
গত কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তান ও ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক সংঘর্ষের দুই সপ্তাহ পর সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর ধ্বংসস্তূপে অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছে সাফাই দলগুলো, যাতে করে বাসিন্দারা নিরাপদে ঘরবাড়ি পুনর্গঠন করতে পারেন।
পাকিস্তানের নীলম উপত্যকা থেকে এএফপি জানায়, চার দিনব্যাপী ওই সংঘাতে প্রায় ৭০ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই পাকিস্তানের নাগরিক। কাশ্মীর ঘিরে শুরু হওয়া এই সংঘাত সীমান্ত ছাড়িয়ে অন্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এর আগে তিনটি বড় যুদ্ধ করেছে পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী।
ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান ও কামান হামলা চালিয়ে পাল্টাপাল্টি আক্রমণের মাধ্যমে সংঘাত দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে। তবে হঠাৎ করে সংঘর্ষ বন্ধ হয় যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি অপ্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যা এখনও কার্যকর রয়েছে।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অঞ্চলে ৫০০টি ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু নীলম উপত্যকাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০টি ভবন, যেখানে দুইজন নিহত হন।
স্থানীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরান বলেন, "মাটির নিচে এখনও অবিস্ফোরিত শেল থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।" তিনি সীমান্তবর্তী এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কারের কাজে সহায়তা করছেন।
এর আগেও ২০২১ ও ২০২২ সালে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পুরনো সংঘাতের গোলাবারুদের কারণে বেশ কয়েকজন শিশু নিহত হয়।
‘আমরা সাহসী’
উপত্যকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জুবায়ের মাইন ডিটেক্টরের পেছনে পেছনে হাঁটছিলেন একটি শ্রেণিকক্ষে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা হোয়াইটবোর্ডে লেখা রয়েছে ইংরেজিতে— 'উই আর ব্রেভ।'
তিনি বলেন, 'যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে বটে, তবে মানুষের মনে এখনও অনেক ভয় ও উৎকণ্ঠা রয়ে গেছে।'
'শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরে আসতে বললেও তারা আসছে না।'
বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ বলেন, 'ভারতের গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক লাইন সারাতে আমি দিনরাত কাজ করছি।'
গত কয়েক বছরে নীলম উপত্যকায় সড়ক উন্নয়নের ফলে পর্যটনখাতে কিছুটা বিকাশ ঘটে। হিমালয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন।
সোমবার হোটেলগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হলেও পর্যটকের দেখা মেলেনি, যদিও এখন পর্যটনের মৌসুম।
৭৬ বছর বয়সী আলিফ জান, যিনি আগেও বহুবার দুই দেশের সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়েছেন, সর্বশেষ সংঘাতের সময় নিজের নাতিনাতনিদের সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে সরিয়ে নিয়েছেন, এখনও তাদের ফিরিয়ে আনেননি।
তিনি বলেন, 'সেই সময়টা ছিল খুবই কঠিন—মনে হচ্ছিল কেয়ামত এসে গেছে।'
নাতিনাতনিদের তিনি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রধান শহর মুজাফফরাবাদে, যা সাধারণত নিরাপদ বলে বিবেচিত, কিন্তু এবার সেখানে ভারতীয় বিমান হামলা হয়েছিল।
ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায়
আলিফ জান চান, আগে নিশ্চিত হোন যুদ্ধ আর শুরু হবে না এবং নিজের পরিবারের খাদ্যের নিশ্চয়তা পান, তারপর সন্তানদের ফিরিয়ে আনবেন।
একটি স্কুল মাঠে তিনি একটি স্থানীয় এনজিও থেকে ২০ কেজি আটা, একটি তেলের ক্যান ও কিছু ওষুধ সংগ্রহ করছিলেন।
সহস্রাধিক পরিবার এখনও পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায়।
স্থানীয় একটি সাহায্য সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফাওয়াদ আসলাম বলেন, 'আমরা ৫,০০০টি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করেছি।'
'প্রথমে আমরা তাদের সহায়তা করছি যাদের ঘরবাড়ি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারপর আসছি তাদের দিকে, যারা বাস্তুচ্যুত হয়ে এখন ক্যাম্পে বা অস্থায়ী আশ্রয়ে আছেন।'
২৫ বছর বয়সী নুমান বাট, যিনি এই সংঘাতে তার ভাইকে হারিয়েছেন, বললেন, এই মানবিক সহায়তা তার জন্য কোনো সান্ত্বনা নয়।
তিনি বলেন, 'এই সংঘাত বারবার আমাদের ওপর এসে পড়ে; এই নিপীড়ন চলছেই।'
'শান্তি হয়েছে—এটা ভালো কথা। কিন্তু আমি যে ভাইকে হারিয়েছি, সে তো আর ফিরে আসবে না।'
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: