ঢাকা | রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
করোনাভাইরাস

বিল গেটসের ৭টি টিকা কারখানার ৬টিই কেন শেষ পর্যন্ত কাজে লাগবে না

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২০ ০৪:০৪

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২০ ০৪:০৪

 

করোনাভাইরাসের টিকার জন্য বিপুল অর্থ ঢালছেন বিল গেটসকরোনাভাইরাসের টিকার জন্য বিপুল অর্থ ঢালছেন বিল গেটস

করোনাভাইরাসের একটি টিকা আবিস্কারের জন্য বিশ্বের সেরা সব বিজ্ঞানীরা এখন নানা দেশের গবেষণাগারে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেই চেষ্টায় সফল হতে তাদের সময় লাগবে অনেক, বলা হচ্ছে অন্তত এক বছর হতে ১৮ মাস।

কিন্তু এই টিকা আবিস্কারের আগেই বিপুল সংখ্যায় টিকা তৈরির জন্য সাতটি পৃথক কারখানা স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। যেখানে টিকা আবিস্কার হতেই অনেক দেরি, সেখানে এখনই কেন তিনি সাতটি কারখানা স্থাপন করতে চাইছেন?

যুক্তরাষ্ট্রের একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘দ্য ডেইলি শো‌’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

বিল গেটস তার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যে সাতটি কারখানা তৈরি করবেন, তার মধ্যে আসলে শেষ পর্যন্ত কাজে লাগবে একটি বা দুটি মাত্র কারখানা। বাকীগুলো এক অর্থে অপচয়। কিন্ত করোনাভাইরাস থেকে যে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ এবং অর্থনীতির যে বিপুল ক্ষতি এর ফলে এড়ানো যাবে, সে তুলনায় এটি কিছুই নয় বলে মনে করেন তিনি।

বিল গেটস হচ্ছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবেরদের একজন। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি বহু বছর ধরে ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী লোক। মাইক্রোসফট থেকে অবসরে যাওয়ার পর তিনি মনোযোগ দেন জনহিতৈষী কাজে। গড়ে তোলেন তার নিজের এবং স্ত্রীর নামে ‘বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে কম খরচে লক্ষ লক্ষ মানুষকে নানা ধরণের রোগ প্রতিষেধক টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠান এখন বিরাট ভূমিকা রাখছে।

সাতটি কারখানা কেন করতে হচ্ছে

করোনাভাইরাসের টিকা আবিস্কারের মরিয়া চেষ্টা চলছেকরোনাভাইরাসের টিকা আবিস্কারের মরিয়া চেষ্টা চলছে

করোনাভাইরাসের জন্য এখন অন্তত ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে। এগুলোর মধ্যে শেষ পর্যন্ত কোন টিকাটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর এবং সফল বলে প্রমাণিত হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। একটি টিকা তৈরির পর দীর্ঘ সময় ধরে এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হয়। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কীনা, এটি কতটা নিরাপদ- তা জানতে হাজার হাজার মানুষের ওপর এটির পরীক্ষা চলে।

তবে যেসব টিকা নিয়ে এখন কাজ চলছে, তার মধ্যে ৭টি টিকাকে খুবই সম্ভাবনাময় বলে মনে করা হচ্ছে। বিল গেটস মনে করছেন এই সাতটির যে কোন একটি বা দুটি টিকা হয়তো শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী বলে প্রমাণিত হবে।

‘দ্য ডেইলি শো’র ট্রেভর নোয়া’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, তাদের ফাউন্ডেশন চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত একটি বা দুটি টিকা বেছে নেবে এবং সেগুলো বিপুল সংখ্যায় তৈরি করতে শুরু করবে।

টিকা আবিস্কারের আগেই কেন কারখানা তৈরি করে প্রস্তুত রাখছেন সেটা ব্যখ্যা করে তিনি বলেন, এতে করে সময় বাঁচবে, অনেক মানুষের জীবন বাঁচবে এবং বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে।

‍“সংক্রামক রোগের ব্যাপারে আমাদের ফাউন্ডেশনের যেহেতু খুবই গভীর অভিজ্ঞতা আছে আমরা তাই এই মহামারি নিয়ে অনেক ভেবেছি। আমরা ‌একটা টিকা তৈরির প্রচেষ্টায় অর্থ সাহায্য দিয়েছি। আমাদের এই দ্রুত আর্থিক সাহায্য এই প্রচেষ্টাকে অনেক ত্বরান্বিত করতে পারে।”

বিল গেটস: 'করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অপচয় করার মতো সময় নেই‌'বিল গেটস: 'করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অপচয় করার মতো সময় নেই‌'

“যদিও আমরা সাতটি টিকার মধ্যে বড়জোর একটি বা দুটি টিকা বেছে নেব, আমরা সাতটির জন্যই কারখানা বানাতে টাকা দেব। যাতে করে আমাদের একটির পর একটি টিকা পরীক্ষা করে সময়ের অপচয় করে বলতে না হয়, কোন টিকাটি কাজ করছে, তারপর আবার সেই টিকার কারখানা বানাতে গিয়ে আরো সময় নষ্ট না হয়।”

বিল গেটস বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে টিকা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা যখন চলবে তার পাশাপাশি টিকা তৈরির কারখানার কাজ যেন পাশাপাশি চলে।

যে টিকাগুলো পরীক্ষায় সফল বলে প্রমানিত হবে না, সেগুলোর কারখানা আগে থেকে তৈরি করতে গিয়ে যে শত কোটি ডলারের অপচয় হবে সেটা স্বীকার করেন তিনি। কিন্তু তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের এখন যা পরিস্থিতি, যে হাজার হাজার কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি তার তুলনায় এই অপচয় কিছু নয়।

তিনি বলেন, টিকা আবিস্কার হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কারখানায় টিকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যেতে পারবে, এতে করে বহু মাস সময় বাঁচবে। কারণ প্রতিটি মাস এখন গুরুত্বপূর্ণ।

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় বিল গেটস এবং তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস এরই মধ্যে দশ কোটি ডলার দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বিল গেটসের সম্পদের হিসেব

বিল গেটস এখন ৮৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় নয় হাজার কোটি ডলার সম্পদের মালিক।

তিনি যদি প্রতিদিন এক মিলিয়ন ডলার করে খরচ করেন, এই বিপুল সম্পদ খরচ করতে তার সময় লাগবে ২৪৫ বছর।

১৯৭৫ সালে বিল গেটস তার বন্ধুর সঙ্গে মিলে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। ১২ বছর পর তিনি বিশ্বের কনিষ্ঠতম শত-কোটিপতি হন।

মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ-নাইনটি-ফাইভ বাজারে ছাড়ার পর বিল গেটস বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন।

মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তিনি তার ফাউন্ডেশনের কাজে মনোযোগ দিয়েছেন। বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত জনসেবামূলক কাজে দান করেছে ৪১ বিলিয়ন ডলার।

বিবিসি 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: