ঢাকা | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মেধাবী প্রতিবন্ধীকে ধানের বস্তা বললেন প্রধান শিক্ষক !

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ৮ জানুয়ারী ২০২০ ১০:৫৪

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ৮ জানুয়ারী ২০২০ ১০:৫৪

 

মেধাবী প্রতিবন্ধীকে ধানের বস্তা বললেন প্রধান শিক্ষক !
লিতুন জিরা।ছবি: ইত্তেফাক
 

যশোরের মণিরামপুরে হাত-পা ছাড়া জন্ম নেওয়া অদম্য মেধাবী লিতুন জিরা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু মা ও শিক্ষক বাবার সামনে প্রতিবন্ধী মেধাবী জিরাকে পঙ্গু বলে এবং একই সাথে ধানের বস্তার সঙ্গে তুলনা করেন মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী। এমন বিদ্রুপ করার প্রতিবাদে ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েও সরকারি সেই স্কুলে ভর্তি হননি বলে অভিযোগ করেছেন মেধাবী মেয়েটি।

সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভর্তি হয়েছেন স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে। বাবার সামনে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের এমন বিদ্রুপ মেনে নিতে না পেরে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হয়েছেন বলে অভিযোগ অদম্য মেধাবী জিরার ।

প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি প্রকাশ না পেলেও একে একে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সোমবার পরিবারটির সাথে কথা বলে ইত্তেফাক। সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হলেও শেষ পর্যন্ত ভর্তি না হবার নেপথ্যের চাঞ্চল্যকর ঘটনা দেরিতে হলেও প্রকাশ পেয়েছে। আর এ ঘটনাটি জানাজানি হলে শিক্ষার্থী-শিক্ষক, অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের প্রভাষক হাবিবুর রহমানের মেয়ে লিতুন জিরা মুখে ভর দিয়ে লিখে এবার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। অদম্য মেধাবী লিতুন জিরার প্রবল ইচ্ছা ছিল মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। সে অনুযায়ী ২৩ ডিসেম্বর মা-বাবার সাথে হুইল চেয়ারে করে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসেন। লিতুনের সিট পড়ে দোতলার একটি কক্ষে।

লিতুনের বাবা হাবিবুর রহমান ও মা জাহানারা বেগম জানান, প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে উপরে উঠতে কষ্ট হবে জানিয়ে নিচের যেকোনো কক্ষে লিতুনের পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে বলে প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীকে অনুরোধ করেন তারা।

মা-বাবার অভিযোগ, এ অনুরোধ করতেই প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক লিতুনের সামনে তার মা-বাবার উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিবন্ধী মেয়েকে কোলে নিয়ে উপরে যান। বস্তাভর্তি ধান যদি নাড়াচাড়া করা যায়, তাহলে তাকে নিয়ে উপরে উঠতে সমস্যা কোথায়? পঙ্গু মেয়ের জন্য পৃথক কক্ষে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। অন্য স্কুলে ভর্তি করার পরামর্শ দেন লিতুনের মা-বাবাকে।

লিতুনের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে লিতুন ও তার বাবা-মা হতবাক হয়ে অঝরে কাঁদতে থাকেন।

লিতুনের বাবা জানান, উপায়ান্ত না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তারা দুজনে কষ্ট করে লিতুনকে দোতলায় পরীক্ষার কক্ষে বসিয়ে দেন। পরীক্ষা অংশ নিয়ে লিতুন মেধার স্বাক্ষরও রাখেন। সে কৃতিত্বের সাথে ভর্তিযুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়। লিতুন জিরা আক্ষেপ নিয়ে জানান, প্রধান শিক্ষক যদি তার সাথে এমন আচরণ করেন, তাহলে সহপাঠীরা তার সাথে কি আচরণ করবে? প্রধান শিক্ষকের এ আচরণের প্রতিবাদে ওই সরকারি স্কুলে ভর্তি না হয়ে উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১ জানুয়ারি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ন।

বাবা হাবিবুর রহমান জানান, প্রধান শিক্ষকের সেদিনের আচরণে লিতুনকে সরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য রাজি করাতে পারেনি তারা। তবে প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, লিতুনের ভর্তি না হবার কারণ তিনি জানেন না।

Ittefaq



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: