ঢাকা | শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষকদের পাঠদান মাল্টিমিডিয়া প্রশিক্ষণ সহজ করেছে

amaderodhikarpatra@gmail.com | প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:০০

amaderodhikarpatra@gmail.com
প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:০০

 
sharethis sharing button


ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

 : মাল্টিমিডিয়া প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষকদেন পাঠদান পদ্ধতিকে সহজতর করেছে। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং অপ্রতিবন্ধী সব শিক্ষার্থীদেরই শিক্ষা দিতে পারেন।
জন্মগতভাবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষক উম্মে তানজিলা চৌধুরী মুনিয়া চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার মোহসেনা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ২০১৩ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ  দেন। সেসময় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে গিয়ে অনেক বাধার মুখোমুখি হন।
তবে ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং প্রোগ্রাম তার পেশায় আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছে। ‘স্ক্রিন রিডার’ নামক একটি সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে তিনি নিজেই এখন বিভিন্ন বিষয়বস্তু তৈরি করেন। স্ক্রিন রিডার এক ধরনের সহায়ক প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে তিনি লেখা এবং ছবির বিষয়বস্তুকে মুখে বলে এবং ব্রেইলে রূপান্তর করে তার ছাত্রদের সামনে উপস্থাপন করেন।
‘আমি মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে ক্লাসে আমার বাচ্চাদের পাঠকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছি। অনেক বাধা  পেরিয়ে এসে আমি এখন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং অপ্রতিবন্ধী উভয় ধরনের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারছি।” চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনকারী মুনিয়া আরো বলেন, আমি সবসময় সমস্যাগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। যাতে বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে আরও সহজ হয়ে ওঠে। আমি কম্পিউটার বা সঙ্গীত সম্পর্কে যা জানি তাও তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। ডেইজি মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক এবং তথ্য-প্রযুক্তি (আইটি) বিষয়ে তার প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে মুনিয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন। 
মুনিয়া জানান, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য পড়া সহজ করার লক্ষ্যে অনেকগুলো বিষয়বস্তু তৈরি করেছেন এবং তার তৈরিকৃত দশটিরও বেশি ডিজিটাল বিষয়বস্তু শিক্ষক বাতায়নে আপলোড করা হয়েছে। (শিক্ষক  পোর্টাল-www.teachers.gov.bd একটি প্ল্যাটফর্ম যা পেশাদারী দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষকদের ক্ষমতায়নের জন্য তৈরি করা হয়েছে)।
তিনি বলেন, “আমরা যখন বিশেষায়িত স্কুলে পড়তাম, তখন আমাদের ব্রেইল বইয়ের জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হতো। মাসের পর মাস চলে যেত, কিন্তু ব্রেইল বই পেতাম না। এই বইগুলো কখন হবে আর কখন আমরা পড়ব? তাই আমরা সবসময় সাধারণ ছাত্রদের পিছনে পড়ে যেতাম। তবে এখন বিভিন্ন ডিজিটাল বিষয়বস্তুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নেয়া সম্ভব।”
মুনিয়া এবং তার তিন বোন জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মেয়েদের  লেখাপড়া করানোর জন্য তাদের বাবা-মা
গ্রাম থেকে শহরে চলে আসেন। এখন তারা সবাই উচ্চ শিক্ষিত এবং শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের মাধ্যমে তারা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। মুনিয়া তার তিন বোনকে তথ্য প্রযুক্তিগত শিক্ষা গ্রহণেও সহায়তা করেন।  তারাও “টিচার্স কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট” প্রকল্পের অধীনে কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এটুআই এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর যৌথভাবে ২০১৬ সালে
রাজধানীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজে (টিটিসি) এ প্রশিক্ষণ আয়োজন করে। 
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এজেন্ডা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে এটুআই ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করছে। এটুআই  দেশের মধ্যে সত্যিকারের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলো উন্মোচন করার লক্ষ্যে কাজ করছে, যা নাগরিকদের জীবনকে আরো সহজ ও উন্নত করতে পারে।
বাসস’র সাথে আলাপকালে মুনিয়া বলেন, “আমি সারাজীবন অন্ধকারের সাথে লড়াই করেছি। তবে শিক্ষার জন্য আমার উদ্যোগকে কেউ থামাতে পারেনি।”
এটুআই’র “লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৬” এবং “অনন্যা শীর্ষ দশ ২০১৫” বিজয়ী মুনিয়ার সাফল্যে এটাই প্রতিফলিত হয় যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের বোঝা নয়, বরং যথাযথ সুযোগ সুবিধা পেলে তারাও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। 
বাসস’র সাথে আলাপকালে, এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এ  দেশে বিপুল সংখ্যক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে, যাদের অনেকেই এখন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত অধ্যয়নের উপকরণ না থাকায় তাদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান ও উন্নততর শিক্ষা অর্জন করা খুবই কঠিন। এখানে একটি সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনে  কন্ঠ সংশ্লেষণের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের স্ক্রিনে পড়তে দেয়া হয়। এতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কিছুটা অসুবিধা হয়। 
হুমায়ুন কবির বলেন, ব্রেইল বইয়ের অবদান অতুলনীয়, কিন্তু পুরোপুরি ব্রেইলের উপর নির্ভরশীল হলে শিক্ষার্থীরা উচ্চারণ সমস্যারও সম্মুখীন হতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের কাছে অধ্যয়নের উপকরণগুলোকে একটি আকর্ষণীয় উপায়ে উপস্থাপন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা শিক্ষাকে এক ঘেয়ে করে তুলবে না।

বাসস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: