ঢাকা | রবিবার, ৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে

MASUM | প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০১৭ ১৯:০৩

MASUM
প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০১৭ ১৯:০৩

বন্যাকবলিত জেলা (নীল রঙে চিহ্নিত)

ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সঙ্গে রয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সুনামগঞ্জও। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, আত্রাই, সুরমাসহ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ভেসে গেছে অনেকের ঘরবাড়ি-গবাদিপশু। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি। এমনকি কয়েকটি জেলায় সড়ক যোগাযোগ ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে রয়েছে।

 ঢাকার বাইরের খবর:

কুড়িগ্রাম: অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এর মধ্যে কয়েকটির পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বন্যায় জেলার নয়টি উপজেলায় সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে পানি উঠেছে। সদরে কল্যাণ এলাকায় ধরলা নদীর বাঁধ ভেঙে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়ক মণ্ডল গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের ২০ ফুট অংশ ভেঙে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এমনকি কাঁঠালবাড়ী ও হুলোখানা ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে বাংটুর ঘাট এলাকায় বাঁধ ভেঙে ওই এলাকা দিয়ে পানি ঢুকে দুই ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অনেকের ঘরবাড়ি ও গবাদিপশু। আর যাঁরা গবাদিপশুদের বাঁচাতে পেরেছেন, সেগুলোকে নিয়ে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কে আশ্রয় নিচ্ছেন। এদিকে সাপের কামড়ে ও পানিতে ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

পাউবো জানায়, বেলা একটায় ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১ মিটার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে ধরলার পানি ১ মিটার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল।

গাইবান্ধা: অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত চব্বিশ ঘণ্টায় গাইবান্ধার ১১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সরকারি উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এসব ইউনিয়নের দুই হাজার হেক্টর আমন ধান ও পাটের জমি তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত লোকজন ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। ঘরে পানি ওঠায় তারা হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। আজ বিকেলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদের পানি শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বেড়েছে। জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ মিলিমিটার।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এবার বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সৈয়দপুর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় হু হু করে পানি ঢুকে পড়ছে শহরে। ছবিটি আজ রোববার সকালে পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়া থেকে তোলা। ছবি: এম আর আলম

সৈয়দপুর (নীলফামারী): সৈয়দপুরের খড়খড়িয়া নদীর বাঁ তীরে পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়া এবং বসুনিয়া এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে আশপাশের মানুষ। অনেকে গরু-ছাগল ও বাড়ির আসবাব নিয়ে দিগ্‌বিদিক পালাতে থাকে। ওই এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

আজ রোববার সকালে সৈয়দপুর উপজেলা সদরের কুন্দল, পাটোয়ারীপাড়া, নয়াবাজার, সুড়কিমিল, কাজীপাড়া, হাতিখানা, নতুন বাবুপাড়া, মিস্তিরিপাড়া এবং বাঁশবাড়ি মহল্লা প্লাবিত হয়। এসব এলাকার কোথাও কোথাও কোমরপানি। সৈয়দপুর বিমানবন্দরেও যেকোনো সময় বন্যার পানি ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট লোকজন।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বজলুর রশীদ জানান, বন্যার ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কাশিরাম ও খাতামধুপুর ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কের ফুলবাড়ীর কাউগা থেকে পাঁচবাড়ী প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় মহাসড়কের ওপর দিয়ে প্রবল পানির স্রোত। ফলে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ছবিটি আজ দুপুর ১২টায় তোলা। ছবি: মোহাম্মদ আলী

দিনাজপুর: টানা তিন দিনের বর্ষণে দিনাজপুরে পুনর্ভবা ও আত্রাই নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়ক ও দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কের কিছু অংশ এবং পথঘাট, নিম্নাঞ্চলসহ শহরের পাড়া মহল্লার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। প্রবল স্রোত থাকায় দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কের কাউগা থেকে পাঁচবাড়ী প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় সকাল সাতটা থেকে বড় ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এলাকাবাসী রাস্তার পাশে থাকা গাছ কেটে স্রোতের বেগ কমানোর চেষ্টা করছেন। বন্যায় জনজীবনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান বলেন, ‘বাঁধের পানি উপচে পুরো জেলা একাকার। জেলার কয়েক শ পয়েন্ট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দিনাজপুর জেলার পুনর্ভবা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার ও আত্রাই নদের পানি ৮০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে; যা ১৯৬৮ সালের পর এই প্রথম।’

নওগাঁ: ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে আত্রাই নদের পানি গতকাল শনিবার সকাল থেকে বাড়তে শুরু করে। রাতে মান্দা উপজেলার নুরুল্যাবাদ ইউনিয়নের পার নুরুল্যাবাদ ও নুরুল্যাবাদ উত্তরপাড়া এলাকায় দুই স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে বেড়িবাঁধের ভেতর থাকা পার নুরুল্যাবাদ, নুরুল্যাবাদ উত্তরপাড়া ও শিবচর গ্রাম প্লাবিত হয়। বন্যার পানির তোড়ে চারটি কাঁচা বাড়ি ভেঙে গেছে। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ হয়ে পড়েছে পানিবন্দী। এদিকে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে মূল বাঁধও।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পানির কারণে গতকাল থেকে আত্রাই নদে পানি বাড়তে থাকে। আজ সকাল ১০টার দিকে পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার এবং দুপুর ১২টা নাগাদ বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পঞ্চগড়: গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় এই জেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। জেলার চারটি উপজেলা ও একটি পৌরসভায় ১৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২৯ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে ২৫ মেট্রিক টন চাল ও এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেসে গেছে পাট ও আমন খেত। অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অঘোষিত ছুটি চলছে। তবে ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এ কারণে পাঁচ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ১৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক হাজার, পঞ্চগড় পৌর এলাকায় ১৩টিতে ৪ হাজার ৫০০, বোদা উপজেলার ২৫টিতে ৭ হাজার ৫০০, আটোয়ারীর সাতটিতে এক হাজার এবং দেবীগঞ্জের ১০০টিতে ১৫ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছে।

জেলার সিভিল সার্জন পীতাম্বর রায় বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৪৩টি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সিভিল সার্জন অফিসেও একটি নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র খোলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘পানিবন্দী যেসব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের খাবার, পানীয় জল, শৌচাগার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যত দিন পানি সরে না যাবে, তত দিন এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। পর্যাপ্ত ত্রাণ ও টাকা চেয়ে ঢাকায় ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো হয়েছে।’

সিরাজগঞ্জ: টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৪৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালি, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সদ্য রোপণ করা রোপা ধানের জমি তলিয়ে গেছে। যমুনা নদীর তীরবর্তী চৌহালী উপজেলার খাসকাউলিয়া, এনায়েতপুর এলাকার বামনগ্রাম এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রস্তুত আছেন।

ঘরবাড়ি সব পানিতে তলিয়ে গেছে। যাতায়াতের কোনো উপায় নেই। তাই মাধ্যম এখন কলাগাছের ভেলা। ছবি: আব্দুল আজিজ

জামালপুর: যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জামালপুরের চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আজ রোববার বেলা একটার দিকে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী, কুলকান্দি, বেলগাছা, সাপধরী ও নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন, মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ, বালিজুড়ি ও জোড়খালি ইউনিয়ন এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ি ও চিকাজানি ইউনিয়ন এবং দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের কিছু অংশে বন্যার পানি উঠেছে। এতে ওই সব ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানির কারণে ইসলামপুর-নোয়ারপাড়া রাস্তা, শিংভাঙা-আমতলি পাকা রাস্তা, দেওয়ানপাড়া-ভূতেরপাড়া রাস্তা, বাম বাজার-পশ্চিম বামনা রাস্তা, মেলান্দহ-মাহমুদপুর রাস্তা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জামালপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপের নিয়ন্ত্রক আবদুল মান্নান বলেন, ‘যেভাবে পানি বাড়ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।’

নেত্রকোনা: গত দুই দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে জেলার চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দুর্গাপুর উপজেলার ৫৫টি গ্রামে পানিবন্দী আছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে ৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ৪৫০ হেক্টর আমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কলমাকান্দা উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামে প্রায় ৮০০ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় আছে। সেখানে ১৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ৬০০ হেক্টর আমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পূর্বধলায় পাঁচটি গ্রামে পানি ঢুকে ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দী প্রায় ৩০০ পরিবার।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু তাহের বলেন, সোমেশ্বরী নদীর পানি দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার থেকে কমে ৬৮ সেন্টিমিটারে এসেছে। কংস নদের জারিয়া পয়েন্টে ১৮৫ সেন্টিমিটার, উব্দাখালি নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ও খালিয়াজুরির ধনু নদীর ১৫ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এডিপিও) মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, জেলায় ১০টি উপজেলায় প্রায় তিন শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।

জেলা প্রশাসক মো. মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও পূর্বধলা উপজেলার জন্য আপাতত নগদ এক লাখ টাকা ও ২৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।

লালমনিরহাট পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে তিন, পাঁচ, ছয় ও নয় নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তা ঘাট, পুল কালভার্ট তিন থেকে চার ফুট পানির নিচে। ছবি: আবদুর রব

লালমনিরহাট: জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৫০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ২৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। আজ দুপুর ১২টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নে অবস্থিত পাউবোর ধরলা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ বাঁধের চারটি স্থানে গতকাল শনিবার দুপুর থেকে রাতের মধ্যে ভেঙে যায়। এতে ধরলা ও রতনাই নদীর পানি এক হয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে মোগলহাট ও কুলাঘাট ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা জলাবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি লালমনিরহাট পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তা ঘাট, পুল কালভার্ট তিন থেকে চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে আজ ভোর থেকে এ বিভাগের চারটি রেল রুটের ট্রেন চলাচল সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে লালমনিরহাট রেলস্টেশন থেকে তিস্তা পর্যন্ত, কালীগঞ্জের কাকিনা থেকে বুড়িমারী, রমনা বাজার থেকে কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও থেকে পঞ্চগড়।


বন্যায় সুনামগঞ্জের আটটি উপজেলার ১০২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ছবি: খলিল রহমান

সুনামগঞ্জ: বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ছে মানুষজন; বিশেষ করে উপজেলার শতাধিক গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ এবং তাহিরপুর উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ। তলিয়ে গেছে সাড়ে চার হাজার হেক্টর রোপা আমন জমি। আজ রোববারও জেলার আটটি উপজেলার ১ হাজার ২০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো পরীক্ষা হয়নি। একই সঙ্গে জেলার ৩১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আজ পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কামরুজ্জামান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় বন্যার্ত ব্যক্তিদের জন্য ১৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: