নিউজ ডেস্ক │অধিকারপত্র
মানবদেহে প্রোটিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ২০টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের একটি হলো ট্রিপটোফ্যান যা আগে কোনো মহাজাগতিক বস্তুতে পাওয়া যায়নি। এবার সেই জটিল অ্যামাইনো অ্যাসিডের অস্তিত্ব পাওয়া গেল পৃথিবীর নিকটবর্তী গ্রহাণু বেণ্নু (Bennu) থেকে আনা নমুনায়। বিষয়টি বিজ্ঞানীদের মতে জীবনের উপাদান তৈরি হওয়ার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ ছিল না এ ধারণাকে আরও জোরালো করছে। ২০২০ সালে নাসার OSIRIS-REx মহাকাশযান বেণ্নুর পৃষ্ঠে অবতরণ করে প্রায় ১২১.৬ গ্রাম পাথর ও ধুলোর নমুনা সংগ্রহ করে। তিন বছর পর ২০২৩ সালে নমুনাগুলো পৃথিবীতে ফিরে আসে। নাসা এসব নমুনা বিশ্বের বিভিন্ন গবেষাগারে বিশ্লেষণের জন্য পাঠাচ্ছে। এর আগে বেণ্নু থেকে পাওয়া নমুনায় জীবনের মূল উপাদান তৈরি করে এমন ১৪টি অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ডিএনএ-আরএনএর পাঁচটি নিউক্লিওবেস পাওয়া গিয়েছিল। নতুন গবেষণায় এ তালিকায় যুক্ত হলো ট্রিপটোফ্যান ফলে এখন বেণ্নু থেকে পাওয়া অ্যামাইনো অ্যাসিডের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫টি। গবেষণার সহলেখক নাসার গোডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের অ্যাস্ট্রোকেমিস্ট হোসে আপন্তে বলেন, ট্রিপটোফ্যান মহাকাশে প্রথমবার দেখা গেল। এটি জটিল অ্যামাইনো অ্যাসিড এটি গঠনের জন্য বিশেষ পরিবেশ দরকার। তাই বেণ্নুতে এর অস্তিত্ব প্রমাণ করে, সৌরজগতের আদিকালে জীবন উপযোগী উপাদান মহাকাশেই তৈরি হচ্ছিল। বেণ্নুর নমুনা এখনো জীবনের জিগস পাজলের পৃথক টুকরা। যদিও জীবন নিজে তৈরি হয়নি। তবে এসব উপাদান পৃথিবীতে পৌঁছানো সম্ভব ছিল গ্রহাণু ও ধূমকেতুর সংঘর্ষের মাধ্যমে।
বেণ্নু প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পুরোনো উপাদানে গঠিত যা সৌরজগত সৃষ্টির সময়কার অবিকৃত রসায়ন ধারণ করে। গবেষকদের মতে বেণ্নুর মাতৃদেহে তরল পানির উপস্থিতিতে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটেছিল, যার ফলে জটিল জৈব যৌগ তৈরি হতে থাকে। এছাড়া বেণ্নুতে পাওয়া অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল অতিক্রম করা কোনো উল্কাপিণ্ডে সাধারণত দেখা যায় না কারণ অতিরিক্ত তাপে এসব যৌগ নষ্ট হয়ে যায়। তাই OSIRIS-REx-এ সংগৃহীত নমুনাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রাকৃতিক টাইম ক্যাপসুল। গ্রহাণুরাই ছিল প্রাথমিক পৃথিবীর মুদি দোকান। তারা জীবন তৈরির কাঁচামাল এনে দিয়েছিল। গবেষকরা মনে করছেন, ট্রিপটোফ্যানসহ আরও জৈব যৌগের সন্ধান পেলে সৌরজগতের আদিকালের রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও জীবনের জন্ম সম্পর্কে নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হবে। গবেষকরা এখন আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে চান যে ট্রিপটোফ্যান আসলেই বেণ্নুর অংশ এবং কোনোভাবে পৃথিবীর দূষণ নয়। এখন পর্যন্ত বিবেচনায় এটি বেণ্নু উৎপন্ন বলেই মনে করা হচ্ছে। নাসার OSIRIS-REx মিশনের নমুনায় নতুন অ্যামাইনো অ্যাসিড শনাক্ত হওয়া মহাবিশ্বে জীবনের সম্ভাব্য উৎস অনুসন্ধানে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের সামনে নতুন গবেষণার পথ খুলে দিয়েছে। যা ভবিষ্যতে মহাজাগতিক রসায়ন ও জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিতে পারে।
-মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: