odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Saturday, 13th December 2025, ১৩th December ২০২৫
মিড-অ্যাটলান্টিক রিজের পাশে গভীর সমুদ্রে পাওয়া প্রাচীনতম হাইড্রোথার্মাল ফিল্ড ‘লস্ট সিটি’ আদিম পৃথিবীর পরিবেশের জীবন্ত প্রতিরূপ—বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণা বলছে এখানেই লুকিয়ে আছে জীবনের উৎপত্তির রহস্য।

আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে আবিষ্কৃত এক হারানো নগরী: জীবনের উৎস সন্ধানে নতুন আশা

Special Correspondent | প্রকাশিত: ১২ December ২০২৫ ২৩:০০

Special Correspondent
প্রকাশিত: ১২ December ২০২৫ ২৩:০০

নিউজ ডেস্ক | অধিকারপত্র

আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন রহস্যময় এক লস্ট সিটি হাইড্রোথার্মাল ফিল্ড। ২,৩০০ ফুট গভীরে অবস্থিত এই বিশাল মিনার সদৃশ কার্বনেট টাওয়ারগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পরিচিত হাইড্রোথার্মাল সিস্টেম। গবেষকদের ধারণা এর পরিবেশ ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া আদিম পৃথিবীর সঙ্গে অত্যন্ত মিল। যা জীবনের সূচনা নিয়ে নতুন আলো ফেলছে। লস্ট সিটি অবস্থিত মিড অ্যাটলান্টিক রিজের পশ্চিমে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আজোরেস দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে। বিচ্ছিন্ন অবস্থানের কারণে হাজার হাজার বছর ধরে মানবসৃষ্ট কোনো প্রভাব পড়েনি এই স্থানে। ফলে এটি রয়ে গেছে একেবারে মৌলিক ও অক্ষত।

১ লাখ ২০ হাজার বছরের পুরোনো সমুদ্র ল্যাবরেটরি:

গবেষকদের অনুমান লস্ট সিটি কমপক্ষে ১,২০,০০০ বছর ধরে সক্রিয়। এটিকে মহাসাগরের দীর্ঘতম টিকে থাকা হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট ফিল্ডে পরিণত করেছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সাইটটি থেকে ম্যান্টল রকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কোর স্যাম্পল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এই ম্যান্টল রকই গভীর-সমুদ্রের রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে জ্বালানি যোগায়। এই নমুনা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানতে পারবে কীভাবে সূর্যালোক বা অক্সিজেন ছাড়া শুধুমাত্র ভূ-রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোকার্বন তৈরি হয় যা এখানকার অণুজীবদের প্রধান খাদ্য।

সূর্যালোক ছাড়া জীবন:

লস্ট সিটির কার্বনেট টাওয়ারগুলোর উচ্চতা কোথাও কোথাও ৬০ মিটার (২০০ ফুট) পর্যন্ত। এগুলো তৈরি হয়েছে সেরপেন্টিনাইজেশন নামের এক বিশেষ ভূ-রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারনে যেখানে সমুদ্রের পানি ম্যান্টল রকের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন ও মিথেন গ্যাস সৃষ্টি করে। সূর্যের আলো ছাড়াই এই গ্যাসগুলো এখানকার মাইক্রোবদের জন্য জীবনধারণের জ্বালানি। প্রত্যেকটি ভেন্ট যাদের ডাকনাম আইম্যাক্স, পোসাইডন, নেচার মৃদু উষ্ণ, ক্ষারীয় তরল নির্গত করে। তাপমাত্রা কখনও ১৯৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠলেও তা ফুটন্ত নয়। টাওয়ারের ভেতরে অন্ধকারে বাস করে সূর্যালোকবিহীন অণুজীব। আর বাইরের দেয়ালে দেখা যায় বিরল শামুক, সি-আর্চিন, চিংড়ি ও ইল মাছ। মাইক্রোবায়োলজিস্ট উইলিয়াম ব্রাজেলটন স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনকে বলেন, এ ধরনের ইকোসিস্টেম এই মুহূর্তে শনি বা বৃহস্পতির উপগ্রহ—এনসেলাডাস বা ইউরোপাতেও সক্রিয় থাকতে পারে।

জীবনের জন্মস্থান হতে পারে এমন আরও এক প্রমাণ:

লস্ট সিটিতে উৎপন্ন হাইড্রোকার্বন সূর্যালোকের সাহায্যে নয় বরং গভীর-পৃথিবীর রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন পৃথিবীতে জীবন যেমনভাবে শুরু হয়েছিল, মহাবিশ্বের অন্যত্রও তেমনভাবে শুরু হতে পারে। বিপন্ন হয়েছে হারানো নগরী যদিও লস্ট সিটিতে খনিজ আহরণের মতো কিছু নেই। তারপর এর পাশের অঞ্চলগুলোতে পলিমেটালিক সালফাইডের সম্ভাবনা থাকায় আন্তর্জাতিক আগ্রহ দেখা দিয়েছে গভীর সমুদ্র খননে। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক সমুদ্র তলদেশ কর্তৃপক্ষ (ISA) পোল্যান্ডকে আশপাশের এলাকায় ১৫ বছরের অনুসন্ধান লাইসেন্স দেয়। এতে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খননকাজের ফলে সৃষ্ট বিষাক্ত সেডিমেন্ট প্লুম ভেসে এসে লস্ট সিটির নাজুক ইকোসিস্টেমকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এই অনন্য সাইটটি ইতোমধ্যে Ecologically or Biologically Significant Marine Area (EBSA) তালিকাভুক্ত। পাশাপাশি ইউনেস্কো এটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণার জন্য বিবেচনা করছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছে একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে লস্ট সিটির মতো সিস্টেম আর কখনোই পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে না। জীবনের উৎপত্তি বুঝতে মানবজাতির সবচেয়ে বড় সূত্র হতে পারে এই হারানো নগরী।

--মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: