কলকাতা ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ : অত্যাচারের বিবরণ দিলেন বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা ৩ অগস্ট মাস থেকেই অশান্ত পরিস্থিতি বাংলাদেশে। যদিও নিজের দেশে প্রবেশের অধিকার নেই, তবুও সমানে প্রতিবাদে গলা তুলছেন তসলিমা নাসরিন। এবার তাঁর স্মৃতিচারণায় উঠে এল তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপরে হওয়া পার আর্মির অত্যাচার। বহুদিন হল বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন না তিনি। তবে নিজের জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা আর টান বর্তমান। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্রমাগত দেশের পরিস্থিতি নিয়ে পোস্ট করে চলেছেন বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে বলে, একাধিক পোস্টে দাবি করেছেন তিনি। এমনকী, সেই অত্যাচারের ছবি-ভিডিয়োও এনেছেন সামনে। দেশের অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া ভারত বিদ্বেষ, পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে তৈরি হওয়া সুসম্পর্ক, নানা জিনিস উঠে এসেছে তাঁর ফেসবুক ওয়ালে। এবার স্মৃতিচারণ করলেন ৭১-এর ঘটনা নিয়ে। লিখলেন, ‘১৯৭১ সালে আমি নিতান্তই শিশু। ওই বয়সেই গোটা একটা যুদ্ধের বোঝা কাঁধে নিয়ে চলতে হয়েছে, দেখতে হয়েছে মানুষের লাশ, দেখতে হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়ে যাওয়া। শহরে নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে অচেনা মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিতে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে গিয়েছি। ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চলেছে আমাদের কালো মোষের গাড়ি, সেই গাড়ির ভেতরে ভয়ে কেঁপে কেঁপে পার করেছি সারা সারা রাত। কত কত দিন ঘুমোবার ভালো বিছানা পাইনি, ভরপেট খেতে পাইনি। এভাবে ন'মাস কেটেছে। শহরের বাড়ি লুঠ করেছে পাকিস্তানি আর্মি, বাবাকে মেরে আধমরা করে গেটের কাছে ফেলে রেখে গেছে। বিছানায় শোয়া আমার ওপর টর্চ ধরে রেখেছিল আর্মি। ওই শিশু বয়সেই গভীর ঘুমের অভিনয় করে পড়ে থাকতে হয়েছিল। বুক কাঁপছিল, এই বুঝি মেরে ফেলবে, এই বুঝি তুলে নিয়ে যাবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও আমাদের দুশ্চিন্তা যায়নি, কারণ মামা তখনও মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফেরেনি। গোলাগুলির মধ্যে, ভয়ের মধ্যে, লাশের মধ্যে, নৃশংসতার মধ্যে কাটানো শিশুর শৈশব থাকে না।’ আসলে তসলিমার এই স্মৃতিচারণের কারণ হল, বাংলাদেশে তৈরি হওয়া ‘অস্থির পরিস্থিতি’। আর এই ঘটনাগুলি যে তাঁকে কতটা আঘাত করছে, তা তাঁর সোশ্যাল পোস্ট থেকেই স্পষ্ট। তাই তো ভারতে বসেও, সেদেশের মানুষদের জন্য মন কাঁদছে তাঁর। তিনি লিখেছেন, ‘৫৩ বছর পার হয়েছে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কোনওদিন কল্পনাও করিনি, এই দেশ একদিন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের হাতে চলে যাবে। যে রাজাকাররা ছিল পাকিস্তানি আর্মির সহযোগী, যারা বাড়ি দেখিয়ে দিয়েছে লুঠ করার জন্য, মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে খুন করার জন্য, তরুণী দেখিয়ে দিয়েছে ধর্ষণ করার জন্য। কল্পনাও করিনি এই কুলাঙ্গারগুলোর হাতে, অথবা এই কুলাঙ্গারগুলোর সমর্থকদের হাতে একদিন দেশ চলে যাবে। একদিন আমরা পরাধীন হয়ে পড়বো নিজের স্বাধীন দেশে। একদিন দেখবো ক্ষুদে কুলাঙ্গাররা দল বেঁধে ধেয়ে আসছে আমাদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলতে, আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে। ধেয়ে আসছে আমাদের প্রাণের সংগীত, আমাদের প্রাণের পতাকা ছিনিয়ে নিয়ে পায়ে পিষতে।’ প্রসঙ্গত বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অগস্ট মাস থেকেই। হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আর অভিযোগ, সেই আন্দোলনেই ছাত্রদের উপর গুলি চালায় সেই দেশের পুলিশ। অনেক তরুণ প্রাণ অকালে প্রাণ হারায়। তারপরই সাধারণ মানুষরা সকলে নামেন পথে। অবস্থা এমন হয় যে হাসিনা পদত্যাগ দিয়ে পালিয়ে আসেন ভারতে। আপাতত বাংলাদেশের দায়িত্ব মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে। কিন্তু পরিস্থিতি খুব একটা শুধরোয়নি। তসলিমা তাঁর এই পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘দেশটা যে আবার পরাধীন হয়ে গেল। এই পরাধীনতার দায় আমি দিতে চাই দেশের প্রতিটি শাসককে। মুজিব, জিয়া , এরশাদ, খালেদা, হাসিনা ---- সকলেই হয় রাজাকারদের ক্ষমা করেছে, নয় রাজনীতিতে এনেছে, নয় মসনদে বসিয়েছে। শুধু কোনও শাসকই গণতন্ত্র চায়নি, সবাই আমৃত্যু গদিতে বসে আরাম করতে চেয়েছে। কোনও শাসকই দেশের ভালো নিয়ে ভাবেনি, সকলেই নিজের ভাল ভেবেছে। আজ তাই দেশকে ধ্বংস করার কুলাঙ্গারে দেশ ছেয়ে গেছে।’
HTB
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: