নরসিংদী, ২১ নভেম্বর ২০২৫ (শুক্রবার)
সংক্ষেপে মূল ঘটনা
দেশে সাম্প্রতিক সময়ে অনুভূত সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতেই পাঁচজনের মৃত্যু ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। সানশেড ধস, দেয়াল চাপা, গাছ থেকে পড়ে যাওয়া ও আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই প্রাণহানি ঘটে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ১০০-এর বেশি মানুষ।
কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, সিভিল সার্জন সৈয়দ আমীরুল হক শামীম, নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও পলাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতেও মৃত্যুর কারণ জানা যায়।
বিস্তারিত ঘটনার বিবরণ
১. বাবা-ছেলের মৃত্যু—সানশেড ভেঙে মাথায় পড়ে
নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকায় ভূমিকম্পের সময় পাশের নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে ঘরের সানশেড ভেঙে দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল (৪০) ও তার ছেলে হাফেজ ওমরের (৮) মাথায় পড়ে।
- শিশুকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
- সন্ধ্যায় আইসিইউতে মারা যান বাবা দেলোয়ার।
- দেলোয়ারের দুই মেয়ে সদর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।
২. দেয়াল চাপা পড়ে মারা গেলেন ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ
পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়ার কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫) নিজ বাড়ির মাটির দেয়াল ধসে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
৩. গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু
শিবপুরে ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন ফোরকান মিয়া (৪৫)। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তিনি মারা যান।
৪. আতঙ্কে হৃদরোগে মৃত্যু
কাজীরচর নয়াপাড়ার নাসির উদ্দিন (৬৫) ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
আহত শতাধিক—বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা
- নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৩ জন
- জেলা হাসপাতালে ১০ জন
- পলাশসহ বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে ৫০+ জন
ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে পড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা ও বুকে ব্যথা নিয়ে অনেকে হাসপাতালে যান।
ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড—জাতীয় গ্রিডে বিঘ্ন
ভূমিকম্পের কারণে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনে আগুন লাগে।
- দুই ইউনিটের ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে
- আগুনে যন্ত্রাংশ পুড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়
- ইউরিয়া সার কারখানাও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় (মেশিন ভাইব্রেশনে বন্ধ হয়ে যায়)
বিভিন্ন ভবনে ফাটল—মাটি ফেটে চৌচির
- সার্কিট হাউসসহ বহু ভবনে ফাটল
- পলাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত
- এসএ প্লাজা, ঘোড়াশাল বাজারের ভবন, ব্যাংক ভবনের টাইলস ও দেয়াল ভেঙে পড়া
- ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্ম এলাকায় মাটি ফেটে চৌচির
- বাবুরহাটের একটি চারতলা ভবন হেলে পড়েছে
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, এবং ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: