ঢাকা | সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

তিলোত্তমা রাজধানী করতে নৌকায় ভোট দিন : গুলশানে সমাবেশে শেখ হাসিনা

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৪৬

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৪৬

আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রাখার মাধ্যমে ঢাকাকে তিলোত্তমা রাজধানী হিসাবে গড়ে তুলতে নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে নগরবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজধানীকে সুন্দর এবং বাসযোগ্য করার জন্য সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং এর সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
তিনি বলেন, পুনরায় নির্বাচিত হতে পারলে আমরা রাজধানীর চারপাশে এলিভিয়েটেড রিং রোড তৈরী করবো, যানজট নিরসনে করবো মেট্রো রেল, যার জরিপ কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর গুলশান ইয়থ ক্লাব মাঠে এই অঞ্চলের আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সমর্থনে মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর আয়োজিত জনসভায় এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে আসার পরই তাঁর সরকার এ অঞ্চলের পানি, বিদ্যুত এবং রাস্তাঘাটের সমস্যা দূর করেছে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকাকে দৃষ্টিনন্দন করার অংশ হিসেবে হাতির ঝিল প্রকল্প করে দিয়েছি। আজকে ৩শ’ ফিট রাস্তার দুইপাশে একশ’ ফিট করে খাল খনন করে দিচ্ছি, যা যানজটও দূর করতে সক্ষম হবে।’
তিনি বলেন, বিদ্যুতের লাইন এবং সাব স্টেশনগুলো আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডে করে দেব। যাতে কখনও আর ঝড়ে ছিড়ে না পড়ে বা কোনভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এজন্য আমরা ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েয়ি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটি কাজ হচ্ছে আমাদের মানুষের জীবন-মান উন্নয়নের জন্য।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আজকে নৌকার জোয়ার উঠেছে ইনশাল্লাহ নৌকার জয় হবে। সরকার গঠন করে এদেশের মানুষের সেবা করবো, মানুষকে উন্নত জীবন দেব- এই ওয়াদা রইল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা শহর আমাদের রাজধানী। এই রাজধানীতে অনেক দেশি-বিদেশি মানুষ আসে, অনেক মানুষ আসে কর্মসংস্থানের জন্য।’ কিন্তু আমরা সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করে ই-গভার্নেন্স চালু করেছি, ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। পোস্ট অফিস এবং সাব পোস্ট অফিসগুলোকেও ডিজিটালাইজেশন করে দিয়েছি। কোন কাজের জন্য আর মানুষকে ঢাকায় আসতে হবে না। ঘরে বসেই তারা সকল কাজ সম্পাদন করতে পারবে।
তিনি রাজধানীর বস্তিবাসীর জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে এই প্রকল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘এসব আবাসিক ফ্ল্যাটে স্বল্প আয়ের লোকজন, দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক ভাড়া- যার যেমন সুবিধা সেভাবেই প্রদান করে থাকতে পারবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই সকলের জীবন মান উন্নত হচ্ছে, প্রত্যেকের আয়-রোজগার বাড়ছে, ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে, উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে, পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়েছে, আপনারা ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছেন।
তিনি বলেন, সরকার কর্মকর্তা থেকে গ্রামীণ শ্রমিক- সকলের বেতন-ভাতা ও মজুরি আমরা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছিলেন বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বেসরকারী টেলিভিশন এবং সকলের হাতের মোবাইল ফোন দেখিয়ে বলেন, এই মোবাইল ফোন এবং ব্যাংক, বীমা, শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেয়ার তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, অন্তত এইটুকু বলবো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতি করছে না। করবেও না। আমরা সরকার পরিচালনা করি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, এতিমের অর্থ আমরা আত্মস্যাৎ করি না।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়ার প্রিয়ভাজনদের করা এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ মামলাতেই তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন এবং এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কিছু করণীয় নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ করলে শাস্তিতো পেতেই হবে, পবিত্র কোরআন শরিফেও আল্লাহতায়ালা তা বলে দিয়েছেন।
তাঁর সরকার সকলের কথা চিন্তা করে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে বলেই কওমী মাদ্রাসার মাস্টার্সের শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
শেখ হাসিনা ২০১৪ ও ১৫ সালে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, জীবন্ত মানুষগুলোকে বিএনপি পুড়িয়ে হত্যা করেছে, মসজিদে কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে, আগুন দিয়েছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৭ জন সদস্য হত্যা করেছে তারা।
তিনি বলেন, সারাদেশে ৩ হাজার ৯শ’ গাড়ি পুড়িয়েছে, লঞ্চ, বাস, ট্রেন, সিএনজি, প্রাইভেট কার পুড়িয়েছে। গাড়ির ভেতরে যাত্রী, ড্রাইভার, হেলপার পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। ছোট শিশু থেকে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী- কেউ রক্ষা পায়নি তাদের হাত থেকে।
আগুনে পোড়া জনগণকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনিক এবং হৃদয় পরীক্ষা দিতে পারেনি, কারণ বোমা লেগে তাদের চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাদের চিকিৎসা করিয়েছি, পরবর্তীতে তারা পরীক্ষা দিতে পেরেছে।
তিনি বলেন, এই অমানুষরা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মানি লন্ডারিং করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। খালেদা জিয়ার দুই ছেলেই মানি লন্ডারিং করতে গিয়ে ধরা পড়ছে। সিঙ্গাপুর থেকে সেই অর্থও আমরা ফিরিয়ে এনেছি। হাওয়া ভবনের খাওয়া মিটানো নিয়ে ব্যবসায়ীদের নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে সেখানে বিলাসবহুল জীবন করার কি মানে আছে। দেশের সম্পদ হচ্ছে দেশের মানুষের জন্য।
তিনি বলেন, মানুষকে যারা মানুষ বলে গন্য করে না, তারা কিভাবে আবার জনগণের কাছে ধানের শীষে ভোট চায়। ধানের শীষে ভোট মানেই দুর্নীতি, ৫শ’ জায়গায় বোমা হামলা, মানি লন্ডারিং, এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ। আর নৌকা মার্কা মানে সমৃদ্ধি, উন্নতি, স্বাধীনতা, মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন ও কল্যাণ হওয়া। যার সুফল দেশবাসী এখন পাচ্ছে।
তিনি সমাবেশে ঢাকা উত্তরের দলের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। ঢাকা-১৭-এর প্রার্থী আকবর হোসেন ফারুক পাঠান (চিত্রনায়ক ফারুক), ঢাকা-১১ একেএম রহমতউল্লাহ (মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি), ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খান কামাল (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), ঢাকা-১৩ মো. সাদেক খান, ঢাকা-১৪ আসলামুল হক, ঢাকা-১৫ কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১৬ মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা এবং ঢাকা-১৮ অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।
জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য, দুর্নীতি দমন করার জন্য আর তরুণ সমাজের খেলাধুলা, কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার সুযোগ আমরা করে দিয়েছি।’
সরকার তরুণ ও যুব সমাজের জন্য খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ করে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের শক্তি, তাদের মেধা এবং তাদের জ্ঞানকে আমরা কাজে লাগাবো আমাদের আগামী দেশ গড়ার জন্য।
তিনি ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ‘মুজিব বষর্’ উদযাপনের জন্য নৌকায় ভোট চেয়ে বলেন, আপনারা আমাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যে মেগা প্রজেক্ট পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে চাই এবং এভাবেই আমাদের দারিদ্র্য বিমোচন করে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই।
‘সেই সোনার বাংলা গড়ার জন্য আপনাদের ভোট চাই’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নৌকা মার্কায় ভোটদানের প্রতিশ্রুতি দেয়ার অনুরোধ জানালে উপস্থিত ভোটাররা দুহাত তুলে সম্মতি প্রদান করেন।খবর বাসসের



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: