odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Saturday, 25th October 2025, ২৫th October ২০২৫

সিরাজদিখানে সংগ্রামী নারীর নাম ফাতেমা

odhikar patra | প্রকাশিত: ৬ September ২০১৯ ১৯:০৮

odhikar patra
প্রকাশিত: ৬ September ২০১৯ ১৯:০৮


হামিদুল ইসলাম লিংকন, সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ)
সংবাদদাতা:
সিরাজদিখানে সংগ্রামী ও আত্মপ্রত্যয়ী এক নারীর নাম
ফাতেমা। অতিসাধারণ হয়েও তিনি এখন অসাধারণ। যার হাত ধরে
ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এলাকার বিবাহিত ও শিক্ষিত বেকার নারীরাও।
স্বাবলম্বী নিজেও হয়েছেন আয়ের পথ দেখিয়েছেন অন্য নারীদেরও ।
সে এখন অন্য নারীদের আলোর পথ প্রর্দশক।
উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ফাতেমা। অভাবের
সংসারে বেড়ে ওঠা ফাতেমার বিয়ে হয়েছিল কিশোরী বয়সে
উপজেলার কোলা ইউনিয়নের থৈরগাও গ্রামের মো.ইউসুফ আলীর
সাথে। বিয়ের ৩ বছরের মাথায় স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তখন
ফাতেমার চোখে মুখে অন্ধকারের ছাপ। আর দিন দিন স্বামীর
শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। প্রায় ১১ বছর ক্যান্সারের
সাথে যুদ্ধ করে না ফেরার দেশে চলে জান। স্বামীকে ক্যান্সার থেকে
মূক্ত করতে চেষ্টা করে সর্ব শান্ত হয়ে পরে ফাতেমা। এরপর থেকে ঘুরে
দাঁড়ানোর চেষ্টায় ফাতেমা সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। ২০০৬ সাল
থেকে হস্থশিল্প দিয়ে শুরু করেন জীবন যুদ্ধের পথচলা। এরপর আর তাকে
পিছনে তাকাতে হয়নি। ২০১৫ সালে হাঁস-মুরগীর খামার দিয়ে
কয়েক বছরের মাথায় নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন আবার অন্য
নারীদেরও স্বাবলম্বী করে ঘুচিয়েছেন বেকারত্ব।
ধৈর্য এবং সততার সাথে ক্ষুদ্র ব্যবসা করেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়
এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলার থৈরগাও গ্রামের
মো.ইউসুফ আলীর স্ত্রী ফাতেমা। ২ সন্তান নিয়ে ৩ জনের সংসার
ফাতেমার।
আসতে আসতে দরিদ্রকে জয় করে মুখে হাসির ঝিলিক পড়তে
থাকে ফাতেমার। হাঁস-মুরগী, মাছ চাষ, হস্থশিল্প,সবমিলিয়ে
তিনি সফল হওয়ার দিকে এগিয়ে জান। বর্তমানে ফাতেমার খামারে
রয়েছে চিনাহাস বড় ২৪ টি,বাচ্চা ২২ টি,দেশি প্রজাতির হাস
বাচ্চা ২০০,আর মাংসর জন্য বড় হাস ১৮০ টি, ডিমের হাস ৪৫ টি। এছাড়া ৩ টি পুকুরে মধ্যে ২ টিতে রয়েছে কাপ মিক্স,আরেক
টিতে রয়েছে মৌসুমি মাছ।
বর্তমানে তার খামারে হাঁসের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। তিন মাস
বিরতিহীনভাবে প্রতিদিন হাঁসগুলো গড়ে ডিম দেয় ৫০টি।
প্রতিটি ডিম ১২ টাকা হিসাবে বিক্রি করেন ৬০০ টাকা।
এছাড়া তিন থেকে চার মাস পর পর পরিপক্ক হাঁস প্রতিটি বাজারে
বিক্রি হয় ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়। হাঁসের বাচ্চা কিনে এনে
পালন করে প্রতিটি পরিপক্ক হতে খাদ্য ও ওষুধ বাবদ সর্বসাকুল্যে খরচ
হয় প্রায় ১৫০ টাকা। এসব মিলিয়ে ফাতেমার মাসিক আয় ২০
হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। ফাতেমা সন্তানদের নিয়ে এখন
সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করছেন।
ফাতেমার র্কমী নাছিমা বেগম জানান, আগে আমার সংসারে
অনেক অভাব ছিল। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারতাম না। কিন্তু
ফাতেমার এখানে কাজ করার পর থেকে সংসারের অভাব দূর হওয়ার
পাশাপাশি বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাচ্ছি এখন।
ফাতেমার র্কমী রেখা মন্ডল কষ্ট নিয়ে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পরে
দুই সস্তান নিয়ে জীবন চলা অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু
ফাতেমা আপার কাছ থেকে নকশি কাথার কাজ পাওয়ার পর থেকে
সন্তানদের পড়া লেখা করাতে পারি। এখন সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে
বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি আমি।
সংগ্রামী নারী ফাতেমা আমার সংবাদকে বলেন, স্বামী মারা
যাওয়ার পর থেকে আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। কিন্তু আমি
হার মানি নাই। জীবন যুদ্ধে জয় পাওয়ার আশায় অন্যের কাথা শিলাই
করি। কিছু দিন পর আমি এলাকার নারীদের দিয়ে হস্থশিল্প শুরু করি।
এখন আমি আমার জীবন যুদ্ধে সফল হয়েছি। আমি মনে করি
নারীরা আর দুর্বল নয়, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এখন অনেক
এগিয়ে গিয়েছে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ডলিরানী নাগ নয়া দিগন্তকে
বলেন, জীবনের সাথে যুদ্ধ করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন ফাতেমা।
সে বেকারত্ব দূরীকরণে অনেক বড় ভূমিকা রাখছেন আমরা বেকার
নারীদের ট্রেনিং ও আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের দিকে উদ্বুদ্ধ করছি। ফাতেমা আমার দেখা
এক জন সফল উদ্যোক্তা। সে শিক্ষা সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজ
করে যাচ্ছেন। তার মত বেকার নারীরা এগিয়ে আসলে দেশের বেকারত্ব
কমবে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশফিকুন নাহার নয়া দিগন্তকে
বলেন, অবহেলিত নারীদের জন্য ফাতেমা একটি দৃষ্টান্ত। নারীরা আর
পিছিয়ে নেই এটা ফাতেমাকে দেখলেই বোঝা যায়। আমরা
ফাতেমার পাশে আছি সবসময়। ফাতেমার কোন সহযোগিতার
প্রয়োজন হলে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: