ঢাকা | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘নির্বাচকেরা যদি এর প্রতিদান দিতেন...’

Admin 1 | প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০১৭ ০২:৩০

Admin 1
প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০১৭ ০২:৩০

সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২০০৭ সালে। এরপর থেকেই ৫ টেস্ট আর ৪১ ওয়ানডের ক্যারিয়ার ‘স্থগিত’ হয়ে আছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। তুষার ইমরান তবু স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলে ফেরার। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ১২৪৯ রান করে দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৯০০০ রানও পূর্ণ করেছেন এবারের বিসিএলেই। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান বলেছেন তাঁর কষ্ট আর স্বপ্নের কথা—

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান এখন আপনার। এবার এক মৌসুমেও সর্বোচ্চ রান করলেন। জাতীয় লিগে পরপর তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি, বিসিএলে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি। দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটিয়ে নিশ্চয়ই অনেক তৃপ্ত...
তুষার ইমরান: এ রকম পারফরম্যান্স অবশ্যই আনন্দদায়ক। বড় প্রাপ্তি। তবে তৃপ্তিটা আসে প্রতিদান পেলে। যদি আমাদের জন্য খেলার আরেকটা ধাপ থাকত, তাহলে নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রমাণ করতে পারতাম। এত দিন দেখতাম জাতীয় লিগের পারফরম্যান্সকে ওভাবে দেখা হয় না। বিসিএলে ভালো খেললে দেখা হয়। কিন্তু ভালো করার পর শুনছি ঘরোয়া ক্রিকেট আর উইকেটের মানই নাকি উন্নত নয়। এসব শুনলে খারাপ লাগে। আমাকে তাহলে কী করতে হবে? সব সময়ই চেষ্টা করি রান করতে। উইকেট ভালো না খারাপ, সেখানে তো আমার কিছু করার নেই। সে জন্যই বলছি, আমাদের নিজেদের আরও ভালোভাবে প্রমাণের জন্য আরেকটা ধাপ দরকার।
* জাতীয় দল শ্রীলঙ্কায় সিরিজ খেলছে। সেখানে কি কোনো আশা দেখেন আপনার জন্য?
তুষার: জাতীয় দলে খেলার প্রত্যাশা তো থাকেই। আমি মনে করি, ‘এ’ দল না থাকায় বিসিএলের পরের ধাপই হলো জাতীয় দল। জাতীয় ক্রিকেট লিগ থেকে ৬০ জন খেলোয়াড় বাছাই করে বিসিএলে আনা হয়। এই ৬০ জনের মধ্যে শীর্ষ পাঁচের মধ্যে থাকলে নিজের কাছে ভালো লাগে। নির্বাচকেরা যদি এর প্রতিদান দিতেন, আমাকে ‘এ’ দলে বা জাতীয় দলের সঙ্গে রেখে কিছু শ্যাডো ম্যাচ খেলার সুযোগ দিতেন, তাহলে নিজেকে আরও ভালো করে প্রমাণ করার সুযোগ পেতাম।
* আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন যে রকম উত্তাপ, খেলার যে ধরন, আবার সুযোগ পেলে এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন?
তুষার: আমার কাছে তো মনে হয়, আমি যে সময়ে জাতীয় দলে খেলেছি, তখনকার বোলাররা এখনকার বোলারদের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। সব দলের ব্যাপারেই কথাটা সত্যি। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড—সব দলেই এখনকার চেয়ে তখন বিশ্বমানের বোলার বেশি ছিল।
* এবার এত ভালো ব্যাটিংয়ের কারণ কি শুধু ১৬ বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা, নাকি অন্য কিছুও আছে?
তুষার: কষ্ট তো করেছিই। তবে মনে হয়, বয়স ৩০ পার হওয়ার পরই অভিজ্ঞতাটা বেশি কাজে লাগে। অন্তত আমার বেলায় তা-ই হচ্ছে।
* আপনি ছাড়াও বিসিএলে এবার অনেকেই রান পেয়েছেন। অনেকে বলছেন উইকেট বেশি মাত্রায় ব্যাটিং সহায়ক হওয়াতেই নাকি এটা হয়েছে...
তুষার: বিকেএসপির দুটি উইকেটে ব্যাটসম্যানদের জন্য সাহায্য ছিল। আমি হয়তো সুযোগটা একটু বেশি পেয়েছি। ওপরের ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারেনি, আমি হাল ধরেছি। কিন্তু উইকেটের সাহায্য সবাই কমবেশি পেয়েছে।
* বিসিএলের জন্য বিশেষ কোনো প্রস্তুতি কি ছিল?
তুষার: না। জাতীয় লিগে ভালো খেলেছি। সে ধারাবাহিকতাই এখানে এসে কাজে লেগেছে। এর বাইরে নিজের সঙ্গে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আপনাকে আগেই বলেছিলাম, আমার লক্ষ্য ছিল আমার দল বা প্রতিপক্ষে জাতীয় দলের যেসব ব্যাটসম্যান খেলে তাদের চেয়ে বেশি রান করা।
* মাঝখানে অনেক বছর আপনার জাতীয় দলে ফেরার কোনো আশা ছিল না। ‘এ’ দলের বেশি আপনিও ভাবতে পারেননি। এখন তো সামনে সেটাও নেই। খেলার অনুপ্রেরণা পান কোত্থেকে?
তুষার: নিজের জন্য খেলি। পরিবারের জন্য খেলি। এটা ঠিক, আমার বয়সে এসে অনেকেই ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছে। আফতাব আমার পরে এসেও এখন খেলে না। তারেক আজিজ, তালহা জুবায়ের, হান্নান সরকার, আনোয়ার হোসেন মনির, এ ছাড়া সিনিয়রদের মধ্যেও অনেকে আছেন, যাঁরা আমার বয়সে এসে আর খেলেননি। কিন্তু আমি মনে করি, আমার এখনো খেলা ছাড়ার সময় হয়নি। বয়স তো বেশি হয়নি। অন্যান্য দেশে এই বয়সে অনেকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। আমাদের এখানে সমস্যা হলো আমরা জাতীয় দলে তাড়াতাড়ি এসে পড়ি। ২০-৩০টি ওয়ানডে খেলে হারিয়ে যাই। যখন ক্রিকেটার হিসেবে পরিণত হয়, তখন আর তারা দৃশ্যপটে থাকে না। ২০০৭-এ আমি সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। ১০ বছর পর হলেও যে আমি একটা আলোচনা শুরু করতে পেরেছি, এটাও অনেক।
* আপনার ফিটনেসের অবস্থা কেমন?
তুষার: কীভাবে বোঝাই! এ বছরও বিসিএলে এক হাজার ওভারের বেশি ফিল্ডিং করেছি। শুধু তো মাঠে থাকিনি, মাঠে থেকে অনেক কিছু করতেও হয়েছে। এক হাজার ওভার ফিল্ডিং করা সহজ কথা নয়।
* সামনে বড় লক্ষ্য না থাকলে শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য দিনের পর দিন অনুশীলন করতেও তো ক্লান্তি আসার কথা। আপনার আসেনি?
তুষার: না, আমার কোনো ক্লান্তি আসে না। তবে রুটিন বদলেছে। ১০ বছর আগে জাতীয় দলে খেলার সময় রুটিন এক রকম ছিল, এখন অন্য রকম। এখন যেমন সকালে জিম-রানিং করি। বিকেলে ফুটবল খেলে দিন শেষ করি। প্র্যাকটিসে ব্যাটিং-বোলিং তেমন করি না। ফিটনেসের কাজগুলোর ওপর বেশি জোর দিই।
* খেলা নিয়ে আপনার কোনো আফসোস বা হতাশা আছে?
তুষার: মাঝেমধ্যে আসে। এখন যারা জাতীয় দলে খেলছে...সাকিব, মুশফিক, এ রকম আরও অনেকেই ‘এ’ দলে আমার অধীনে কমবেশি খেলেছে। যখন ভাবি তারা জাতীয় দলে খেলছে, আমি কোথায়—তখন খারাপ লাগে।
* শেষ প্রশ্ন, ধরুন কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টে হঠাৎ আপনাকে দলে ডাকা হলো। আপনি কি প্রস্তুত?
তুষার: (হাসি) এটা নির্বাচকদের ব্যাপার। তবে আমি প্রস্তুত। যখনই সুযোগ আসবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: