ঢাকা | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিশ্বের প্রায় এক শতাংশ মানুষ অটিস্টিক

Akbar | প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০১৯ ১০:২৪

Akbar
প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০১৯ ১০:২৪

ঢাকা: অটিজম শিশুর বিকাশজনিত একটি সমস্যা। ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে অটিজমের সঠিক কারণ জানা সম্ভব হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের অটিজম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ মানুষ অটিস্টিক।

বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা অটিজম আক্রান্ত মানুষ রয়েছেন।

জানা গেছে, ১৯৪৩ সালে আমেরিকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিও ক্যানার প্রথম মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে রোগটি শনাক্ত করে অটিজম শব্দটি ব্যবহার করেন। শিশুর জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়।

অটিজম এমন একটি বিকাশজনিত সমস্যা যেখানে ব্যক্তির মধ্যে বাইরের জগৎ সম্পর্কে সামান্য আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জরিপে দেশে প্রায় ১৬ লাখ ৪৪ হাজার জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার।

আজ ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। প্রতি বছর সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় দিনটিকে পালন করে আসছে। এবারে এ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সহায়ক প্রযুক্তি ব্যবহার অটিজম ব্যক্তির অধিকার।’ দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী প্রদান করেছেন। বাণীতে তিনি অটিস্টিকসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার অর্জনে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

২০১৭ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংক্রান্ত কনভেনশন বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে (সিআরপিডি) নারীর প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হওয়া বিশেষ চ্যালেঞ্জের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

জাতিসংঘ সদর দফতরে ২০১৮ সালের অটিজম সচেতনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে অটিজম নিয়ে নারী ও মেয়েশিশুদের ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত করে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, অটিজম এমন একটি বিকাশজনিত সমস্যা যেখানে শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচরণ, সামাজিক কল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোয় বেশ সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষজ্ঞরা একে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।

অটিস্টিক শিশুর বিকাশ তিনটি ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়- বিশেষ করে সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা, অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতি আগ্রহ না থাকা, কে কি করছে তা নিয়ে কৌতূহল না থাকা, অন্যের আচরণ বুঝতে না পারা। কথা বলতে না শেখা, কোনোমতে কথা বলতে পারলেও অন্যের সঙ্গে আলাপচারিতা করতে সমর্থ না হওয়া। অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে আচরণের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

অনেকে পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করে। অর্থাৎ একই কাজ বারবার করে। অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও আচরণের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে অটিস্টিক শিশুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেমন নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না। কোনো খেলনা বা আনন্দদায়ক বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট না হওয়া, কারও আদর পেতে না চাওয়া, বিশেষ আচরণ বারবার করা ইত্যাদি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, অটিজমের পেছনে দুটি কারণ রয়েছে- জিনগত ও পরিবেশগত সমস্যা। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর জিনে ‘কপি নম্বর অব ভেরিয়েন্ট’ নামক ত্রুটি বহন করে।

পরিবেশের বিষাক্ত উপকরণ জিনের স্নায়ুকোষ ধ্বংস করে। যেসব রাসায়নিকদ্রব্য অটিজমের জন্য দায়ী তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মার্কারি, লেড, কীটনাশক। তবে কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, এটি নিউরোলজিক্যাল বা মস্তিষ্কের সমস্যা।

কারণ কখনও কখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অটিস্টিক শিশুদের মস্তিষ্কের কিছু অসুবিধা লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে মস্তিষ্কের গঠনগত ত্রুটি, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক ক্রিয়া, মস্তিষ্কের নিউরোকেমিক্যালের অসামঞ্জস্যতা, অন্তক্ষরা অন্যতম।

অটিজম আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজমের (ইপনা) সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু বলেন, অটিস্টিক শিশুর প্রধান চিকিৎসা নিওরো বিহেভিওরাল থেরাপি। অতিরিক্ত আচরণগত সমস্যা ও শারীরিক সমস্যার জন্য মেডিকেল চিকিৎসা এবং বিশেষ স্কুলে শিক্ষা প্রদান। দেখা গেছে, স্বল্প ও মধ্যম মাত্রার অটিজম প্রাথমিক অবস্থায় ধরা গেলে এবং সঠিকভাবে পরিচর্যা ও শিক্ষা পেলে রোগের উপসর্গ অনেকাংশ কমানো যেতে পারে।

তিনি বলেন, বেশির ভাগ অটিস্টিক শিশু অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। প্রতি ১০ জন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে একজনের ছবি আঁকায়, গানে, গণিতে বা কম্পিউটারে প্রচণ্ড দক্ষতা থাকে। অটিস্টিক শিশুকে ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে পরবর্তী সময়ে সমাজে অনেক কিছু দিতে পারে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: