odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Thursday, 4th December 2025, ৪th December ২০২৫

মালালাকে নিয়ে যা বললেন তাঁর মা

Admin 1 | প্রকাশিত: ১৯ April ২০১৭ ২৩:৫৮

Admin 1
প্রকাশিত: ১৯ April ২০১৭ ২৩:৫৮

‘সে ভালো করে খাওয়াদাওয়া করে না। যথেষ্ট পানি পান করে না। সে সময়মতো ঘুমাতে যায় না। এখনো রাত জেগে পড়াশোনা করে। আমরা তাকে বলি ফল খেতে আর নামাজ আদায় করতে। সে সেটা তার ভাইদের বলে, কিন্তু নিজে করে না।’

মেয়েকে নিয়ে এমনই আহ্লাদে ভরা নালিশ করছিলেন মা। তবে মেয়েকে নিয়ে তাঁর চোখমুখে গর্বের ভাবটি ছিল স্পষ্ট। আর হবেই না কেন? তিনি তো মালালা ইউসুফজাইয়ের মা। যে মালালার সুখ্যাতি গণমাধ্যমের আড়ালেই ছিলেন এত দিন। তাঁর কাছে মেয়ে সেই ছোট্ট কিশোরীর মতো। সে কথাগুলোই উঠে এল বিবিসির সাক্ষাৎকারে।

পাঁচ বছর ধরে মালালা ইউসুফজাই বিশ্বের খ্যাতনামা তরুণী হয়ে উঠেছেন। স্কুলছাত্রী মালালা পাকিস্তানে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। বার্মিংহামে অপারেশনের পর তিনি নতুন জীবন গড়ে তোলেন। মেয়েদের শিক্ষার জন্য প্রচার চালাতে শুরু করেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতেন এবং তাঁর জীবনের গল্প দিয়ে বিশ্ববাসীকে অনুপ্রাণিত করেন।

তাঁর মা তুর পেকাই ইউসুফজাই প্রথমবারের মতো বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, গত পাঁচ বছরে কীভাবে তাঁর নিজের জীবনেও পরিবর্তন এসেছে। সাক্ষাৎকারটি গতকাল মঙ্গলবার বিবিসি প্রচার করে।

তুর পেকাই বলেন, ‘পেছনের প্রত্যেককে ছেড়ে আসা ছিল খুব কষ্টের। বিদেশে বসবাস করতে হব—এমনটা কখনো ভাবিনি। যখন অন্যরা তাদের দেশ ছেড়ে যায়, তখন তারা তাদের সামনে আসা সবকিছু গ্রহণ করে এবং এ জন্য তাদের প্রস্তুতি থাকে। কিন্তু আমাদের সেই প্রস্তুতিও ছিল না। আমাদের হঠাৎ করেই পাকিস্তান ছেড়ে আসতে হয়েছিল। ওই হামলা সবকিছু পাল্টে দিয়েছিল। মালালার জীবনের দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হয়েছে।’

খুব কম পাঠকই ছবি দেখে তুর পেকাইকে চিনতে পারবেন। নিজের উদ্যোগগুলো তুলে ধরতে মালালা উচ্চপর্যায়ের কোনো অনুষ্ঠানে যতবার যোগ দিয়েছেন, ততবার তাঁর বাবা জিয়াউদ্দিন সঙ্গে থাকেন। মেয়ের বহু সাফল্য নিয়ে প্রায়ই তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

তবে মালালার মা সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। কিন্তু বার্মিংহামের বাড়িতে পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

এ ব্যাপারে তুর পেকাই বলেন, ‘হাসপাতালে যখন মালালার চিকিৎসা চলছিল, তখন আমরা তার দেখাশোনা করছিলাম। এরপর সে একটি বই লিখল এবং আমরা সেটা নিয়েও ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এ কারণে আমি কখনো জনসমক্ষে ছিলাম না। কিন্তু এখন আমি লোকজনকে শিক্ষা পেতে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। তাই এখন থেকে আমি এসব বিষয়ে আরও বেশি যুক্ত হতে চাই। তবে এই সাক্ষাৎকারগুলো যদি আমার মাতৃভাষায় হতো, তাহলে তা আমার জন্য সহজ হতো।’

এটা স্পষ্ট যে মালালাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার ঘটনাটি নিয়ে তুর পেকাইয়ের নিজেরও অনেক কথা বলার আছে। হাসপাতালে মালালাকে মৃত্যুশয্যায় লড়াই করতে দেখার দৃশ্য এখনো তাঁকে বিচলিত করে। তাঁর এক হাত আরেক হাতকে আঁকড়ে ধরে এবং তিনি কাঁদতে শুরু করেন। তবে মেয়ের এখনকার জীবনের কথা ভেবে পরক্ষণেই মুখে হাসি ফিরে আসে তাঁর। মালালার জীবনের প্রতিটি বছর তুর পেকাইয়ের কাছে বোনাস।

তুর পেকাই বলেন, ‘গত বছর আমি মেয়ের জন্মদিনের কার্ডে লিখেছিলাম, তুমি আমার চার বছর বয়সী কন্যা। কারণ, হামলার সময়ের পর থেকে আমি বছর গণনা করি। আমার দৃষ্টিতে এটা মেয়ের পুনর্জন্ম।’

তুর পেকাইয়ের জীবন এখন যুক্তরাজ্যে গাঁথা। মালালা ও দুই ছেলের দেখভাল করেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী এবং বিশ্বনেতাদের সান্নিধ্যে আসা মালালা তাঁর কাছে ঘরের মেয়ে বৈ আর কিছু নন। তাই বাড়িতে মালালাকে তিনি নিজের কক্ষ পরিষ্কার রাখতে ও নিজের যত্ন নেওয়ার কথা বলেন।

তুর পেকাই যখন মেয়ের সঙ্গে তাঁর প্রতিদিনকার সম্পর্কের কথা বর্ণনা করছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল, একজন মা তাঁর কিশোরী মেয়েকে যেভাবে সামলান, এটা তেমনই কিছু।

মা বলে যাচ্ছিলেন, ‘সে ঠিকভাবে খাওয়াদাওয়া করে না। যথেষ্ট পানি পান করে না। সে সময়মতো ঘুমাতে যায় না। এখনো মধ্যরাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে। আমরা তাকে বলি ফল খেতে আর নামাজ আদায় করতে।’

তুর পেকাই যদিও পাকিস্তানে পড়ালেখার সুযোগ পাননি, তবে তিনি এখন বার্মিংহামে ইংরেজি ক্লাস করেন এবং এর মাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন।

বন্ধুদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ সোয়াত থেকে এসেছেন। আমি তাঁদের আগে থেকেই চিনি। সম্প্রতি আমার এক বন্ধু পেশোয়ার থেকে এসেছেন। আমার ইংরেজি ক্লাসে কোনো পাকিস্তানি নেই। ইরাক, ইরান ও আফগানিস্তান থেকে আসা মানুষ রয়েছেন। আমরা পার্টি করি। আমি ভাত, মুরগি ও মাছ রান্না করি। তাঁরা আমার রান্না পছন্দ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতে লোকজন আমার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বললে বুঝতে কষ্ট হতো। এমনকি “ইয়েস”, “নো” বুঝতেও আমার কষ্ট হতো। এখন আমি এগিয়েছি এবং এটা ধরে রাখতে চাই। ইংরেজি ভাষা ভ্রমণের সময় এবং চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় জীবনকে সহজ করে।’

মালালার বয়স এখন ১৯ বছর। রাজনীতি, দর্শন ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়তে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যাচ্ছেন।

মালালার মা বলেন, ‘ওকে নিয়ে আমরা খুব খুশি। যেদিন সে এই প্রস্তাব পেল, আমরা কেঁদে ফেলেছিলাম। কিন্তু তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের সুখী করে তোলে।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: