

নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, আমরা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিটিতে শিক্ষিত যুব সমাজের অন্তভুক্তি ও পেশাজীবী সমাজকে সুযোগ প্রদান করেছি। যারা পলিটিক্স বিমুখ ছিল তাদেরকে আমরা ইনক্লুড করার চেষ্টা করেছি। সবাইকে আমরা পদ দিতে পারি নাই।এইজন্য হয়তবা অনেকে মনক্ষুণ্ণ আছেন। মনক্ষুণ্ণ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পদপদবী সর্বস্ব রাজনীতিতে আমি আমরা এবং আমাদের নেত্রীও বিশ্বাস করেন না।
তিনি বলেন, কি পেলাম কি পেলাম সেটা বলার দরকার নেই; কি দিলাম সেটা চিন্তা করেন।
শনিবার দুপুরে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার যুবলীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাদারগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম পরিচালনা করেন।
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নেই এই সময় এই ক্রাইসিস মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রধান কাজ হবে মানুষের কাছে ছুটে যাওয়া, মানুষের পাশে থাকা। এদেশের সুশাসন কায়েম করা, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান এবং শুদ্ধি অভিযানের যে ব্রত আমাদের নেত্রী হাতে নিয়েছে এই শুদ্ধি অভিযান সফল করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুবলীগ ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বপ্ন বাস্তবায়নে। বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বপ্ন আর জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমার কাছে সমার্থক এবং আপনাদের অনেকের কাছেও। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক মুক্তি। সেই সেই আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রায় সম্পন্ন করেছেন। আমরা সেই স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে।
এই ক্ষেত্রে এই প্রেক্ষাপটে যুবলীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে পরশ বলেন, এখন তো যুদ্ধ বিধস্ত দেশ নাই। গণবাহিনী নাই, জাসদও আমাদের এলায়েন্সে? তাহলে এখন আমাদের ভূমিকাটা কি? এখন আমাদের অন্যতম ভূমিকা? এই যে বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বপ্ন মধ্যম আয়ের দেশ এই স্বপ্নকে যেন কেউ আমাদের নসাৎ করতে না পারে।
সেই স্বপ্নকে যেন কোন বাহিনী কোন কুচক্রী মহল নসাৎ করতে না করে। এই দায়িত্ব কিন্তু যুবলীগের। সেই কারণেই আমরা এই যুবলীগ বঙ্গবন্ধুর সময়েও ভ্যানগার্ড হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে? এখনো শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই যুবলীগের অন্যতম রোল হবে ভ্যানগার্ড হিসাবে।
নসাৎ করার কিছু কিছু চক্র রয়েছে? এক হচ্ছে দুর্নীতিবাজ চক্র, তারা নষ্ট করে, মৌলবাদ চক্র। ষড়যন্ত্রকারী বহিঃশক্তি এই চক্রগুলো থেকে সাবধানতার মাধ্যমেই আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবো।
যুবলীগ এই উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন উল্লেখ করেন পরশ বলেন, সম্প্রতি আমরা যুবলীগের চারশ একজন বিশিষ্ট কমিটি ডিক্লেয়ার করেছি। আমরা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে এই কমিটিতে শিক্ষিত যুব সমাজের অন্তভুক্তি পেশাজীবী সমাজকে সুযোগ প্রদান এবং যারা পলিটিক্স বিমুখ ছিল তাদেরকে আমরা ইনক্লুড করার চেষ্টা করেছি। সবাইকে আমরা পদ দিতে পারি নাই।এইজন্য হয়তবা অনেকে মনক্ষুণ্ণ আছেন। মনক্ষুণ্ণ থাকাটাই স্বাভাবিক। সবাইকে পদ দেয়া সম্ভবও না। কিন্তু আমি একটা জিনিস বলবো যে, পদপদবী সর্বস্ব রাজনীতিতে আমি আমরা এবং আমাদের নেত্রীও বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, কি পেলাম কি পেলাম সেটা বলার দরকার নেই কি দিলাম সেটা চিন্তা করেন।
পদ পদবী থাকুক আর না থাকুক যুবলীগ একটি বিশাল পরিবার। এই পরিবারের সদস্য আপনারা সারাজীবন ছিলেন, আপনারা সারা জীবনেই থাকবেন। কিন্তু কি পদ পেলাম, এটা আসল কথা না। আসল কথা হচ্ছে আমরা যুবলীগ, আমরা যুবলীগে ছিলাম, আমরা যুবলীগের জন্য কাজ করবো। আমরা শেখ হাসিনার জন্য কাজ করবো। সেটাই আসল কথা। পদ পদবী চলে আসবে, কাজেই মাধ্যমেই কোন একসময় চলে আসবে, কোন না কোন ভাবে চলে আসবে।
তিনি আরও বলেন, সুতরাং আপনারা মন খারাপ করবেন না , মনক্ষুন্ন হবেন না।
প্রায় দুইহাজার প্রার্থীর মধ্য থেকে যোগ্যতা যাচাই বাছাই করে পদ-পদবী দেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আমাদেরও ভুল বলবো না, কিন্তু একটা ডিসিশন নিতে হয়েছে। সামগ্রিক বিষয় যাচাই বাছাই করে কোন না কোন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সেটা হয়ত অনেক কঠিন ছিল। কারণ আমরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে করার চেষ্টা করেছি। আমরা কেউ ব্যক্তিগত বায়ার্সড বা ব্যক্তিগত পরিচয়ে এগুলো থেকে আমরা বিবেচনা করি না। সুতরাং আপনারা ধৈয্য ধরেন। আপনারা এই পরিবারের সদস্য, আপনারা আমার ভাই আপানারা আমার সাথে থাকেন। দেখবেন আমরা কি করতে পারি।
দুর্নীতি নিয়ে আমার দেখা নয়া চীনের একটি উক্তির কথা তুলে ধরে পরশ বলেন, আমাদেরও অবস্থা হয়েছে সেটা। আমরা পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতি চ্যাম্পিয়ন হলাম। তার আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সামরিক জান্তারা আমাদের উপর চেপে বসেছিল। সেকারণেই দুর্নীতি এবং পুঁজিবাদী সমাজের আবির্ভাব আমাদের মন মানসিকতার মধ্যে
তিনি সবচেয়ে কঠিন কাজটা করছেন। তিনি পরিবার থেকে শুরু করেছেন নিজের দল থেকে শুরু করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত পক্ষ দেখেন নাই। এবং পরিবার থেকে শুরু করা, নিজের দল থেকে শুরু করা যে কত বড় কঠিন কাজ এটা আর কোন নেতা নেত্রীর পক্ষে করার কথা না। একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যাই পারবে। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজের চাওয়া পাওয়ার কোন বিষয় নাই। তিনি সব হারিয়েছেন ৭৫’এ।
ব্যক্তিস্বার্থহীন রাজনীতি বঙ্গবন্ধু কন্যার দ্বারাই সম্ভব দাবি করে পরশ বলেন, তার ত্যাগের অভিজ্ঞতাই তাকে এরকম নেতায় পরিণত করেছেন। আমরা ভাগ্যবান এমন একটা নেত্রীর অধিনে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা যুবলীগ আমাদের যুবলীগ রক্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার সাথে থাকবে এবং এই দুর্নীতির ক্যান্সার এই দেশের মাটি থেকে উৎখাত করবে ইনশাআল্লাহ।
রাজনীতির পবিত্রতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। রাজনীতি যে পেশায় পরিণত হয়েছে, এটা আমাদের এই মনোবৃত্তি থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। রাজনীতি কোন পেশা না, রাজনীতিতে আমরা শ্রম দেবো, দেশের জন্য কিছু করার জন্য, সমাজের জন্য কিছু করার জন্য, দেশকে ভালবেসেই রাজনীতি করতে হবে। আশা করি আমরবো সেই ধরনের একটা মনোভাব এবং চর্চা আমাদের আনতে হবে।
যেই নেতৃত্বে আসবেন, তারা মনে রাখবেন এবং স্মরণ রাখবেন আমরা কোন নেতার দল করি। আমরা বঙ্গবন্ধুর দল করি। বঙ্গবন্ধুর ছবিটার দিকে একবার তাকাবেন। এই লোকটা এই মহান নেতা তার সারাজীবন এই দেশ এবং মানুষের কথা চিন্তা করেছেন নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করেন নাই। তো আপনারা সেই নেতার সংগঠনের কর্মী, সেটা মাথায় রেখে শৃংখলার সাথে কি পেলাম সেটা বড় কথা না, কি দিলাম এই মনোভাব মনোবৃত্তি নিয়ে শৃংখলা রেখে সংগঠন করার আহ্বান জানান ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: