
২৫ ফেব্রুয়ারির পিলখানায় নারকীয় সেনা হত্যাযঙ্গের কথা আজও ভুলতে পারেনি জাতি। কি হয়েছিল সেদিন? কারা বা কাদের নির্দেশে এই হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়েছিল? উইকিলিকসের গোপন নথিতে প্রকাশ পেয়েছে অনেক রহস্য। সেনা হত্যা নিয়ে সেনাবাহিনীর গঠিত তদন্ত রিপোর্টেও উঠে এসেছিল সকল তথ্য।
উইকিলিকসে প্রকাশিত তথ্য সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলোঃ
ISI: পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘ISI’ এর পরিকল্পনায় ও ব্যবস্থাপনায় ”পিলখানা হত্যাকান্ড” ঘটে। এর মূল লক্ষ্য ছিল- তৎকালীন নতুন সরকার উৎখাত ও জঙ্গি বাহিনীর উত্থান এবং বিডিআর বাহিনী ধংস করে দেয়া। বিএনপি জামাত সরকারের সহায়তায় যেভাবে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ বাংলাদেশে বিস্তার করছিলো, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছিলো।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হলেও বাংলাদেশের বিজয় ও স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। ৭৫ সালে বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা কান্ড থেকে শুরু করে আইএসআই নানা ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের উপর নিশ্চুপে আক্রমণ করে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুস ভাবে আওয়ামীলীগ সরকার বিজয়ী হলে পাকিস্তান বাংলাদেশে আর কোন অপকর্ম চালাতে পারবেনা যা বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় করে আসছিলো।
২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সাংবাদিক অ্যালেক্স প্যারির এক আর্টিকেলে বলা, ২০০১ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ১৫০জন আফগান আল কায়েদা জঙ্গী সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম দিয়ে আরও ১০০ সদস্য আসে। এতে সামগ্রিকভাবে সহযোগীতা করেছিলো বিএনপি এবং জামাত ইসলামের বেশ কিছু সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যা তদারকিতে ছিলেন তারেক জিয়া। এভাবে কয়েক দফায় জঙ্গিরা বাংলাদেশের ভূখন্ডে প্রবেশ করে।
ওই সময়ে তারেক জিয়ার সাথে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রায় ২০০-রও বেশি ইমেইল আদান-প্রদানের রেকর্ড বিশ্লেষণে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে দাবি উইকিলিকসের।
সরকার পতনের এ লক্ষে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী সময়টিকে বেছে নেয়া হয়- যা ছিল শেখ হাসিনার নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহনের পর সম্পুর্ন নাজুক সময়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বিডিআর সৈনিকদের দাবীদাওয়ার আড়ালে মুল প্লানটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ৬০ কোটি রুপী বরাদ্দ করে পাকিস্তান। এর মধ্যে পিলখানায় ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা বিলি হয়, যাতে প্রতিটি অফিসারের মাথার বদলে ৪ লক্ষ টাকা ইনাম নির্ধারন করা হয়।
১৯ ও ২১ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার বাছাই করা ১৫ জন শুটারকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়, মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তারা। একজন বেসামরিক দর্জি’র কাছ থেকে বিডিআর এর পোশাক বানিয়ে বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে পিলখানায় উপস্থিত থাকে শুটাররা। তাদের দায়িত্ব ছিলো লাল টেপওয়ালা (কর্নেল ও তদুর্ধ) অফিসারদের হত্যা করা।
তারা একটি বেডফোর্ড ট্রাক ব্যাবহার করে ৪ নং গেইট দিয়ে প্রবেশ করে ২৫ তারিখ সকালে। পিলখানা এলাকার বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু পিলখানার ঢুকতে সহায়তা করে। পুরো পরিকল্পনা ও কলকাঠি ছিল তারেক জিয়ার হাতে।
ঘটনার দিন সকাল থেকে বাংলাদেশে বিএনপি নেতাদের মালিকানাধীন মিডিয়া গুলো মনগড়া তথ্য দিয়ে সরকারকে বিব্রত করতে থেকে।
অর্থাৎ মূল পরিকল্পনা অনুসারেই কাজ করতে থাকে পেইড গণমাধ্যম গুলো !
পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে খালেদা জিয়ার জীবন বিপন্ন হওয়ার আশংকায় তাকে নিরাপদে থাকার জন্য বিদ্রোহ শুরু হবার আগেই খালেদা জিয়া কে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় তারেক। সকাল বেলা খালেদা জিয়া ক্যন্টোনমেন্টের বাসা ছেড়ে প্রথমে পাকিস্তান হাই কমিশনে যায় এবং পরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়।
বিদ্রোহের দিন পাকিস্তানের বিমান বাহিনী EDL-76 হেভি লিফ্ট এবং PN-32 মিডিয়াম লিফ্ট এয়ারক্রাফট নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাতে পূর্ণ সহায়তা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলো। ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী জানা যায় এই পরিকল্পনা ছিল পাকিস্তানের আইএসআইএর।
যার প্রেক্ষিতে ঐ সময় প্রণব মুখার্জীর মিডিয়ায় বলেন, “এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সব ধরণের সহায়তা দিতে ভারত প্রস্তুত।”
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: