসময় মিসরের মামলুক বাহিনীর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করতে হয়।

এ মামলুক তথা দাস রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এক মহিয়সী নারী শাজারাতুর দোরা। মিসরেও ‘মামলুক’ বা দাস রাজবংশের ইতিহাস এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মামলুকরা প্রধানত দুইভাগে বিভক্ত ছিল। যথা- বাহরি ও বুরজি। উভয় বংশের ৪৭ জন সুলতানের মধ্যে ২৪ জন বাহরি ও ২৩ জন বুরজি সুলতান রাজত্ব করেন।

আইউবীয় সুলতান আল আস সালেহর বিধবা পত্মী শাজারাতুর ছিলেন মামলুক বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ইতোপূর্বে বাগদাদের খলিফা আল মোস্তাসেমের হেরেমের একজন কৃতদাসী ছিলেন। অতঃপর তিনি সুলতান আস সালেহর অধীনস্থ হন এবং স্বল্পকাল পর সুলতান তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেন।

শাজারাতুর মাত্র ৮০ দিন রাজত্ব করেন। তিনি নিজের নামে মুদ্রা প্রচলন করেন ও জুমার খোতবায় তার নাম পাঠ করেন। অল্প দিনের মধ্যেই সাম্রাজ্যের আমীররা মহিলা শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। অতঃপর তারা রাজ্যের প্রধান সেনানায়ককে (আল মোয়েজ ইজ্জদ্দীন) সুলতানের পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন। অবশেষে অনন্যোপায় হয়ে শাজারাতুর প্রধান সেনানায়ক আইবেকের সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হতে বাধ্য হন।

এভাবেই আইবেক বাহরি মামলুকদিগের প্রথম সুলতান নির্বাচিত হলেন। পরবর্তীকালে আইবেকের সঙ্গে শাজারাতুরের সাথে মতৈক্য হয়। মাত্র সাত বছর রাজত্ব করার পর সুলতানা শাজারাতুর তাকে হত্যা করেন এবং তিনি নিজেও নিহত হন। আইবেকের শোচনীয় মৃত্যুর পর তার ছেলে আলী (আল মুনসুর নূরুদ্দিন) ইবনে আইবেক সিংহাসনে আরোহণ করেন।

আইবেকের রাজত্বকালেই কুতুজ (আল মালিক আল মোজাফফর সাইফুদ্দীন মামলুক রাজবংশের তৃতীয় বা চতুর্থ সুলতান) বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। তিনি আইবেকের ছেলে মনসুরের অভিভাবক নিযুক্ত হন এবং রাজ্যের সমস্ত শক্তি ক্রমে তার হস্তগত হয়। কুতুজ ছিলেন অসামান্য সমরকৌশল ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অধিকারী।

কথিত আছে, ইতোপূর্বে তাতারগণ এক যুদ্ধে কুতুজকে বন্দী করেছিল এবং অবশেষে আইবেক তাকে তাতারদের কাছ থেকে ক্রীতদাসরূপে গ্রহণ করেন। স্বীয় অধ্যাবসায়, সহিষ্ণুতা ও চরিত্র বলে কুতুজ সামান্য অবস্থা থেকে সুলতানের পদে অভিষিক্ত হন। তিনি বাহরি শ্রেণীর সুলতান। তার রাজত্বকাল ১২৫৯ থেকে ১২৬০ সাল পর্যন্ত। সিংহাসন লাভের আগেই তিনি আইউবীয় সুলতানের বিরুদ্ধে কার্কের যুদ্ধক্ষেত্রে যথেষ্ট রণনৈপুণ্য ও পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন।

এটি মনসুরা যুদ্ধ নামে খ্যাত, যা লুই নবমের সঙ্গে হয়েছিল। এরপর কুতুজের নেতৃত্বেই সংঘটিত সেই আইনে জালুত যুদ্ধ- যা ইসলামের ইতিহাসে এক চূড়ান্ত সংগ্রাম বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই যুদ্ধে কুতুজের সুদক্ষ সেনানায়ক বাইবার্স (আল মালিক আজ জাহের) অসামান্য রণনৈপুণ্যের পরিচয় দেন এবং মোঙ্গলদের বিপন্ন করে তোলেন। ফলে মোঙ্গলরা (তাতার) পরাজিত হয়।

আইনে জালুত-নাসেরার নিকটবর্তী ফিলিস্তিনের একটি স্থানের নাম। ওই স্থানে সংঘটিত যুদ্ধ সুলতান কুতুজ ও বাইবার্সকে ইতিহাসে অমর করে রাখে। যদিও বাইবার্সের হাতে সুলতান কুতুজ শোচনীয়ভাবে নিহত হন, তথাপি কুতুজের আমলে আইনে জালুত যুদ্ধে বাইবার্সের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ইতহাসের একটি স্মরণীয় ঘটনা।

এই যুদ্ধের পর মিসর কেবল তাতারদের আক্রমণ থেকেই রক্ষা পায়নি, এমনকি মামলুকদের হাতে তাদের শক্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় এবং মামলুকরা তাদের একটার পর একটা দুর্গ অধিকার করে নেয়। তাই আইনে জালুত যুদ্ধকে ইসলামের ইতিহাসে এক চ‚ড়ান্ত ঘটনা বলে গণ্য করা হয়। তাতাদের বিরুদ্ধে আইনে জালুতে এই তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয় হিজরি ৬৫৮/১২৬০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: