ঢাকা | শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

জাতিসংঘের দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ 

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৩৮

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৩৮

ন্ডের ব্যাংককে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (ইউএনইএসসিএপি)-এর ৮১তম অধিবেশনে বাংলাদেশ একটি তাৎপর্যপূর্ণ কূটনৈতিক জয়লাভ করেছে।

আঞ্চলিক সহযোগিতায় ক্রমবর্ধমান নেতৃত্ব প্রদর্শন করে বাংলাদেশ ইউএনইএসসিএপি’র অধীনে মর্যাদাবান দুটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কাউন্সিলের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেছে।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়ে।

বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেনিং সেন্টার অন আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট (এপিসিআইসিটি) এবং এশিয়া-প্যাসিফিক সেন্টার ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব ডিজাস্টার ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট (এপিডিআইএম)-এর গভর্নিং কাউন্সিলে তিন বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

উদ্বোধনী অধিবেশনে জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল এবং ইএসসিএপি‘র নির্বাহী সচিব আর্মিদা সালসিয়াহ আলিশাবানা, থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বক্তব্য দেন।

নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৮১তম অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ভিডিও ভাষণ প্রচার করা হয়। এ ভাষণে তিনি সকল ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণের নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন বিশ্ব গড়ার আহ্বান জানান।

তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

গুরুত্বপূর্ণ এই অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তার সঙ্গে রয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটিডি) সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীল এবং টেকসই নগর উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা’ শীর্ষক অধিবেশনে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর আরও জোর দিয়েছে। বিশেষ করে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী টেকসই উন্নয়নের ওপর ডিসকোর্স তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উল্লেখযোগ্যহারে প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধি, গবেষণা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং স্মার্ট, সবুজ ও স্থিতিশীল নগরায়ণ প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ইএসসিএপি এবং এর সদস্য দেশগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।

অধিবেশনে শীষ হায়দার চৌধুরী তার বক্তব্যে জাতি ও অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারগুলোর ওপর জোর দেন। তিনি স্থিতিশীল ও টেকসই নগর উন্নয়ন অর্জনের জন্য আন্তঃসীমান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বহুমুখী পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলবায়ু অর্থায়নে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং আন্তঃসীমান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তঃসীমান্ত সমাধানের প্রসার ঘটানোর গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, ‘তিনটি শূন্যের মাধ্যমে টেকসই নগরায়ণকে কেন্দ্র করে একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও এগিয়ে নিয়েছে।

শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, এই উদ্যোগটি নগর উন্নয়নের একটি উদ্ভাবনী মডেলকে প্রচার করে, যা দৃঢ়ভাবে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই মডেল অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘এ ওয়ার্ল্ড অব থ্রি জিরোস: দ্য নিউ ইকোনমিক্স অব জিরো  পোভার্টি, জিরো আনএমপ্লয়মেন্ট, জিরো নেট কার্বন এমিশনস’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা তুলে ধরেছে।

‘তিন শূন্য’ বিষয়ক অধিবেশনের আলোচনায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণের এজেন্ডা এগিয়ে নিতে আঞ্চলিক অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য অর্জনে উন্নত নগর রূপান্তর অভিযাত্রায় প্রাণবন্ত জ্ঞান বিনিময়, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কারিগরি সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

নির্বাচন ও বিষয়ভিত্তিক অধিবেশনের বাইরে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ইউএনইএসসিএপি’র নির্বাহী সচিবের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করে।

বৈঠকে আইসিটি উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আঞ্চলিক সক্ষমতা জোরদার করার ওপর আলোচনা করা হয়।

তাৎপর্যপূর্ণ এই দুটি নির্বাচনী বিজয় বাংলাদেশের প্রাগ্রসর নীতি এবং এই অঞ্চলের মধ্যে এর প্রভাবশালী নেতৃত্বের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান আস্থার প্রতিফলন।

দুটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কাউন্সিলের নির্বাচনে মূল্যবান সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ সকল সদস্য রাষ্ট্র এবং গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ইউএনইএসসিএপি’র নির্বাহী সচিবের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: