ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশের দাবি শিক্ষার্থীদের

গলায় ফাঁসির রশি নিয়ে নার্সিং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আহসানুল ইসলাম আমিন | প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:১১

আহসানুল ইসলাম আমিন
প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:১১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সেশনজটের শঙ্কায় গলায় ফাঁসির রশি নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) নার্সিং অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও কলেজ পরিদর্শকের কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। জানা গেছে, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে এই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদত্যাগের ফলে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তবে সেশনজট এড়াতে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় অতিদ্রুত পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশের এক দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের নিজেদের গলায় রশি ঝুলিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ করে বলেন, “নানা অব্যবস্থাপনার কারণে রামেবির আওতায় নার্সিং ইন্সটিটিউট শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা পেছানো হচ্ছে।”

একপর্যায়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য দপ্তর বন্ধ ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বলেন, “যে ভার্সিটি কোনো কাজের না, সেটা খোলা রাখার দরকার নাই। এখানে এসে দেখছি সব কর্মকর্তা-কর্মচারী পালিয়েছে। বুধবার আমাদেরকে জেলা প্রশাসকের অফিসে নিয়ে গিয়ে অভিনয় করেছে। তারা মুনাফিকি করেছে, তাদের কথা তারা রাখেনি। পরীক্ষা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পালিয়েছে, তারা বাইরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে মিটিং করছে, ষড়যন্ত্র করছে। তারাই সেশনজট ও পরীক্ষা বানচাল করেছে। তারা অফিসে না আসলে তাদের রাখার দরকার নেই। নতুন নিয়োগ দেওয়া হোক।”

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা বাসায় জীবিত অবস্থায় চেহারা দেখাতে পারব না। হয় আমাদের দাবি মেনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে, অন্যথায় আমাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বাসায় মরদেহ পাঠাতে হবে।”

এ সময় শিক্ষার্থীরা একাধিক দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- স্থগিত হওয়া ২০১৯-২০ সেশনের বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে যেকোনো কর্মকর্তাকে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য নির্বাহী দায়িত্ব প্রদান; পরীক্ষা কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করা; আগামী ১ অক্টোবর থেকে শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শুরু নিশ্চিত করা; বেসরকারি কলেজসমূহে পরীক্ষার ফরম ফিলাপের অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ বন্ধ করা; রামেবিতে পরীক্ষার রেজাল্ট চ্যালেঞ্জের ফি প্রতি সাবজেক্ট ৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা এবং রাজশাহীতে অবস্থিত বেসরকারি নার্সিং কলেজের বিএসসি শিক্ষার্থীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা।

কর্মসূচি থেকে সেশনজট সৃষ্টি এবং পরীক্ষা বানচালের ষড়যন্ত্রকারী উল্লেখ করে রামেবির ১২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রায়হান আলী বলেন, “রামেবি অধিভুক্ত ২৩ নার্সিং কলেজের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী বৈষম্যের শিকার। রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে আমরা রাজশাহী এসে আন্দোলন করছি। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা বাসায় ফিরব না। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চলবে। অন্যথায় ফাঁসি দিয়ে লাশ বাসায় পাঠাতে হবে।”

পরবর্তীতে দুপুর দেড়টার দিকে ফাঁসির রশি গলায় ঝুলিয়েই মিছিল নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের কাছে গিয়ে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বিভাগীয় কমিশনার শিক্ষার্থীদের বলেন, “তোমাদের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। কাউকে পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা কথা বলব।”

তাৎক্ষণিকভাবে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন ও আইসিটি) মোহাম্মদ কবির উদ্দিনকে বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দেন ড. হুমায়ুন কবীর। এরপর বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা এদিনের মতো কর্মসূচি শেষ করেন।

এর আগে বুধবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় খড়কুটো জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতেও দেখা যায় তাদের। পরে রামেবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও কলেজ পরিদর্শককে অবরুদ্ধ করা হয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: