
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা এর স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এই ‘জগাখিচুড়ি ঐক্য’ টিকবে না।
প্রক্রিয়া শুরুর মাস না গড়াতেই বি চৌধুরী ও কামালের সম্পর্কের এই ফাটল দৃশ্যত আওয়ামী লীগ নেতাদের ভবিষ্যদ্বাণীই সত্য করল।
৭ দফায় এল খালেদার মুক্তির দাবি
বি চৌধুরীর সঙ্গে মিলে কামাল হোসেন যে ৫ দফা দিয়েছিলেন, তাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সরাসরি না থাকলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার শুরুতেই এসেছে তা।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ৫ দফার দেওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে যে ৭ দফা দেওয়া হয়েছিল, তার প্রথমেই তাদের দলীয় চেয়ারপারসন খালেদার মুক্তির দাবিটি ছিল।
নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা
# অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
# গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
# বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
# কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালো আইন বাতিল করতে হবে।
# নির্বাচনের ১০ দিন পূর্ব থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্য্ন্ত বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
# নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনাস্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশের ওপর ওপর কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ না করা এবং নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর যে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
# তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
সেই সঙ্গে সংসদ ও সরকারে এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনাসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতসহ ১১ দফা লক্ষ্যের কথাও ঘোষণা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
“আজকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি, যুক্তফ্রন্টের আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না আছেন। আমরা আশা করি বি চৌধুরী ও মান্নান (এম এ মান্নান) সাহেব এর সাথে যুক্ত হবেন।”
সংবাদ সম্মেলনে কামাল, রব, মান্নার সঙ্গে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন।
কামাল হোসেনরা যেমন বি চৌধুরীর জন্য তাদের দরজা বন্ধ করেননি; তেমনি বি চৌধুরীরাও ঐক্য প্রক্রিয়া একেবারে বাদ না দেওয়ার কথাই বলেছেন।
তবে জোট শরিক অন্য দুই দলের নেতা রব, মান্নার প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মাহি বলেন, “তারা তারা সেখানে পরকীয়া করতে গেছেন।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জোট গঠনে কয়েক মাসের প্রক্রিয়া এবং তা নিয়ে দিনভর টানাপড়েsনের পর শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নামে এই জোটের ঘোষণা আসে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা কামাল হোসেনের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা ঘোষণা পড়ে শোনান মান্না, যিনি বি চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টেরও সদস্য সচিব।
যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী ছিলেন না এই সংবাদ সম্মেলনে, যিনি গত কয়েক মাস ধরে কামালের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রক্রিয়ায় ছিলেন।
পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিকালে কামালের বাড়ি গিয়ে তাকে না পেয়ে ফিরে বি চৌধুরীর বাড়িতে আলাদা সংবাদ সম্মেলন থেকে ঐক্য প্রক্রিয়া বিনষ্টের জন্য দায়ী করা হয় প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলনকারীদের।
বিকল্প ধারার পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপি জামায়াত ছাড়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা না দিলে শুধু তাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য তাদের সঙ্গে ঐক্য গড়বে না বি চৌধুরীর দল।
বাড়ির ফটকে থেকে ফেরার সময় বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মনে করি, এই ঐক্যটা না হওয়ার পেছনে কাদের ষড়যন্ত্র আছে, এটা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল।”
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: