
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকুরীতে সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর আজ আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার গেজেট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের একজন নেতা হাসান আল মামুন কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং একই সাথে তারা সরকারের সিদ্ধান্ত দ্রুত গেজেট আকারে প্রকাশের দাবি জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে মাদার অফ এডুকেশন আখ্যায়িত করে তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে হামলাকারীদে শাস্তি দাবি করেন।
একই সাথে তারা আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা আটক হয়েছেন তাদের মুক্তি ও আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের জন্যও কর্তৃপক্ষের কাছে আহবান জানান।
ক্যাম্পাস থেকে বিবিসির কাদির কল্লোল জানান সংবাদ সম্মেলনের পর শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আনন্দ মিছিল বের করে।
এর আগে কয়েকদিনের ধারাবাহিক আন্দোলনের পর বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে কোটা পদ্ধতির বাতিলের ঘোষণা দেন।
এর মধ্যে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় চারটি মামলার কথা জানায় পুলিশ।
আন্দোলনকারীরা অবশ্য জানান তারা বৃহস্পতিবার তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।
যদিও আন্দোলনকারীরা চাইছিলো চাকুরীতে কোটার পরিমাণ কমিয়ে দশ শতাংশে আনা হোক কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের কোটাই বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জুর মতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
"একই সাথে আন্দোলনকারীরা বিস্মিত এবং কিছু বিভ্রান্তির মধ্যেও পড়েছে"।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে মিস্টার হোসেন বলেন একদিকে সকল নাগরিকদের মধ্যে সমতা আবার অনগ্রসরদের জন্য ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে।
"সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থার কথা বলেছেন। এখন দেখার বিষয় হবে সরকার কিভাবে সেটি বাস্তবায়ন করে"।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কোন রাজনৈতিক ঝুঁকি নিলেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "ঝুঁকি একটা বাড়লো সেটি হলো- মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে- কারণ আন্দোলনের দাবি ছিলো এ কোটা কমানো কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নানা সংগঠনের পক্ষ থেকেও পাল্টা দাবি আছে"।
মোজাম্মেল হোসেন বলেন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছিলো সেই ছাত্রলীগ আনন্দ মিছিল করেছে অর্থাৎ ক্যাম্পাসটা আবার ছাত্রলীগের জমায়েতে নিয়ে আসা- প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় এ তাৎক্ষনিক কাজটা হয়েছে।
তবে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের একজন জসিম উদ্দিন বিবিসিকে বলেন, "আমরা কোটা বাতিলের জন্য আন্দোলন করিনি, আমরা করেছি কোটা সংস্কারের জন্য"।
আরেকজন নারী শিক্ষার্থী বলেন, "কোটা বিলুপ্তির দাবি আমরা কখনোই করিনি"।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক এম এম আকাশ বিবিসিকে বলেন প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে শল্য চিকিৎসার পথ বেছে নিয়েছেন।
"প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে যে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটি সংকটকে আরও অবনতির দিকে যাওয়া থেকে ঠেকালো"।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: