
ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ট্রান্স জেন্ডার কোটা বাতিল এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশোধিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
জানা যায়, আসন্ন ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে ট্রান্সজেন্ডার কোটাকে হিজড়া কোটার সমর্থক শব্দ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডার কখনোই একই বিষয় নয়। হিজড়াদের কোটার ব্যাপারে তাদের কোন দ্বিমত নেই, বরং হিজড়ার সাথে ট্রান্সজেন্ডার কোটাকে অন্তর্ভুক্ত করাতে তারা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার দুইটা পুরো ভিন্ন বিষয়, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ সেটাকে এক করে দেখানোর চেষ্টা করছে। হিজড়া একটি জন্মগত সমস্যা এবং এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অন্যদিকে, ট্রন্সজেন্ডার হচ্ছে, একটা মানসিক অবস্থা যার সাথে লিঙ্গের কোন সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে একজন ছেলে / মেয়ে ‘ভুল দেহে আটকা পড়েছে’ বলে মনে করে এবং এটা স্বঘোষিত ব্যাপার।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার এক নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে হিজড়াদের জন্য কোটা আছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা হিজড়াদের প্রতি সহমর্মি, তাদের অগ্রগতি আমরাও চাই। কিন্তু এই সহমর্মিতাকে কাজে লাগিয়ে ট্রান্সজেন্ডার এর মতো একটা বিকৃত সংস্কৃতিতে প্রমোট করা হবে, আমরা এটার স্বীকৃতি কখনোই দেবো না। সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হিজড়ারা প্রাকৃতিকভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হওয়ায় তারা কোটা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু যারা নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় বিকলাঙ্গ করে তাদেরকে এই কোটার সুযোগ নিতে দেয়া হবে না। ট্রান্সজেন্ডার ধারণাটি মূলত LGBTQ প্রচারণার একটি অংশ। এটাকে কোটার আওতায় আনা মানে LGBTQ কে প্রোমোট করা। এটি আমাদের সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ।
শামসুন্নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আম্মারা আক্তার বলেন, যারা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত লিঙ্গকে বিকৃত করে অর্থাৎ ট্রান্সজেন্ডাররা যদি তথাকথিত সুবিধাবঞ্চিত হিসেবে এই হিজড়া কোটার অন্তর্ভুক্ত হয়, তা কখনোই কাম্য নয়। এই কোটা বাস্তবায়ন করা হলে সবচেয়ে হুমকির সম্মুখীন হবো আমরা মেয়েরা। একজন ছেলে যদি মানসিকভাবে নিজেকে মেয়ে দাবি করে, তাকে অবশ্যই মেয়েদের হলে সিট দেয়া হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তারা সার্জারি করলেও হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তারা লিঙ্গ পরিবর্তন করলেও ২০% পরিবর্তন সম্ভব, অর্থাৎ ৮০% সে পূর্বেই লিঙ্গেই থেকে যাবে। এক্ষেত্রে আমরা হলে এবং ক্যাম্পাসে যে ক্ষতির সম্মুখীন হবো এর নিরাপত্তা কে দেবে?
মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবি উল্লেখ করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। দাবীসমূহ নিম্নরূপ:
১. অনতিবিলম্বে ভর্তি পরীক্ষায় ট্রান্সজেন্ডার। কোটা বাতিল করতে হবে।
২. দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কলুষিত ভর্তি বিজ্ঞাপ্তির বাতিল করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৩. ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়ধারীদেরকে কোটা ব্যবস্থার আওতায় আনার মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদকে প্রমোট করে সংবিধান ও দেশের আইন পরিপন্থী কাজ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনতিবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে।
৪. হিজড়া জনগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে মূলত ট্রান্সজেন্ডার বলতে হিজড়াদেরকেই বুঝিয়েছি। এই কোটার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় লিঙ্গ পরিবর্তনকারী কিংবা মানসিকভাবে নিজেকে অন্য লিঙ্গ ভাবাপন্ন কেউ সুযোগ নিতে পারবে না। প্রকৃত হিজড়া জনগোষ্ঠী এর অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সজাগ রয়েছে এবং ডিন মহোদয়গণকে এ মর্মে সঠিক সময়ে চিঠির মাধ্যমে অবগত করা হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: