
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠু সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে আয়োজনের লক্ষ্যে ৩৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
শনিবার ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড জানায়, চলতি বছরে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫-এর সকল পরীক্ষার্থী (নিয়মিত, অনিয়মিত, মানোন্নয়ন) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ২০২৫ সালের পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সকল বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে অংশগ্রহণ করবে। পরীক্ষা সকাল ১০টা এবং বিকেল ২টা হতে শুরু হবে। পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩ (তিন) দিন পূর্বে ট্রেজারিতে ট্রাংকে রক্ষিত প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের সাথে প্রশ্নপত্রের বিবরণী তালিকা সঠিকভাবে যাচাই করতে হবে। প্রশ্নপত্রের প্যাকেট যাচাইকালে সংশ্লিষ্ট ট্রেজারি অফিসার, কেন্দ্র সচিব এবং পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন।
‘প্রশ্নপত্রের ২ সেট করে সৃজনশীল (সিকিউ) এবং বহুনির্বাচনি (এমসিকিউ) সেট পরীক্ষার তারিখ অনুসারে সেট ভিত্তিক আলাদা করে সিকিউরিটি খামে প্যাকেট করতে হবে। প্রশ্নপত্রের প্যাকেট যাচাইয়ের দিনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তারিখ ভিত্তিক প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সাজিয়ে সিকিউরিটি খামের গাম লাগিয়ে এবং কার্টুন টেপে যথাযথভাবে মুড়িয়ে নিতে হবে এবং সিকিউরিটি খামের ওপর পরীক্ষার তারিখ, বিষয় কোড ও সেট কোড অবশ্যই লিখতে হবে। এই বিষয়ে কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা কেন্দ্র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা বলে গণ্য হবে। কোনো অবস্থাতেই উপজেলা সদরের বাহিরে প্রশ্নপত্রের ট্রাংক রাখা যাবে না।’
এতে বলা হয়েছে, ‘ট্রেজারি হতে পরীক্ষার দিনগুলোতে ট্রেজারি অফিসারের নিকট হতে ঐ দিনের প্রশ্নপত্রের সিকিউরিটি (সৃজনশীল সিকিউ) ২ সেট এবং বহুনির্বাচনি (এমসিকিউ) ১ সেট গ্রহণ করতে হবে। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে থানা/ ট্রেজারি হতে ট্যাগ অফিসার এবং পুলিশ পাহারাসহ প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সিকিউরিটি কেন্দ্রে আনতে হবে। পরীক্ষার দিন সকালে প্রাপ্ত এসএমএস মোতাবেক প্রশ্নের সেট ব্যবহার করতে হবে এবং এসএমএস পাওয়ার পর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে। অব্যবহৃত সেটের প্রশ্নপত্রের খাম অক্ষত অবস্থায় বোর্ডে জমা দিতে হবে। পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডে উল্লিখিত বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যতীত অন্য কেউ মোবাইল ফোন/ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। শুধু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছবি তোলা যায় না এমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।’
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, প্রতি ২০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য ১ জন কক্ষ পরিদর্শক পরীক্ষা কক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন এবং প্রতিটি কক্ষে কমপক্ষে ২জন করে দায়িত্ব পালন করবেন। কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষার্থীর আসন ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কক্ষে অবশ্যই প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উক্ত সময়ের পর কোনো পরীক্ষার্থী আসলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশেষ বিবেচনায় রেজিস্ট্রার খাতায় রোল নং ও অন্যান্য তথ্য লিপিবদ্ধ করে কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারবেন। পরীক্ষা শেষে বোর্ডে রেজিস্ট্রার খাতাটি জমা দিতে হবে। পরীক্ষা শুরুর পূর্বে পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক বা অন্য কেউ যাতে জটলা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রয়োজনে হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করতে হবে, সম্ভব হলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। বোর্ড থেকে সরবরাহকৃত নকল প্রতিরোধমূলক পোস্টার পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশ পথের দৃশ্যমান স্থানে লাগাতে হবে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার কেন্দ্রের আওতাভুক্ত কলেজের প্রবেশপত্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে গ্রহণ করবেন এবং দ্রুততম সময়ে প্রবেশপত্র প্রতিটি কলেজ প্রধানের কাছে হস্তান্তর নিশ্চিত করবেন।
বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, পরীক্ষার প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে যথাসময়ে সরবরাহ করা হয়েছে। বোর্ড থেকে উত্তরপত্র এবং ওএমআর শিট সংগ্রহের পর তা যাচাই করে ত্রুটিপূর্ণ/ব্যবহারের অনুপযোগী উত্তরপত্র এবং ওএমআর শিট পৃথক করতে হবে এবং তা পরবর্তীতে বোর্ডে ফেরত দিতে হবে। প্রতিটি ব্যবহৃত খাতা থেকে ওএমআর টপ শিট বিচ্ছিন্ন করে বোর্ডে পাঠানোর বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত করবেন। পরীক্ষার দিন প্রশ্নপত্র গ্রহণ, পরিবহন ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে প্যাকেট খোলাসহ সকল কাজের সাথে ট্যাগ অফিসারের সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে। ট্যাগ অফিসারের যাতায়াত ও সম্মানির ব্যবস্থা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেন্দ্র ফি থেকে নির্বাহ করবেন। পরীক্ষার্থীর হাজিরা শিটে উপস্থিতির স্বাক্ষর নিতে হবে। কোনো পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে নির্দিষ্ট তারিখ ও বিষয় লাল কালি দিয়ে অনুপস্থিত লিখে দিতে হবে। নির্দিষ্ট তারিখে পরীক্ষার সময়সূচি মোতাবেক পরীক্ষা নিতে হবে। উত্তরপত্রের প্যাকেট বোর্ডের পরীক্ষা শাখার স্ক্রিপ্ট রুমে বস্তায় সিলগালাকৃত অবস্থায় পৌঁছাতে হবে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র পরিবহন কাজে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে। সিলেবাস অনুসারে ৫০টি করে উত্তরপত্র করোগেটেট শিটে প্যাকেট করতে হবে। উত্তরপত্রের প্যাকেটের গায়ে কোনো চিহ্ন বা অতিরিক্ত কিছু লেখা থাকলে তার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন। প্রতিটি বিষয়ের উত্তরপত্রের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেট করতে হবে। ইংরেজি ভার্সনের পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিতে হবে। ইংরেজি ভার্সনের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রের প্যাকেট আলাদা হবে। পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্রে কোনো ত্রুটি থাকলে তা অবশ্যই প্রবেশপত্র গ্রহণের ৪ কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখা হতে সংশোধন করতে হবে। পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্র/ভেন্যু কেন্দ্রের ক্লাস শুধু পরীক্ষার দিন বন্ধ রাখতে হবে। অন্যান্য দিন নিয়মিত ক্লাস নেওয়া যাবে। এমসিকিউ পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সিকিউ পরীক্ষার প্রশ্ন পরীক্ষার্থীদের দিতে হবে। কোনোক্রমেই এমসিকিউ শিট ফেরত নেওয়ার পর সিকিউ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা যাবে না। পরীক্ষার হলে শুধু মাত্র এনালগ কাঁটাযুক্ত ঘড়ি ব্যবহার করা যাবে। এইচএসসি পরীক্ষা-২০২৫ বর্ষাকালে অনুষ্ঠিত হবে বিধায় বর্ষার সময় কেন্দ্রের কক্ষে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে কক্ষ অন্ধকার হয়ে যায়। তাই পরীক্ষার কেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসকে চিঠি দিয়ে অবহিত করবেন এবং অনলাইনে এ তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘এছাড়া উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা ২০২৫ এর নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য অনুরোধ করা হল।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: