ঢাকা | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

সর্বকালের সেরা এল ক্লাসিকো

Admin 1 | প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ২৩:৪৪

Admin 1
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ২৩:৪৪

বিতর্ক? তার জোগানের কমতি কখনোই ছিল না। বারুদ? সেও অঢেল। পরতে পরতে রোমাঞ্চের শিহরণ? তার সাক্ষী হয়ে আছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ১১৫ বছরের ইতিহাসে এল ক্লাসিকো স্মরণীয় অনেক ম্যাচই উপহার দিয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস খুঁড়লে অনেক রত্ন মিলবে, এবং কিছু জঞ্জালও। কিন্তু যদি বলা হয় নিজের নামকে শতভাগ সার্থক করে এল ক্লাসিকো ‌‌‘দ্য ক্লাসিক’ হয়ে উঠতে পেরেছে কতবার? ইতিহাসের সেরা ধ্রুপদি লড়াইয়ের মধ্যে থাকবে কোন ম্যাচগুলো? বিতর্ক তো হবেই। 

কালকের ম্যাচটি যে সর্বকালের সেরা এল ক্লাসিকোর একটি, এ নিয়ে দ্বিধা নেই। ইউরোপের ফুটবল ভাষ্যকারেরা কেউ কেউ বলছেন, নিকট অতীতেও কোটি কোটি দর্শকের স্নায়ুর পরীক্ষা নেওয়া এল ক্লাসিকো কম হয়নি। কিন্তু দুই দলই সমানে-সমান খেলে আক্রমণের পর আক্রমণ করেছে; সমান পাল্টা দিয়ে দুই দলের গোলরক্ষক হয়ে উঠেছেন অতিমানবীয় প্রাচীর, গোল, পাল্টা গোল, আর প্রতিটা গোলের লিগের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়ে বদলে যাওয়া—কালকের প্রতিটা মিনিটই যেন হয়ে থাকল ম্যাচের একেকটি হাইলাইটস। এমন এল ক্লাসিকোর দেখা মিলল বহুদিন পর। ইএসপিএনের বিশ্লেষকেরা বলেছেন, অন্তত তাঁদের দেখা সেরা এল ক্লাসিকো ছিল কাল বার্সার ৩-২ গোলের জয়ের ম্যাচটিই।
দুই দল মিলে ৩৮টি শট নিয়েছে, এর ২৩টিই গোলমুখে! কাল ছিল দুই গোলরক্ষকের চরম পরীক্ষার রাত। আর তাতেই তাঁরা যেন হয়ে উঠলেন আরও বেশি উজ্জীবিত। দুই গোলরক্ষক মিলে সেভ করেছেন ১৮টি। কেইলর নাভাস ৬টি, টের স্টেগেন এর দ্বিগুণ—১২টি। তবে বার্সা গোলরক্ষকের কয়েকটি সেভ ছিল সাধারণ বা নিয়মিত সেভ। এর মধ্যে ৬টি সেভ ছিল প্রায় অবিশ্বাস্য। নাভাসের ৫টি সেভও তা-ই। কয়েকটি সেভের দিক দিয়ে নাভাস বেশি নম্বর পাবেন টের স্টেগেনের চেয়ে।
দুই দল মিলে ৩৮টি গোল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। প্রায় প্রতি সোয়া ২ মিনিটে একটি করে গোলের রোমাঞ্চ উপভোগ করেছেন দর্শকেরা। এর মধ্যে গোল-পাল্টা গোল। অপ্রত্যাশিত নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়ে কাসেমিরো এগিয়ে দিলেন তো মেসি চেনা ড্রিবলের জাদুতে বিবশ করে ফেলে ৫ মিনিটের মধ্যে সমতা ফেরালেন। রাকিতিচের গোল আর তিন মিনিটের মধ্যে রামোসের লাল কার্ড ম্যাচ রিয়ালের জন্য শেষ করে দিয়েছে বলে ভাবা হচ্ছিল যখন, বদলি হিসেবে নেমে ৪ মিনিটেই হামেস রদ্রিগেজের সমতা। ২-২ ড্রটাই সবাই মেনে নিতে তৈরি যখন, সেই মুহূর্তে ম্যাচের শেষ শটে মেসির গোল; সেটিও ম্যাচে বার্সার সবচেয়ে গতির পাল্টা আক্রমণ থেকে। ম্যাচে ৫টি গোল। প্রতিটাই লিগের সমীকরণ বদলেছে। একবার রিয়াল লা লিগা শেষ করে দিয়েছে তো আবার আশা জাগিয়ে তুলেছে বার্সা।
এই নাটকের মধ্যে বাড়তি রং যোগ করেছে উত্তেজনা আর বিতর্ক। যার শুরুটা ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে রোনালদোর পেনাল্টি দাবি থেকে। রিয়ালের প্রথম গোল রামোস অফসাইড ছিলেন কি না, প্রথমার্ধেই কাসেমিরোর লাল কার্ড দেখা উচিত ছিল কি না, মেসিকে ইচ্ছা করেই কনুই মেরে রক্তাক্ত করেছেন কি না মার্সেলো...যেন পৃথিবীর সেরা মাস্টার শেফের সেরা রান্নার মাঝখানে বাড়তি ডিশ হিসেবে হাজির হচ্ছিল এই বিতর্কগুলো। রামোস লাল কার্ড দেখার পর ‘চেনা শত্রু’ পিকের সঙ্গে তো একচোট হয়েই গেল। ভুলে যাবেন না, এর সবই কালকের ম্যাচকে আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলেছিল।
খামতি? রোনালদো যদি সমানে-সমান জবাব দিতে পারতেন মেসিকে! খামতি? দুই কোচ হয়তো আরও বেশি ট্যাকটিকালি নিখুঁত হতে পারতেন। দুজনেরই দল নির্বাচন ছিল ভুল। নিজ নিজ দলের হয়ে নেমে সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন আসেনসিও আর আন্দ্রে গোমেজ। অবশ্য এই দুই বদলি নাটকের আরও দুটি অধ্যায় বাড়িয়েছে ভাবলেও চলে।
এর মধ্যে অনেক এল ক্লাসিকোই হয়েছে, যেখানে দুই দলের খেলোয়াড়েরা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন। চোখ–ধাঁধানো ফুটবলের পসরাও কম উপভোগ করেনি সবাই। কিন্তু সব ছাপিয়ে গেল কালকের ম্যাচ। তা খেলার ধরনে, ফলাফলে। যে ম্যাচের ঘোর, যার রেশ কাটেনি হয়তো এখনো। সেই রেশের মধ্যেই সর্বকালের সেরা এল ক্লাসিকো এটাই কি না, সেই বিতর্ক চলুক!



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: