
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ জোরদার এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে মত দিয়েছেন স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে মানুয়েল আলবারেস।
মাদ্রিদ থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
রোববার ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গাজায় চলমান সামরিক অভিযান তীব্র হওয়ার বিরুদ্ধে ইসরাইলের দীর্ঘদিনের মিত্ররাও সেখানে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে।
বৈঠেেক স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ থামাতে এখনই তেল আবিবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বিবেচনার সময় এসেছে।
গত দুই মাস ধরে চলা ইসরাইলি ত্রাণ অবরোধে গাজায় খাবার, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের সংকট তীব্র হয়েছে। দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও দিন দিন বাড়ছে।
মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, ইসরাইল যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
আলবারেস আরো বলেন, ‘এখন নীরবতা মানেই হত্যাযজ্ঞে মদদ দেওয়া, সে কারণেই এই বৈঠক’।
বৈঠকে ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি ও ইতালিসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর পাশাপাশি মিসর, জর্ডান, সৌদি আরব, তুরস্ক, মরক্কো, আরব লীগ এবং ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
স্পেনের মতোই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া নরওয়ে, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও ব্রাজিলের প্রতিনিধিরাও বৈঠকে অংশ নেন।
এর আগে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজার যুদ্ধ ‘অমানবিক’ ও ‘অযৌক্তিক’।
তিনি বলেন, ‘গাজায় শর্তহীন ও সীমাহীনভাবে এবং ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ত্রাণ প্রবেশ করতে দিতে হবে।’
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তার দেশ এই চুক্তির “তাৎক্ষণিক স্থগিতাদেশ” চাইবে।
আলবারেস আরো জানান, স্পেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞাও চাইবে।
বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আরব দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল বারো। এসময় তিনি যুদ্ধবিরতি, ত্রাণ প্রবেশ ও হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে সমন্বিত চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান।
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, বারো আগামী সপ্তাহে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভারসেন আগাবেকিয়ান শাহিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ফ্রান্স ও সৌদি আরবের সভাপতিত্বে আগামী মাসে হতে যাওয়া ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ বিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলনের আগে এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ঘোষণা দেন, তার দেশ জাতিসংঘে এমন খসড়া প্রস্তাবগুলোর পক্ষে দাঁড়াবে যা গাজার ত্রাণ সরবরাহ দ্রুততর করার পাশাপাশি ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক মানবিক দায়বদ্ধতার জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে।
গত বছর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে কিছু ইউরোপীয় মিত্রদের বিরাগভাজন হওয়া স্পেন এবার গাজা ইস্যুতে আরো বড় ধরণের আন্তর্জাতিক ঐক্য গড়ে তুলতে চায়।
দু’মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের অভিযান শুরু করে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানায়, নতুন করে হামলা শুরুর পর এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩ হাজার ৭৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৯০১ জনে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপি’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ি, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলায় ১,২১৮ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।
সেসময় হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে ৫৭ জন এখনও গাজায় বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আর ৩৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: