
জেলার মাঠগুলোতে এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে মশুর ক্ষেত। ধান, পাট, তামাক চাষাবাদে খরচ না ওঠার কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর পর মেহেরপুরে রবিশস্যের চাষ বেড়ে গেছে।
এরমধ্যে মশুর অন্যতম। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে মশুর চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হবে কৃষক।
চাষাবাদের জমি কমলেও ১৫ বছর পর মেহেরপুরে মশুরের চাষ বেড়েছে। স্বাধীনতা পূর্ব এবং পরবর্তী ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত মেহেরপুরে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে মশুরের চাষ হয়েছে।
পরবর্তীতে কমতে কমতে ২০১০ সালে এসে ৩ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে নেমে আসে। ২০১৬ সালে মশুর চাষ ফের বেড়ে যায়। মশুরের দামবৃদ্ধিতে মশুর চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং ১২ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে মশুরের চাষ থেকে উৎপাদন হয় ১৮ হাজার ২১৭ মেট্রিক টন।
জেলার ৩ হাজার মেট্রিক টন চাহিদা মিটিয়ে ১৫ হাজার টন মশুর জাতীয় খাদ্য ভা-ারে যোগ হয়। যা দেশের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০১৭ সালেও মশুর চাষ হয় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার মশুর চাষ হয়েছে ১০ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে।
উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আছে সাড়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টনের। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের ডালের চাহিদা মেটাতে অবদান রাখবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
মেরেহপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদহ, ধর্মচাকি, হিন্দা গ্রাম ছিল তামাক চাষের গ্রাম। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ওইসব গ্রামে এ বছর চিত্র পাল্টে গেছে। এবার মাঠের পর মাঠ জুড়ে মশুর চাষ হয়েছে। জেলার অন্যান্য বিভিন্ন গ্রামের মাঠেও দেখা যায় এবার মাঠের পর মাঠ জুড়ে মশুরের ক্ষেত।
গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের কৃষক জাহিদুল হাসান জানান, তিনি ৭ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করতেন। তামাক চাষে খরচ এবং পরিশ্রম বেশি। তারপরেও তামাকের রং ও ওজন না হলে লোকসানের সম্মুখীন হতে হত। তাই তিনি এবার ৭ বিঘা জমিতেই মশুর চাষ করেছেন।
ফলন ভালো হলে খরচ বাদে এবার তিনি ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মশুর বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
একই গ্রামের মশুর চাষি শমসের আলী জানান, তিনি অনেক বছর পর এবার দুই বিঘা জমিতে মশুর বুনেছেন। আশা করছেন ১৭/১৮ মণ মশুর উৎপাদন হবে। তিনি আরও জানান, ধান পাট আবাদ করতে সঠিক সময়ে সেচ, সার দিতে না পারলে ফলন ভালো হয় না।
কিন্তু মশুর বপনের পর তেমন সেচ ও সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া মশুর চাষে তেমন একটা তেমন একটা খরচ নেই। একবিঘা জমিতে মশুর চাষে সর্বোচ্চ খরচ ৪ হাজার টাকা।
অথচ বিঘাতে ৮ মণ মশুর উৎপাদন হলে ২৫/২৬ হাজার টাকার মশুর উৎপাদন হয়। তাছাড়া মশুরের ভূষি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তোলা যায়।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান জানান, সেচ, সার, পরিশ্রম অনেক কম হওয়ার কারণেই মানুষ রবিশস্য চাষে ফিরে যাচ্ছে।
বর্তমানে মশুরের দাম অনেক। বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে মশুর ডাল জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।-খবর বাসসের
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: