ঢাকা | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি

শেখ জামালসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের রক্তে রঞ্জিত জিয়াউর রহমানের হাত ঃ শেখ পরশ

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ১১:১৮

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ১১:১৮

শুক্রবার সকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড আদর্শ বিদ্যানিকেতনে (মানিকদি কবরস্থান/মাঠ সংলগ্ন) বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শহীদ লেফটেন্যান্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল এর ৬৯তম জন্মদিন ও পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ   বলেন,
 ‘বঙ্গবন্ধু তাঁর সেনা অফিসারদেরকেও সন্তানদের মতই ভালোবাসতেন। সেই সন্তানতুল্য সৈন্যদের হাতেই তাঁর জামালের ও তাঁর নিজের প্রাণ যেতে হল। এ যেন গ্রিক ট্রাজেডির ড্রামাটিক আয়রণনিকেও হার মানায়। আজ শেখ জামালের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের অযুত ভালোবাসা, গর্ব ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে পেশাগতভাবে দক্ষ ও চৌকস বাহিনী হিসেবে। আজকের এই দিনে একজন অকালপ্রয়াত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা, বন্ধু-অন্তপ্রাণ ও দুঃসাহসিক তরুণের কথা স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধাভরে।এই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারের রক্তপাত যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করেছিল, তাদের সেনা আইনে বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সে সময়ের সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ ও উপসেনা প্রধান জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানতো সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল। শুধু তাই নয়, শেখ জামালসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের রক্তে রঞ্জিত এই জিয়াউর রহমানের হাত। সুতরাং জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি আজকের প্রজন্মের সময়ের দাবি। যেটা খুব শ্রীঘ্রই এদেশের মাটিতে আমরা দেখব ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের পক্ষ থেকে এই দাবি ব্যক্ত করছি।’
 
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একজন সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর একজন গর্বিত সেনা অফিসার। দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক, বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ ও সংস্কৃতিপ্রেমী শহীদ শেখ জামাল ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিুদ্ধের সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে শেখ জামালও গৃহবন্দি ছিলেন। সেখান থেকে পালিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের আগস্টের একদিন সকালে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আবিষ্কার করেন ছেলে ঘরে নেই। রাজনৈতিক দূরদর্শী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তার সন্তানকে অপহরণের অভিযোগ তুললেন দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে। সারাবিশ্বে আলোড়ন, বিদেশি পত্রপত্রিকায় ছাপা হলো পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবের ছেলেকে গুম করেছে।
 
‘এই রকম একাধিক ঐতিহাসিক কারণে শেখ জামালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। আসলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য কিশোর শেখ জামাল ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে ধানমন্ডির তারকাঁটার বেড়া দেওয়া পাকিস্তানি বাহিনীর বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে ভারতে যান। শেখ জামাল ধানমন্ডি থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পথচলা শেষে ভারতের আগরতলা পৌছাঁন এবং আগরতলা থেকে কলকাতা হয়ে পৌঁছলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের কালশীতে। সেখানে ফুপাত ভাই ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি’র নেতৃত্বাধীন মুজিব বাহিনীতে ৮০ জন নির্বাচিত তরুণের সঙ্গে শেখ জামাল ২১ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে শেখ ফজলুল হক মণি’র সাথেই মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু শেখ জামালের পালাইয়া যুদ্ধে অংশগ্রহণের খবরটা সঙ্গত কারণেই একেবারে চেপে যায় স্বাধীন বাঙলার প্রবাসী মুজিবনগর সরকারও, কারণ এই ইস্যুতে মুজিবনগর সরকার এবং ভারত সরকারের তীব্র সমষ্টিগত চাপে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে প্রচনড- বেকায়দায় পড়েছিল পাকিস্তান সরকার।’
 
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন শেখ জামালকে সেনা অফিসার হিসেবে গড়ে তুলতে। শহীদ শেখ জামাল পিতার স্বপ্ন অনুযায়ী, একজন দেশপ্রেমিক চৌকস-মেধাবী সেনা অফিসার হয়ে উঠেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লং কোর্স-এর প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার। ১৯৭৪ সালে শেখ জামাল মার্শাল টিটর আমন্ত্রণে যুগোস্লাভিয়ার মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ব্রিটেনের বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সামরিক একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করেন।১ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে স্যান্ডহার্স্বে রেগুলার ক্যারিয়ার কোর্স শুরু হওয়ার কথা ছিল শেখ জামালের। ব্রিটিশ পত্রপত্রিকায় কমিশনপ্রাপ্ত বাংলাদেশের শেখ জামালের ছবি ছাপা হলো। ছবিটি বিশ্বকে এক প্রতীকী বার্তা দিয়েছিল যে, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ তার সামরিক বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে চায়। অথচ শেখ জামাল এই এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও অংশ নিলেন না। মায়ের জন্য গভীর টান অনুভব করে তিনি যোগদান করলেন না; দেশেই থেকে গেলেন। মাত্র দেড় মাস পর এই সিদ্ধান্তই তাঁর জীবন কেড়ে নেয় এবং মায়ের সাথেই তিনি চিরতরে বিদায় নেন এই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে। শেখ জামাল এখন ঘুমিয়ে আছেন বনানী কবরস্থানে।
 
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আমরা এসেছি আমাদের নেত্রী, আপনাদের নেত্রী, গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের নেত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের মাঝে তাঁর ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
 
যুবলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় নেত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে মানিকদি, ভাষানটেকে কিছু সংখ্যক বিএনপির সন্ত্রাসী এই অঞ্চলের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। কিছু সংখ্যক বিএনপির সন্ত্রাসী এই অঞ্চলের গরীব দুঃখী মানুষের বসতবাড়ী জোর-জুলুম করে দখল করেছে, সরকারি জায়গা দখল করেছে, মার্কেট বানিয়েছে। এই অঞ্চলে মাদক ব্যবসা করে ছাত্র সমাজ, যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যুবলীগের বন্ধুদের বলতে চাই-যদি সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, শেখ হাসিনার আদর্শ বুকে থাকে, বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশের আদর্শ যদি যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বুকে থাকে অবশ্যই এই অঞ্চলে যে সকল বিএনপি সন্ত্রাসীরা জায়গা দখল, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে হবে।
 
তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী নির্বাচনকে নিয়ে জামাত-বিএনপি নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। আপনারা সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে নৌকায় ভোট দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় আনবেন বলে বিশ্বাস করি।
 
যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী'র পরিচালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম, মোঃ নবী নেওয়াজ, ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল কান্তি জোদ্দার, তাজউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সুব্রত পাল, মুহাঃ বদিউল আলম, মোঃ রফিকুল আলম জোয়ার্দার সৈকত, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোঃ মাজহারুল ইসলাম, মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ, মোঃ জহির উদ্দিন খসরু, অ্যাড. ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ জহুরুল ইসলাম মিল্টন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোঃ সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক মোঃ শামছুল আলম অনিক, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা, উপ-ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোঃ আলতাফ হোসেনসহ প্রমুখ।
 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: