ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ চৈত্র ১৪৩১

এক ডাক্তার নিরুদ্দেশ আড়াই বছর, কর্মস্থলে না থেকেও বেতন নিচ্ছেন ১১ জন

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারী ২০১৯ ১৯:৪৫

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারী ২০১৯ ১৯:৪৫

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
এক ডাক্তার নিরুদ্দেশ আড়াই বছর, কর্মস্থলে না থেকেও বেতন নিচ্ছেন ১১ জন অনুপস্থিত ডাক্তার। তাই বন্ধ কক্ষ। অনিয়মের ষোলকলা পূর্ণ।

গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইর্মাজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফুর রহমান ২০১৬ সালের জানুয়ারি তিন দিনের সিএল (নৈমিত্তিক) ছুটি নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তিনি যে কোথায় আছেন, তা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কেউ বলতে পারছেন না। তবুও তার সরকারি চাকরিটি বহাল তবিয়তে রয়েছে।

একই দশা এই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের। সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. আফরোজা ইসলাম ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর তিন দিনের সিএল ছুটি নেন। এরপর থেকে হাসপাতালে অনুপস্থিত তিনি। এদিকে কর্মস্থলে না থেকে সপ্তাহে দুই-একদিন হাসপাতালে নামমাত্র উপস্থিত হয়ে বেতন-ভাতা তুলছেন ১১ জন ডাক্তার।

এদিকে যোগদান করেই বদলী হয়ে যাওয়ায় উপজেলায় ৩৪টি পদের মধ্যে ১৪ জন ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে। চারজন ডাক্তার প্রেষণে অন্যত্র চাকরি করেছেন। দুইজন ডাক্তার দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। এভাবেই বছরের পর বছর অনিয়মের ষোলকলা পূর্ণ হয়ে বর্তমানে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এক ডাক্তার নিরুদ্দেশ আড়াই বছর, কর্মস্থলে না থেকেও বেতন নিচ্ছেন ১১ জন

ডাক্তার শূন্য কক্ষ। ছবি: ইত্তেফাক

সরেজমিনে গেলে, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করে ১৪ জন ডাক্তারের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ তিন ডাক্তারকে পাওয়া যায়। ডাক্তারদের জন্য নির্ধারিত কক্ষগুলো অধিকাংশই তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। কয়েকটি কক্ষ খোলা থাকলেও কামরাগুলোতে কর্মরত ডাক্তার পাওয়া যায়নি। দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত রোগী হাসপাতালে ডাক্তার না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

আরো পড়ুন: বিদেশে টাকা পাচারে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ

খোজ নিয়ে জানা গেছে, ইর্মাজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. ফ্লোরা আফরোজ, ডা. তপন কুমার দাশ, ডা. আমেন খাতুন মিতা, ডা. নুসরাত জাহান, ডা. নিয়ামুল হাছান, অর্থোপেডিক্স এর কনসালটেন্ট ডা. মিজানুর রহমানসহ ১১ জন ডাক্তারই কর্মস্থলে অবস্থান না করে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করে ট্রেনে কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করেন।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট লোকজন জানান, রাজধানী ঢাকায় অবস্থানকারী ডাক্তার সপ্তাহে ছয়দিনের পরিবর্তে দুইদিন হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন। অনেকের বিরুদ্ধে সপ্তাহে এক দিন কর্মস্থলে আসারও অভিযোগ রয়েছে।

মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ডা. তপন কুমার দাম জানান, তিনি শনিবারে আসবেন। অর্থোপেডিক্স এর কনসালটেন্ট ডা. মিজানুর রহমান সপ্তাহে দুইদিন রবিবার ও বুধবার এই হাসপাতালে রোগী দেখে থাকেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর ভিড় থাকলেও ডাক্তারদের দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা হেলাল উদ্দিন জানান (৫৩), ডাক্তার না থাকায় এই হাসপাতাল থেকে প্রায় দিনই চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়।

এ বাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলম আরা বেগম বলেন, অনুপস্থিতির কারণে এই হাসপাতালের বেশ কয়েকজন ডাক্তারকে শোকজ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধ শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: