odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২
নতুন মেরুকরণের সূচনা

ঐতিহাসিক উচ্চতায় চীন-রাশিয়ার সম্পর্ক: বেইজিংয়ে শি-পুতিন বৈঠক

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:১৩

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:১৩

বেইজিংয়ে চীন-রাশিয়ার শীর্ষ বৈঠক শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বৈঠকের প্রথম দিনেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দেশের সম্পর্ককে অতুলনীয় উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও বলেন, চীন-রাশিয়ার বন্ধুত্ব আন্তর্জাতিক চাপ ও পরিবর্তনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে গ্রেট হল অব দ্য পিপল ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই নেতা একে অপরকে “প্রিয় বন্ধু” বলে সম্বোধন করেন। পুতিন বলেন- “আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাশিয়া-চীন সম্পর্কের কৌশলগত প্রকৃতি প্রতিফলিত করে, যা অভূতপূর্ব উচ্চতায় রয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা তখনও একসাথে ছিলাম, এখনো আছি।”

অন্যদিকে, শি জিনপিং মন্তব্য করেন- “চীন-রাশিয়ার সম্পর্ক আন্তর্জাতিক পরিবর্তনের পরীক্ষায় টিকে আছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করব একটি আরও ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিসঙ্গত বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা গড়তে।”

বেইজিং শহরের আকাশে যেন এক ভিন্ন আবহ। বুধবার (3 Sep 2025) চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং আয়োজন করতে যাচ্ছেন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনী নয়; এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের ৮০তম বার্ষিকীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তবে এর গভীরে রয়েছে আরেকটি উদ্দেশ্য—বিশ্বকে জানানো যে চীন আর কেবল অর্থনৈতিক দৈত্য নয়, বরং কূটনৈতিক ও সামরিক শক্তির মঞ্চেও তার অবস্থান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত।

এমন সময়েই বেইজিংয়ে বসেছে শি-পুতিন বৈঠক। ভেতরে ভেতরে যেন চলছিল এক ভিন্ন নাটক। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন, ইউক্রেন যুদ্ধকে তিনি ন্যায়সঙ্গত মনে করেন। পশ্চিমা দেশগুলোই, তার মতে, এই সংঘাতের আগুনে ঘি ঢালছে। অন্যদিকে শি জিনপিংও সমান তীক্ষ্ণ ভাষায় পশ্চিমের “বুলিং আচরণ” নিয়ে সমালোচনা করলেন, যা আসলে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যেই ছোড়া বার্তা। বৈশ্বিক বাণিজ্যে তখন বিরাজ করছে অস্থিরতা—ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি পৃথিবীজুড়ে অশান্তি ছড়িয়েছে। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে চীন চাইছে নিজেকে তুলে ধরতে এক নির্ভরযোগ্য, স্থিতিশীল বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৈঠককে সাধারণ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেখা যাবে না। এটি একটি কৌশলগত বার্তা, যেখানে শি ও পুতিন বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত এক বিকল্প ব্যবস্থার সম্ভাবনা। ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর সমস্ত পশ্চিমা প্রচেষ্টা যখন ভেস্তে গেছে, তখন এই বৈঠক যেন ঘোষণা করছে এক নতুন শক্তি-সমীকরণের জন্ম।

বেইজিংয়ের কুচকাওয়াজের পদধ্বনি আর শি-পুতিনের হাত মেলানো একসঙ্গে মিলেমিশে দিচ্ছে এক নতুন দৃশ্যপট। তা হলো—চীন ও রাশিয়া শুধু কৌশলগত মিত্র নয়, তারা একসঙ্গে বিশ্বরাজনীতিতে দাঁড়াচ্ছে এক বিকল্প শক্তির প্রতীক হয়ে। পশ্চিমা চাপ, যুদ্ধের ধোঁয়া আর বৈশ্বিক অস্থিরতার মাঝেও দুই দেশ এগোচ্ছে ঐক্যের নতুন উচ্চতায়, যার প্রভাব ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় দীর্ঘকাল প্রতিধ্বনিত হবে।

-বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: