ঢাকা | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
নিউ নেশন পত্রিকায় ১০জন সাংবাদিকের বেতন-ভাতা বন্ধের প্রতিবাদ

ব্যরিস্টার মইনুল হোসেনের ছলতাচুরী বন্ধ করতে হবে: ডিইউজে সভাপতি

gazi anwar | প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২০ ২২:৩৩

gazi anwar
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২০ ২২:৩৩

নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা মহামারীর সুযোগ নিয়ে অল্প কয়েকজন সাংবাদিক দিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করা, ১০জন সাংবাদিকের বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা এবং ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের মিথা তথ্য সরবরাহ করে সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা নিতে নিউ নেশন পত্রিকার প্রকাশক ব্যরিস্টার মইনুল হোসেনকে ছলচাতুরি বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন  ডিইউজের (ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ।

ন্যায্য পাওনা পরিশোধ, রেটকার্ড বাতিল, প্রচার সংখ্যা নিয়ে জোচ্চরি বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল (মঙ্গলবার) চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) ঘেরাও করেন সাংবাদিক নেতা ও বিভিন্ন পত্রিকার চাকরিচ্যুত-বঞ্চিত সাংবাদিক-কর্মচারীরা। টানা তিনঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজে ঘেরাও কর্মসূচি শেষে ডিএফপি মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন তারা। এতে  ডিইউজের সভাপতি এ কথা বলেন।

সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ঘেরাও ও স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিইউজের (ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের খবর-এর সিনিয়র রিপোর্টার ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল বারী, নিউ নেশনের ইউনিট চিফ হেমায়েত হোসেন প্রমুখ। কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশের খবর-এর সিনিয়র সাব-এডিটর ও ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।

কর্মসূচি থেকে উত্থাপিত উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো ছিল ঈদুল আজহার আগে সংবাদপত্রের নীতিমালা অনুযায়ী চাকরিচ্যুত সাংবাদিক-কর্মচারীদের সমস্ত পাওনাসহ অন্যান্য কর্মীর সমস্ত বকেয়া পরিশোধ, পত্রিকাটির রেটকার্ড বাতিল, দৈনিক বাংলাদেশের খবর-এর মালিকের প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশন-এর সাংবাদিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, সমস্ত পত্রিকার সার্কুলেশন সংখ্যা নিয়ে জোচ্চরি বন্ধ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, সমস্ত পত্রিকার সার্কুলেশন সংখ্যা নিয়ে জোচ্চরি বন্ধ করতে হবে। এ দেশে সবচেয়ে সার্কুলেটেড কাগজ হিসেবে যেগুলোকে দাবি করা আসলে সেটা তাদের প্রকৃত সার্কুলেশন সংখ্যা নয়। তাই প্রকৃত সার্কুলেশন সংখ্যা খতিয়ে দেখতে হবে ডিএফপিকে।

এ জন্য ডিএফপি ডিজির প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডিইউজে সভাপতি বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের মাধ্যমে পুনরায় নিরীক্ষা কাজ সম্পন্ন করুন। ভুয়া নিরীক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রের টাকা লুট করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ডিইউজের এই শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে নিরীক্ষা কাজ সম্পন্ন না করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী ও এবং দুর্নীতি কমিশনে এসব দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হবে।

কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, আজ পেশ করা স্মারকলিপি যেসব দাবি জানানো হয়েছে, আশা করি ডিএফপি ডিজি সেগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করে তা পূরণে শিগগিরই পদক্ষেপ নেবেন। এছাড়া ঈদুল আজহার আগেই সব পত্রিকাকে নোটিশ পাঠিয়ে এবং তদারকি করে সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যবস্থা নেওয়ার ডিএফপি ডিজিকে অনুরোধ জানান কুদ্দুস আফ্রাদ। অবৈধ পন্থায় সুবিধা নিতে তদবির করার জন্য যারা ডিএফপিতে আসেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও বলেন এই সাংবাদিক নেতা।

স্মারকলিপিতে উল্লেখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ডিইউজে সভাপতি বলেন, অন্যথায় আরো কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূছি দেওয়া হবে।

এদিকে, বাংলাদেশের খবরের চাকরিচ্যুত সাংবাদিক-কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে পত্রিকাটির সম্পাদক ও উপদেষ্টা সম্পাদককে দ্রুত আলোচনায় বসতে বলেন ডিইউজে সভাপতি।

 

এছাড়া গত ১৬ জুলাই রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশের খবরের চাকরিচ্যুত সাংবাদিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ ব্যানারে আয়োজিত মাগুরা গ্রুপের অফিস ঘেরাও কর্মসূচি এবং ১৯ জুলাই ডিইউজে কারওয়ান বাজারে আয়োজিত এক বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ডিএফপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ সময় বিএফইউজে ও ডিইউজেসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

গত ৯ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশের খবরের কার্যালয়ের সামনে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানবববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে তাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায় মাগুরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের খবরের সম্পাদকম-লীর সদস্য মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীনের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীরা। হামলার এক পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচির সঞ্চালকসহ কয়েকজন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে সন্ত্রাসীরা। তারা সাংবাদিকদের কর্মসূচির ব্যানারও ছিনিয়ে নেয়।

প্রসঙ্গত, সাংবাদিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন বকেয়া রেখে করোনার অজুহাত দেখিয়ে গত ৭ এপ্রিল সংবাদপত্র আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে ৪ চার মাসের অবৈতনিক ছুটি ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। একই সঙ্গে ঘোষণায় বলা হয়, এই ছুটির সময় পত্রিকার প্রকাশনার কাজ বন্ধ থাকবে। অথচ এর অল্প কিছুদিন পরই রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ প্রকাশনা চালু করা হয় যা এখনো অব্যাহত আছে। বেতন-বোনাস বকেয়া রেখে এই অবৈধ ছুটির মধ্যেই গত ৩১ মে থেকে সাংবাদিক-কর্মচারীদের ছাঁটাই করতে শুরু করে মালিকপক্ষ এবং ছাঁটাইকৃতদের ন্যায্য পাওনাও দিচ্ছে না। অথচ তারা বাংলাদেশের খবরকে প্রথম শ্রেণির পত্রিকা দেখিয়ে অষ্টম ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বিজ্ঞাপন, রেটকার্ড, ব্যাংক ঋণসহ সরকারের কাছ থেকে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা আদায় করছে। এক অর্থে সংবাদপত্র নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে মালিকপক্ষ।

 

একনজরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীনের প্রতারণা

১. বাংলাদেশের খবর-এর নামে একটি সরকারি ব্যাংক থেকে এ বছরের শুরুর দিকে ২৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে পত্রিকাটির সার্বিক উন্নয়নের জন্য। অথচ পত্রিকার কোনো উন্নতি হয়নি এবং সাংবাদিক-কর্মচারীরাও এর কোনো সুবিধা পাননি।

২. সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও ঈদ বোনাস দেওয়ার জন্য সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনাও পেয়েছেন প্রায় ৪ কোটি টাকা অথচ কর্মীদের ঈদ বোনাস তো দূরের কথা ঈদে এক টাকা বকেয়া বেতন দেয়নি প্রতিষ্ঠাননি।

৩. ব্যাংক ঋণ করার সময় বাংলাদেশের খবর-এ কর্মরত সাংবাদিক-কর্মচারী সংখ্যা দেখানো হয় ২৬৫ জন। অথচ এখন কর্মী ৩৬ জন (গত ১৬ মে অফিসের গেটে ঝুলিয়ে দেওয়া নোটিশে কর্মী দেখানো ৫৭ জন। সেখান থেকে ইতোমধ্যে ২১ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে)। সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, ওই ৩৬ থেকেও ২০-২৫ জনকে ছাঁটাই করে সে তথ্য গোপন রাখা হয়েছে।

৪. পত্রিকা ছাপা হয় মাত্র ১০০/১৫০ কপি। আর ডিএফপিতে তালিকায় ১ লাখ ৬১ হাজার কপি।

৫. প্রায় ৮০% সাংবাদিককে ওয়েজ বোর্ড দেওয়া হয়নি। অথচ পত্রিকাটি সমস্ত সরকারি সুবিধা নিচ্ছে অষ্টম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী।

৬. গত তিন বছরে সাংবাদিক-কর্মচারীদের এক টাকাও বেতন বাড়ানো হয়নি এবং ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়নি।

৭. করোনার অজুহাতে গত ৭ এপ্রিল পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। অথচ রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে ‘আন্ডার গ্রাউন্ড’ পত্রিকা হিসেবে নিয়মিত পত্রিকা বের করা হচ্ছে। ছাপা হচ্ছে মাত্র ৭০০ কপি।

৮. এর মাসখানেক পর গত ১৬ মে অন্যায়ভাবে চার মাসের (এপ্রিল-জুলাই) ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

৯. কোনো আগাম নোটিশ না দিয়ে ছুটির মধ্যেই গত ৩১ মে ২১ জন কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

১০. চাকরিচ্যুত করা হলেও সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করছে না। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: