odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Thursday, 4th December 2025, ৪th December ২০২৫
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ২০২৫

করুণা নয়, অধিকার—প্রতিবন্ধী মানুষের মর্যাদাই হোক রাষ্ট্রের মানদণ্ড

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৩ December ২০২৫ ১৭:৪০

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৩ December ২০২৫ ১৭:৪০

আজ ৩ ডিসেম্বর—আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। বিশ্বজুড়ে এই দিবসটি পালন করা হয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার, মর্যাদা ও পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার স্মরণ করিয়ে দিতে। কিন্তু দিবস এলেই ব্যানার-ফেস্টুন, সম্মেলন আর শুভেচ্ছাবাণীর ভিড়ে একটি মৌলিক প্রশ্ন চাপা পড়ে যায়—প্রতিবন্ধী মানুষ কি সত্যিই আমাদের উন্নয়ন দর্শনের কেন্দ্রে আছে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে বসবাস করে। বাংলাদেশেও এই সংখ্যাটি কম নয়। দৃষ্টি, শ্রবণ, বুদ্ধিবৃত্তিক, শারীরিক কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধকতা—সব ক্ষেত্রেই লক্ষ লক্ষ মানুষ আজও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সামাজিক জীবনে বৈষম্যের শিকার।

করুণা নয়, অধিকারের প্রশ্ন

দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী মানুষকে সহানুভূতির বস্তু হিসেবে দেখা হয়—যেন তারা সমাজের বোঝা। এই দৃষ্টিভঙ্গিই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। বাস্তবতা হলো, প্রতিবন্ধকতা কোনো ব্যক্তির নয়; এটি সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যর্থতার প্রতিফলন।
হুইলচেয়ারে চলা একজন মানুষ অক্ষম নন—অক্ষম হলো র‌্যাম্পবিহীন ভবন।
শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশু অযোগ্য নয়—অযোগ্য হলো ইশারা ভাষাহীন শিক্ষা ব্যবস্থা।

আইন আছে, বাস্তবায়ন কোথায়?

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ রয়েছে। রয়েছে ভাতা, কোটা, শিক্ষা সহযোগিতা ও বিশেষ পরিচর্যা কার্যক্রম। অথচ বাস্তব প্রয়োগে দেখা যায় দীর্ঘসূত্রতা, অবহেলা ও সমন্বয়হীনতা।
প্রতিবন্ধী ভাতা এখনও অনেকের কাছে পৌঁছায় না। কর্মক্ষেত্রে কোটা থাকলেও নিয়োগ বাস্তবতা প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন আজও প্রতিবন্ধীবান্ধব হয়নি।

শিক্ষা ও কর্মসংস্থান: সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

একজন প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বৈষম্যের মধ্য দিয়ে—বিশেষায়িত শিক্ষক নেই, উপযুক্ত পাঠ্যক্রম নেই, নেই মানসিক সহায়তা। উচ্চশিক্ষা ও চাকরির দরজা আরও কঠিন। দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী পরিচয়টাই হয়ে দাঁড়ায় অযোগ্যতার অজুহাত।

অথচ সঠিক সুযোগ পেলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও হতে পারেন উদ্যোক্তা, শিক্ষক, প্রযুক্তিবিদ কিংবা রাষ্ট্রনির্মাণের সক্রিয় অংশীদার।

বদলাতে হবে দৃষ্টিভঙ্গি

প্রতিবন্ধী মানুষের অন্তর্ভুক্তি শুধু কল্যাণমূলক কর্মসূচির বিষয় নয়; এটি একটি মানবাধিকার ও উন্নয়ন ইস্যু। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনের কথা বললেও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে কোনো উন্নয়নই টেকসই হতে পারে না।

সরকারের পাশাপাশি পরিবার, সমাজ, গণমাধ্যম ও বেসরকারি খাতকে দায়িত্ব নিতে হবে। শহর পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ডিজিটাল সেবা—সবকিছুতে “Accessibility” নিশ্চিত করাই হওয়া উচিত অগ্রাধিকার।

সম্পাদকীয় আহ্বান

এই আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক—
প্রতিবন্ধী মানুষকে আর করুণার চোখে নয়, সমান নাগরিক হিসেবে দেখবো
আইন থাকবে শুধু কাগজে নয়, বাস্তবে।
শিক্ষা, চাকরি ও জনপরিসর হবে প্রতিবন্ধীবান্ধব।
কারণ একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিমাপ হয় তার সবচেয়ে দুর্বল নাগরিকের প্রতি আচরণে।

আজকের দিনে নয়—প্রতিদিনই প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করাই হোক আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: