ঢাকা | শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইসরাইলি হামলা ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ : ইরান

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৫ ২৩:৫৯

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৫ ২৩:৫৯

ইরান শুক্রবার ইসরাইলের বিমান হামলাকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানকে সতর্ক করে বলেছেন, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চুক্তি না করলে আরও ‘নিষ্ঠুর হামলা’ আসবে।


ইসরাইল দাবি করেছে, তাদের বিমান হামলায় বিপ্লবী গার্ডের বিমানবাহিনীর শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১০০টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনাও রয়েছে।

তেহরান থেকে এএফপি জানায়, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এই হামলার জন্য ইসরাইলকে ‘তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক’ পরিণতি ভোগ করতে হবে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এই হামলাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ বলে অভিহিত করেছেন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, ইরান প্রায় ১০০টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছিল, যার বেশির ভাগই তাদের ভূখণ্ডে পৌঁছার আগেই প্রতিহত করা হয়। এদিকে, প্রতিবেশী জর্দান বলেছে, তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে।

ইসরাইলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে চালানো প্রাণঘাতী হামলার পর ট্রাম্প বলেন, ইরান যদি সমঝোতায় না আসে, তাহলে ‘আরও মৃত্যু ও ধ্বংস’ নেমে আসবে।

যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়ে বলেছে, তারা এই হামলায় জড়িত নয়। তবে তারা ইরানকে সতর্ক করেছে,  যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বা কর্মীদের ওপর আঘাত এলে তেহরানকে দায় নিতে হবে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামলায় ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির ‘মূলে’ আঘাত হানা হয়েছে, লক্ষ্য করা হয়েছে বিজ্ঞানী ও নাতাঞ্জের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাটি।

তিনি বলেন, এই হামলা ‘যতদিন প্রয়োজন চলবে’। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলছে, গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’-এর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।

ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাকেরি ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন।

খামেনেয়ী দ্রুত নতুন কমান্ডার নিয়োগ দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সর্বোচ্চ নেতার একজন উপদেষ্টাও আহত হয়েছেন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিমান শাখার নেতৃত্ব একটি ভূগর্ভস্থ ঘাঁটিতে ইসরাইলে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, আর তাদের অনেকেই এই হামলায় নিহত হয়েছেন।

ইরান নিশ্চিত করেছে, গার্ড বাহিনীর বিমান শাখার প্রধান নিহত হয়েছেন, আরও কয়েকজন ‘সাহসী ও নিষ্ঠাবান যোদ্ধা’ও প্রাণ হারিয়েছেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, শীর্ষ নেতাদের ‘সুনির্দিষ্টভাবে টার্গেট করে’ হত্যা করে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে: যারা ইসরাইল ধ্বংসে কাজ করে, তারা নিশ্চিহ্ন হবে।

তেহরানের একটি আবাসিক ভবনের পাশে বিশাল গর্তের ছবি প্রকাশ করেছে এএফপি, যা ছিল একটি টার্গেটেড স্ট্রাইক। রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে, হামলায় নারী ও শিশুসহ বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছে। জরুরি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্তত ৯৫ জন আহত হয়েছেন।

তাসনিম সংবাদ সংস্থা বলেছে, নিহতদের মধ্যে ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও রয়েছেন।

তেহরানের রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা, তবে পেট্রোল পাম্পগুলোতে লম্বা সারি দেখা গেছে— সংকটের সময়ের পরিচিত দৃশ্য।

৬২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত আহমাদ মোয়াদি বলেন, ‘আর কতদিন আমরা এই আতঙ্কে বাঁচব? একজন ইরানি হিসেবে আমি মনে করি, এ হামলার জবাবে প্রচণ্ড প্রতিশোধ হওয়া উচিত।’

তেহরানের প্রধান বিমানবন্দর ইমাম খোমেনি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ইরাক, জর্দান ও সিরিয়াও তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।

ইসরাইল জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। পরে জর্দান জানায়, তাদের বিমান ও প্রতিরক্ষা বাহিনী একাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে।

ইরানি সেনাবাহিনী বলেছে, ‘এই অপরাধের জবাবে কোনো সীমা থাকবে না।’ তারা অভিযোগ করেছে, ইসরাইল ‘সব রকম লাল রেখা অতিক্রম করেছে’।

এই হামলার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে, আর শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। ট্রাম্পও আগে বলেছিলেন, এ অঞ্চলে একটি ‘মহাযুদ্ধ’ শুরুর আশঙ্কা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কর্মীসংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে, কারণ ইরান আগেই হুমকি দিয়েছিল— যুদ্ধ শুরু হলে তারা মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করবে।

ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তি ‘প্রায় কাছাকাছি’, তবে ইসরাইলের এই আক্রমণ চুক্তির সম্ভাবনা ধ্বংস করতে পারে।

তিনি জানান, নেতানিয়াহুর সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, তা প্রকাশ করতে চান না। তবে বলেন: ‘আমি চাই না তারা ঢুকে যাক, কারণ এটা পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দিতে পারে।’

তিনি যোগ করেন: ‘হয়তো এটা কাজে দেবে, আবার ধ্বংসও করতে পারে।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইরানকে সতর্ক করেছেন, তারা যেন মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা না চালায়। ওয়াশিংটন এই হামলায় জড়িত নয় বলেও তিনি বলেন।

রোববার ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা এখন অনিশ্চিত। তবে ট্রাম্প বলেন, তারা এখনও ‘আলোচনায় ফিরতে’ আগ্রহী।

ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তু ছিল নাতাঞ্জের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ নিশ্চিত করেছে, তারা পরিস্থিতি ‘ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে।

তবে ইরানি পরমাণু সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি জানান, ‘বেশিরভাগ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ভূ-পৃষ্ঠে’ এবং ওই স্থাপনাটিতে ‘কোনো প্রাণহানি হয়নি’।

ইসরাইল ইরানকে অস্তিত্বগত হুমকি মনে করে। নেতানিয়াহু বলেছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর তারা আর সংযত থাকবে না।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সরকারগুলো বহুবার অভিযোগ করেছে— ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায়, যদিও তেহরান তা অস্বীকার করে এসেছে।

বৃহস্পতিবার আইএইএ ইরানের বিরুদ্ধে বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুললে ইসরাইল আবারও বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান জানায়।

ইরানের পারমাণবিক প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি এ প্রস্তাবকে বলেছেন ‘চরমপন্থা’। তেহরান জানিয়েছে, তারা নিরাপদ স্থানে একটি নতুন সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র চালু করবে।

ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে— যা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত ৩.৬৭ শতাংশের অনেক বেশি, কিন্তু ৯০ শতাংশের নিচে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: