ঢাকা | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ‘বিতর্কিত’ ধারার সংশোধনীর দাবিতে সম্পাদকদের মানববন্ধন

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:০২

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:০২

জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি বলে দাবি করেছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। আইনটি দ্রুত জাতীয় সংসদে তুলে ‘বিতর্কিত’ বিভিন্ন ধারার সংশোধনীর দাবিও জানানো হয়েছে।

১৫ অক্টোবর, সােমবার বেলা ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের দাবিতে সম্পাদকরা এক মানববন্ধনে এসব দাবি করেন।

এ সময় সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক্-স্বাধীনতা সুরক্ষার জন্য ডিজিটাল নিরপাত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারার সংশোধন জরুরি। এ ধারাগুলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রী বলছেন আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি। আমরাও মনে করি না আলোচনার দরজা বন্ধ। তবে আলোচনার নামে যেন প্রহসন না হয়।’

মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত বিশ্বাস নিয়ে আলোচনায় গেছি। কিন্তু সে বিশ্বাসের প্রতিফলন এখনো হয়নি। উনারা (মন্ত্রীরা) বলছেন, আলোচনার দরজা এখনো খোলা শুনে আমরা খুশি। আমরা আলোচনা করতে চাই তবে একটি গ্রহণযোগ্য আলোচনা। যেটি একটি সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে। আলোচনা শুধু যেন আলোচনার জন্য না হয়।’

মাহফুজ আনাম বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নিয়ে এবং এই আইনটির ধারা নিয়ে আমরা সম্পাদক পরিষদ প্রতিবাদ জানিয়ে আসলিছলাম। আমরা মনে করি, এই আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি। আমরা ডিজিটাল আইনের বিরোধী নই। এই আইনটির বিশেষ কিছু ধারার দাবি করছি। বর্তমানে আইনটি শুধু সাইবার জগত নয়, স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করতেই এই আইন। আমরা চাই আগামী সংসদ অধিবেশনে এই আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীণতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা হোক।’

এ সময় সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা সাত দফা দাবির প্রতি গুরুত্ব দিতে সরকারেরর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

পরে সম্পাদকরা ১০ মিনিট সেখানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

সম্পাদক পরিষদের দাবিগুলো হলো–

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক্‌-স্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরপাত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে।
এইসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনেই আনতে হবে।
পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদ মাধ্যমে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে কিন্তু কোনাে কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তারা শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে, কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে।
কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কোনাে কম্পিউটার ব্যবস্থা আটকে দেওয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে।
সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতার দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে (যেমনটা বর্তমান আইনে আছে) এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরােয়ানা ছাড়া এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না।
সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের দ্বারা সংঘঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত। এই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।
এই সরকারের পাশ করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যক।
এর আগে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদক পরিষদের বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করে এ মানবন্ধনের ঘোষণা দেয় পরিষদ। ওই দিন মাহফুজ আনাম বলেছিলেন, ‘আমাদের পরিষদ কখনোই আইনটি বাতিল চায়নি। নির্দিষ্ট কয়েকটি ধারার পরিবর্তন চেয়েছে। ভারত সরকার এ ধরনের একটি আইন পাস করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের হাইকোর্ট এটিকে অসাংবিধানিক অভিহিত করে বাতিল করে দেয়।’

গত মাসে দশম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮ ও সড়ক পরিবহন বিল-২০১৮সহ ১৮টি বিল পাস হয়।

সাইবার অপরাধ, ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে নেতিবাচক প্রোপাগান্ডা ঠেকাতে এবং অনলাইনের মাধ্যমে অবৈধভাবে গুজব ছড়ানোসহ বিভিন্ন অপরাধ মোকাবেলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়।

এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সংশোধনের দাবি করে আসছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।

সম্পাদক পরিষদ মানববন্ধনের ঘোষণা দিলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সম্পাদকদের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। আইনটির বিতর্কিত ধারাগুলোর সংশোধনীর বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়।

কিন্তু এরই মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর যেকোনো বিল আইন হিসেবে গণ্য হয়।

পরে সংবাদ সম্মেলন করে মানববন্ধনের ঘোষণা দেয় সম্পাদক পরিষদ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: