ঢাকা | বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ -পশ্চিমাঞ্চলে লবনাক্ত নদীর পানিতে সেচ সম্ভাবনা

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২২ ০০:৪১

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২২ ০০:৪১

 বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৮টি জেলার ৯৩টি উপজেলা বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এ দেশের মোট উপকূলীয় জমির পরিমাণ ২৮.৬ লক্ষ হেক্টর। তার মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ত কবলিত জমির পরিমাণ ১০.৫৬ লক্ষ হেক্টর। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হলে মাটির লবণাক্ততা কমতে শুরু করে। তাই বলা চলে, এই এলাকায় বর্ষা মৌসুমে (খরিফ-২) যখন মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা থাকে না তখন একটি মাত্র ফসল রোপা আমন চাষ হয়। শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততার কারণে এই এলাকার অধিকাংশ জমি পতিত থাকে। এ এলাকায় প্রধান ফসলধারা হলো রোপা আমন-পতিত-পতিত। এ অবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অনাবাদি মৌসুমি পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনা বড় চ্যালেঞ্জ। যদি মাটিতে দ্রবীভূত লবণের পরিমাণ ২ ডেসিসিমেন/মিটারের বেশি হয় তখন তাকে লবণাক্ত মাটি বলে। অন্যদিকে পানিতে যদি ০.৭৫ ডেসিসিমেন/মিটারের বেশি থাকে তখন তাকে লবণাক্ত পানি বলে। বাংলাদেশের লবণাক্ততা কবলিত এলাকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭৩ সালে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল ৮,৩৩,৪৫০ হেক্টর। যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০০০ সালে ১০,২০,৭৫০ হেক্টর এবং ২০০৯ সালে ১০,৫৬,২৬০ হেক্টর হয়। লবণাক্ততার প্রধান কারণগুলো হলো- উজান হতে বয়ে আসা পানির স্বল্পতা; স্লুইসগেট ও পোল্ডার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি; অরক্ষিত এলাকায় নিয়মিত লবণযুক্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ; চিংড়ি চাষের উদ্দেশ্যে কৃত্রিমভাবে লবণযুক্ত পানির প্রবেশ; অনিয়মিত বৃষ্টিপাত; ভূপৃষ্ঠস্থ মিষ্টি পানির অভাব; অনেক নিচে ভূগর্ভস্থ মিষ্টি পানির অবস্থান; মাটিতে আর্দ্রতার অভাব; কৈশিক রন্ধ (মাটির ফাটল/ছিদ্র) দিয়ে লবণ পানির মাটির উপরিস্তরে উঠে আসা; পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব । আমাদের সার্বিক কৃষি উন্নয়নে লবণাক্ত মৌসুমি পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অধিকাংশ নদীর পানি জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সেচের জন্য উপযুক্ত থাকে। আর জোয়ারের সময় এ সব নদীর পানির স্তর জমি থেকে ২-৩ মিটার উচ্চতায় উঠে। তখন পোল্ডার এলাকায় স্লুইচ গেট খুলে দিলে সরাসরি জমিতে পানি প্রবেশ করে। তবে বোরো ধান উৎপাদন করতে হলে লবনাক্ততা বৃদ্ধির আগেই স্লুইচ খালে ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতেই পানি সংরক্ষণ করতে হবে। এ পানি দিয়ে ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পাম্পের সাহায্যে সেচ প্রদান করে বোরোধান ফলানো যায়। জোয়ার-ভাটাপ্রবণ বরিশাল অঞ্চলের চারটি বড় নদীপ্রবাহ, যথাক্রমে, বলেশ্বর, বিষখালী, বুড়িশ্বর এবং তেতুলিয়া-এর বিভিন্ন স্থানে পানির লবনাক্ততা শুষ্ক মওসুমে মার্চ-জুন পর্যন্ত নিয়মিত পরিমাপ করা হয়েছে। নদীর পানি প্রবাহে বিদ্যমান লবনাক্ততার পরিমান ০.৭৫ ডিএস/মি-এর কম হলে তা স্বাদু পানির সমমান এবং বেশী হলে তা লবনাক্ত পানির সমমান ধরে বলেশ্বর, বিষখালী, বুড়িশ্বর এবং তেতুলিয়া নদীর উজান থেকে উপকূলের নিকটবর্তী এলাকা পর্যন্ত স্বাদু-লবনাক্ত পানির সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেছে, স্বাদু-লবনাক্ত পানির সীমারেখা বলেশ্বর, বিষখালী, বুড়িশ্বর এবং তেতুলিয়া নদীর মোহনা থেকে যথাক্রমে ৩৪ কিমি, ২৪ কিমি, ১৮ কিমি এবং ১৭ কিমি উজানের দিকে বিস্তৃত। নদীর স্বাদু পানি কৃষি জমিতে সেচের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এই পানি ব্যবহার করে বরিশাল অঞ্চলের আমন মওসুমের পরে যেসব জমি শুষ্ক মওসুমে পতিত পরে থাকে তা চাষের আওতায় আনা যায়। সেচ উপযোগী স্বাদু পানি ব্যবহার করে কৃষকেরা এক ফসলী জমিতে দুই বা ততোধিক ফসল উৎপাদন করতে পারবেন। জোয়ার-ভাটা প্রবণ উপকূলীয় অঞ্চলে জলাবদ্ধ ধানক্ষেতে সবজী চাষ: ৫০-৭৫ সেমি ব্যাসের পাটের বস্তা ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৩০ গ্রাম এমওপি এবং ১ কেজি সরিষা কেক সহযোগে মাটি ভর্তি করা হয় এবং ধানের জমিতে ৩ মিটার দূরত্বে সারিতে স্থাপন করা হয়। মাটি ভর্তি বস্তার মুখ জোয়ারের পানি উপরিভাগ থেকে কমপক্ষে ৩০ সেমি উপরে থাকতে হবে। জনপ্রিয় এবং উচ্চমূল্যের বিভিন্ন সবজী, যেমন, করলা, ঝিঙ্গা, শসা, কুমড়া ইত্যাদি এই বস্তায় চাষ করা যায়। সবজী গাছ বেড়ে উঠার জন্য বাশের খুটিযুক্ত জালের মাচা ব্যবহার করা যেতে পারে। ধানক্ষেতে পাটের বস্তায় সবজীচাষ কৃষকের আয় বৃদ্ধি করে। Ridge & furrow পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন : যেসব এলাকায় জোয়ার অথবা হঠাৎ বৃষ্টিজনিত কারণে প্লাবিত হয়ে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেইসব জমিতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে ১৫-২০ সেমি. মাটি উঁচু করে ৫০ সেমি. প্রশস্ত Ridge (লম্বা বেড) প্রস্তুত করতে হবে। একটি আদর্শ বেডের দৈর্ঘ্য ৫-৬ মিটার। দুই বেডের মাঝে ৫০ সেমি.furrow রাখতে হবে। অতঃপর প্রস্তুতকৃত ridge এর উপর ফসলের বীজ বপন করতে হবে। লবণাক্ত এলাকায় ridge & furrow প্রযুক্তি মাটির নিচের স্তর থেকে লবণযুক্ত পানি কৌশিক রন্ধ্র দিয়ে উপরে আসতে বাধা প্রাপ্ত হয়। ফলে পতিত জমিতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে লবণাক্ততার মাত্রা কমিয়ে রেখে অনেক জমি ফসল চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

পরিতোষ কুন্ড 

প্রধান প্রকৌশলী নির্মান

বিএডিসি 

(সূত্র :AIS & BRRI)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: