ঢাকা | বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ পরশ : নতুন প্রজন্মের প্রশ্ন তোলা উচিত '৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগী ও মাস্টারমাইন্ড কারা?

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২০ ০২:০৮

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২০ ০২:০৮

 

# ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ভোরে আপনি কি দেখেছিলেন? ওই সময়ের কথা কতটুকু মনে পড়ে আপনার?

শেখ পরশ: আমার বয়স তখন পাঁচ বছর। খুব বেশি স্মৃতি আমার নেই। তাছাড়া ১৫ আগস্ট নিয়ে বলাটাও খুবই কঠিন। আমি কোনো সময় এ ব্যাপারে তেমন কিছু বলিওনি। কারণ, এটা আমার খুবই ব্যক্তিগত অনুভূতির জায়গা। যতদূর মনে পড়ে, বাইরে তখনো অন্ধকার, অনেক ভোর, সূর্য ওঠেনি। আমাদের ঘুম ভাঙে প্রচণ্ড ভাংচুরের শব্দে। জানালা দিয়ে ঝড়-বৃষ্টির মতো বন্দুকের গুলি ঢুকছিল রুমে। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি বিছানা খালি। শুধু আমরা দু’ভাই। পাশে আর কেউ ছিল না। আমার বয়স তখন পাঁচ, আমার ভাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বয়স তখন চার বছর। গোলাগুলি-ভাংচুরের আওয়াজে আমরা ভয়ে কান্না শুরু করি। রুম থেকে বেরিয়ে দুই ভাই সিড়ির ঘরে গিয়ে দেখি বাবা-মার রক্তাক্ত শরীর মাটিতে পড়ে আছে। চারিদিকে অনেক হৈ চৈ, আওয়াজ...! আমার দাদী পাগলের মতো আচরণ করছেন, প্রলাপ বকছেন, দেয়ালে মাথা ঠুকছেন।
দাদীর এমন প্রলাপের মাঝে দেখি মার পা দু'টো বাবার বুকের ওপরে। মা বেশি রক্তাক্ত ছিল। বাবার শরীরে অত বেশি ক্ষতচিহ্ন নেই, শুধু গলায় কণ্ঠমণির কাছে একটুখানি জায়গায় চামড়া ছেলা। কিন্তু বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে না কোনো কষ্ট বা কোনো কিছু। মনে হচ্ছিল তিনি শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন। বিভোর ঘুম।
দেখলাম আমার বড় চাচা শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও বড় চাচী আমার মায়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছেন। মা পানি চাইছিল, বাঁচার চেষ্টা করছিল, আমাদের কথা বলছিল। মা বলেছিলেন, “আমার পরশ-তাপসের কি হবে? ফাতু, তুমি আমার পরশ-তাপসকে দেখো”। ফাতু হচ্ছে আমার বড় চাচীর নাম। আর সেলিম চাচাকে বলছিল যে, আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও। এই রকমই তছনছ অবস্থা চারিদিকে। হট্টগোল, প্রচণ্ড কান্নাকাটির আওয়াজ। সবাই একেবারে হতভম্ব শুধু না, বিপর্যস্ত।
এই অবস্থায় গোলাগুলি আরও বাড়তে থাকে। চাচী আমাদের দু’ভাইকে নিয়ে ড্রেসিং রুমের মাটিতে শুইয়ে রাখে। মাটিতে শুইয়ে রাখার কারণও বুঝি নাই তখনো, পরে আমরা বড় হওয়ার পর বুঝলাম মাটিতে শুইয়ে রাখলে গায়ে গুলি লাগে না, ওপর দিয়ে চলে যায়।
আমাদের বাসাটা ছিল ধানমন্ডি ১৩ নম্বর লেকের পাড়ে। যেখানে এখন মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ওই বাসা থেকে তারপর আমরা পালাই। আমরা দু’ভাই, চাচী, দাদী, আমার ছোট ফুপু, আমরা ওইভাবেই বাসা থেকে বের হয়ে যাই। আমাদের গলির শেষের দিকে একটা বাসা ছিল, সম্ভবত কোনো রাষ্ট্রদূতের বাসা অথবা অফিস ছিল ওটা। ওখানেই আমরা আশ্রয় নিই, কয়েক ঘণ্টা ছিলাম। ওখান থেকেই দেখতে পাই, আমাদের বাসার ভেতরে আর্মি ঢুকছে। লুটতরাজ করছে, ভাংচুর করছে, বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। পরে শুনি, ওই ভোরে বাবাকে মারুফ কাকা (শেখ ফজলুর রহমান মারুফ) আর মাকে সেলিম কাকা আরেকটা গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ওটাই ছিল বাবা-মার সাথে শেষ দেখা।
##: তখন সময়টা আনুমানিক কয়টা বাজে?
শেখ পরশ: আমাদের বাসায় হামলা হয় আনুমানিক সাড়ে চারটা, পাঁচটার দিকে। আমরা বাসা ছেড়ে পাশের বাসায় আশ্রয় নিই সাড়ে পাঁচটার দিকে। সে কারণে সূর্য তখনো ওঠে নাই মনে হয়।
##: ওই ভোরে স্মৃতি নিশ্চয়ই এখনো আপনাদের তাড়া করে?

শেখ পরশ: আমাদের বয়সী বাচ্চাদের তখন বাবা-মার হাত ধরে, কোলে চড়ে স্কুলে যাওয়া কথা। ওই জিনিসগুলো তো আমাদের হয়নি। যদিও চাচা-চাচী, আত্মীয়-স্বজনদের অনেক ভালবাসা পেয়েছি কিন্তু ওই পার্টিকুলার জিনিসটা পাইনি। ছোটবেলার একটা স্মৃতি বলি। আমি তখন উদয়ন বিদ্যালয়ে পড়ি। আমাদেরকে বলা হয়েছিল একটা রচনা লিখতে মাকে নিয়ে। আমার পেন্সিল থেমে গিয়েছিল। আমি মা নিয়ে কি লিখবো? মা নিয়ে লেখা মানেই তো একটা কষ্টের অভিজ্ঞতা। ছোটবেলায় আমি মায়ের ন্যাওটা ছিলাম, পিছুই ছাড়তাম না। তাই মাকে নিয়ে রচনা আমি লিখতে পারি নাই। উদয়ন স্কুলের প্রিন্সিপাল মিসেস মমতাজ হোসেনের ক্লাস ছিল।
১৫ আগস্টের হত্যকাণ্ডের পর বলতে গেলে আমাদের স্বাভাবিকতাটা আর ছিল না। আমরা আসলে ওই সময় বুঝে উঠতে পারতাম না, কার জন্য শোক করবো। তিনটা বাসায় একসাথে হত্যাযজ্ঞ চলেছে। আমার নানার বাসায় আরিফ সেরনিয়াবাত নামে এক মামা মারা যান, তার বয়স ছিল ১০ বছর। শেখ রাসেল কাকার বন্ধু ছিলেন। বেবি খালা মারা যান, তারও বয়স ১৪-১৫ হবে। কার জন্য কাঁদবো এটা একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন। এতগুলো কাছের মানুষ যখন এক নিমিষে শেষ হয়ে যায়, সেটা তো একটা বিশাল ক্ষত।
এই হত্যাকাণ্ডের দ্বারা আমি আক্রান্ত ছিলাম অনেক দিন ধরে। আপানারা জানেন, আমি অনেকদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলাম। আমার মধ্যে রাজনীতি নিয়ে এক ধরনের অনীহা কাজ করতো। আমি মনে করতাম, যে দেশে বঙ্গবন্ধু দাদার মতো একজন রাজনীতিবিদ, যিনি সারাজীবন শুধু ত্যাগই করে গেছেন এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। উনি যখন পারেন নাই, আমি এদেশে কী রাজনীতি করব? কী দেব মানুষকে? আর কী-ই বা দেওয়ার আছে? আমার নানাও অনেক সৎ রাজনীতিবিদ ছিলেন বরিশালের আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সাহেব। উনি তিনটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন, কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। আমার বাবাকে তো সবাই জানেন। এই তিনজনের মতো ব্যক্তিত্ব যখন রাজনীতি করে এদেশকে স্বাধীন করে যাওয়ার পরও এই নির্মম পরিণতি ভোগ করেছেন! পরিবারের সদস্যসহ, নারী-শিশু, বাচ্চাসহ সকলকে উৎখাত করে দেওয়া হয়েছে এই পৃথিবীর বুক থেকে তখন রাজনীতির ব্যাপারে একট অনীহা চলে আসে আমার। এই অনুভূতির কারণে আমি রাজনীতি থেকে অনেক দূরে ছিলাম।
কিন্তু পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেম, ডিটারমিনেশন দেখে আমি অবাক হতাম। উনি কিভাবে দেশকে এত ভালোবাসেন। উনিও তো সব হারিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় সন্তান তিনি। উনি তো সব দেখছেন। বঙ্গবন্ধু দাদার সকল কষ্টের ভাগীদার উনি। বাবাকে তো উনিও পাননি, তার স্কুলে যাবার সময় তার বাবাও তো জেলে ছিল। ওটা দেখে আমি বোঝার চেষ্টা করতাম, উনি কিভাবে পারেন! পরে আমি যেটা বুঝলাম, দেশকে ভালবাসলে ব্যক্তিগত অনুভূতির ঊর্ধ্বে উঠে অনেক কিছু করা যায়। যে দেশকে আমার দাদা, নানা, বাবা এতটা ভালবেসেছেন তাদের সেই ভালবাসার অমর্যাদা আমি করতে পারি না। শুধু তাই নয়, সর্বশেষ দশ বছরে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রাম দেখে আমার মধ্যে একটা অনুভূতি জেগে ওঠে। বুঝতে পারি, ব্যক্তিগত আঘাত, ব্যক্তিগত ক্ষত এগুলোর ঊর্ধ্বে ওঠা সম্ভব। মূলত এ কারণেই পরবর্তীতে আমার মানসিক অবস্থান বদলে আমি রাজনীতিতে আসি।
##: '৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
শেখ পরশ: '৭৫ এর পর এদেশের মানুষ এক ধরনের কিংকর্তব্যবিমূঢ়, হতভম্ব অবস্থার মধ্যে পড়েছিল, জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে আসার পর অধিকাংশ মানুষ আবার সুসংগঠিত হওয়ার একটা সুযোগ পায়। শেখ হাসিনা কিন্তু একটা বধ্যভূমিতে ফিরে এসেছিলেন। তার ফিরে আসাটা অনেক কঠিন ছিল। দেশে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লড়াইতেই উনি নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন এটাই ছিল উনার লক্ষ্য। বাংলাদেশ যদি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে তাহলে বঙ্গবন্ধুর ২৫ বছরের সংগ্রাম ভুলুণ্ঠিত হয়ে যায়। কারণ বাংলাদেশ সফল না হয়ে যদি পাকিস্তান বা অন্যদেশের মতো রাষ্ট্রে পরিণত হয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধটাই অর্থহীন হয়ে যায়। এই জিনিসগুলো ঠিক করার জন্যই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ৪০ বছরের সংগ্রাম। সারাবিশ্ব কোনোদিন যেন বলতে না পারে, বাংলাদেশ একট ব্যর্থ রাষ্ট্র, এটা বাস্তবায়নই উনার স্বপ্ন।
'৭৫ এর পর যারাই আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করেছে তাদেরকে নির্যাতন, জেল, জুলুম করা হয়েছে, মেরে ফেলা হয়েছে শত শত মানুষকে। আমি মনে করি, নতুন প্রজন্মের একটা প্রশ্ন তোলা উচিত; কারা '৭৫ এর সুবিধাভোগী? এই হত্যাকাণ্ডে উপকৃত হয়েছে কারা? হুট করে একজন চাকরিজীবী দেশ শাসন করার লোভ-লালসা কিভাবে পেয়েছে? রাতের অন্ধকারে কিভাবে একজন চাকরিজীবি ক্ষমতা দখল করে, ক্যু করে নেতা হয়ে গেল?
এমন রাজনীতিবিদ হলো যে, নিজেকে বঙ্গবন্ধুর সমতুল্য বানানোর একটা প্রচেষ্টা শুরু হলো। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক তুলে বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলো কারা? এই প্রশ্নটাই আসা দরকার। শুধু ক্ষমতা দখল না খুনীদেরকে পুর্নবাসন করে পদ-পদবি দিলো। সবচেয়ে ভয়ংকর যে কাজটি তারা করেছে, আমাদের ইতিহাসের বিকৃতি। মিথ্যার ওপর একটা দেশ কিভাবে পরিচালিত হতে পারে এর উদাহরণ আমরা দেখেছি '৭৫ পরবর্তী সময়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার নতুন প্রজন্মকে দেশের আসল ইতিহাস ফিরিয়ে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে লেখা পাকিস্তান প্রশাসনের “সিক্রেট ডকুমেন্টস” উনি ছাপিয়ে দিয়েছেন যাতে মানুষ বুঝতে পারে, এই দেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু কবে থেকে সংগ্রাম করছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষা আন্দোলনের কথা তো কেউ বলতেনই না। আওয়ামী ঘরানার লেখকরাও ষাটের দশকের ছয়দফা থেকে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধু যে পঞ্চাশের দশক থেকে সংগ্রাম করেছেন, এটা মিথ্যাচারে চাপা দেওয়া হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড কারা? শুধু কি খন্দকার মোশতাক? মোশতাকের সাথে কারা ছিল এই প্রশ্নগুলোও আসা উচিত বলে আমি মনে করি।
##: ৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডের বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
শেখ পরশ: ৩৫ বছর সময় লেগেছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে। এটা অনেক কঠিন কাজ ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস জানার অধিকার রয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের। আমি বলব এটা শুধু সরকারের কাজ না, এটা একটা সচেতনতা সৃষ্টির কাজ। আমাদের বিরোধী পক্ষের বন্ধুরা কেবল মোশতাকের নাম বলেই বিষয়টাকে সাধারণীকরণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু এটাও তো সত্যি সবখানেই মোশতাকের মতো মানুষ থাকে। এটা নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই। ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই ছিল না, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা ছিল, সশস্ত্র বাহিনীর মানুষ ছিল, বিদেশি শক্তিও ছিল। এরকম অনেক কিছুই থাকতে পারে। পুরো বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করা দরকার।
##: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পবিবেশকে আপনি কিভাবে দেখেন?
শেখ পরশ: বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বিভিন্ন সময় মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট তার ওপর গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে? আমি যেটা শুরুতেই বলেছি, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। সকল হত্যাচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে আমাদেরকে মধ্যম আয়ের দেশ দিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, জ্বালানির সক্ষমতা দিয়েছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের রাস্তা নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, ২৫ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্রসীমা থেকে উত্তরণ করিয়েছেন। ব্যাবসা-বাণিজ্য, সামাজিক নিরাপত্তাসহ সকল সেক্টরে বঙ্গবন্ধুকন্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমার ছোটবেলায় বেগম রোকেয়া পড়েছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা বলতে গেলে সারাবিশ্বের বেগম রোকেয়া।  
##: আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন, আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে সামনের দিনে দেশের যুব সম্প্রদায়ের জন্য কি চ্যালেঞ্জ আছে বলে আপনি মনে করেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে যুবকদের কোন শিক্ষাটা নেওয়া উচিত?

শেখ পরশ: সামনের দিনে বৈশ্বিক একটা ধাক্কা আসতে পারে। সে বিষয়ে আমাদের তৈরি থাকতে হবে। শুধু চাকরির প্রতি নির্ভরশীল হলে চলবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও এটা বলেছেন। নিজস্ব দক্ষতা বাড়াতে হবে তরুণ-যুবকদের। উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কিভাবে নিজের সাথে দেশের উন্নতি করা যায় সেটা ভাবতে হবে। অনেক মানুষ রেমিটেন্স পাঠিয়েছে আবার অনেক মানুষ বিদেশে চাকরি হারাতে পারে। চাকরি চলে গেলেই যে আর কোনো উপায় নাই এটা ভাবলে হবে না। নিজস্ব মেধা-দক্ষতা কাজে লাগানো শিখতে হবে। যুবলীগ এক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে সহায়তা করবে যুবকদেরকে।
বাংলাদেশের অতীত থেকে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেম শিখতে পারে। মুজিববাদের আদর্শকে বুকে ধারণ করতে হবে। তরুণদেরকে অবশ্যই দুর্নীতি পরিহার করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্থ মানসিকতা নিয়ে সামনে আগানো যাবে না। আমি যেহেতু শিক্ষকতা করি, তরুণদের অনেকে দেখি শর্টকাট চায়। তরুণদেরকে শর্টকার্ট সফলতা খুঁজলে হবে না। কঠোর পরিশ্রম ছাড়া সফলতা আসে না। ব্যক্তিস্বার্থেও চেয়ে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে শিখতে হবে।
##: বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আপনার কোনো একটা স্মৃতির কথা যদি বলতেন...
শেখ পরশ: ছোটবেলায় দুই চোখের মাঝখানে নাকের গোড়ায় কেটে যায় আমার। তারপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার জ্ঞান যখন ফেরে তখন দেখি রুমের মধ্যে আমার কেবিনের সামনে মুজিবকোট পড়া বেশ কয়েকজন মানুষ। পরে আমি দাদীদের কাছে শুনি, বঙ্গবন্ধু দাদা ক্যাবিনেট মিটিং থেকে আমাকে দেখতে এসেছিলেন। উনি শিশুদের অনেক ভালবাসতেন। এটা উনার মহানুভবতা। মনের দিক দিয়ে উনি অনেক নরম মানুষ ছিলেন। আমি উনার ভাগ্নের ছেলে, আমার মতো একটা শিশুকে দেখতে ক্যাবিনেট মিটিং থেকে হাসপাতালে আসা; উনার মহানুভবতার স্বাক্ষ্যই বহন করে। আর উনার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, যাকে আমি “আপন দাদী” বলে ডাকতাম; উনি আমাকে ভীষণ আদর করতেন। উনার সাথে আমার খুবই অন্তরঙ্গ কিছু স্মৃতি আছে। আমি তাদেরকে মিস করি, যদি আরও বেশিদিন পেতাম উনাদেরকে, তাহলে হয়তো আরও অনেক কিছু শিখতে পারতাম তাদের কাছ থেকে। দেশবাসীর সাথে সাথে আমরা পরিবারের সদস্যরাও বঞ্চিত হয়েছি উনাদের সান্নিধ্য থেকে।    
ঢাকা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকার।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: