ঢাকা | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

তিস্তা সমস্যার আশু সমাধান করা হবে : মোদি

Admin 1 | প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০১৭ ০০:১১

Admin 1
প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০১৭ ০০:১১

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিস্তা ইস্যু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে খুব শিগগির এ সমস্যার সমাধানে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
নয়াদিল্লী সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বিবৃতিতে বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তিস্তা সমস্যা কেবলমাত্র আমার সরকার এবং শেখ হাসিনার সরকারই করতে সক্ষম হবে এবং যতশিগগির সম্ভব তিস্তার পানি বন্টন সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, আমাদের অভিন্ন স্থলসীমান্ত ও নদ-নদী রয়েছে। আমাদের জনগণ সেখানে বসবাস করে এবং জীবিকার্জন করে। প্রধানমন্ত্রী মোদি তিস্তাকে ভারতের জন্য, বাংলাদেশের জন্য এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেন। তবে এ বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের বিষয় বলেও উল্লেখ করে মোদি বলেন, আমি জানি, বাংলাদেশের জন্য মমতা ব্যানার্জীর দরদ আছে, আমারও আছে। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জনগণকে আশ্বস্থ করে বলছি, তিস্তা সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমাদের দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘ সীমানা রয়েছে। তিনি ২০১৫ সালের জুন মাসে ঢাকা সফরের উল্লেখ করে বলেন, তার এ সফরের সময়ে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং এই চুক্তি এখন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এই অঞ্চলের জন্য এখন একটি হুমকি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে তিনি ঢাকার অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, ভারত সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগকে সমর্থন জানায়। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি আমাদের সকলকে অনুপ্রাণীত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় এ অঞ্চলের জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য তাদের প্রয়াস অব্যাহত রাখতে সম্মত হন। এতে বলা হয়, আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষা করতে এক সঙ্গে কাজ করব। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তার শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের জন্যই হুমকি সৃষ্টি করছে না, এই গোটা অঞ্চলের জন্যই হুমকি সৃষ্টি করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ সবসময় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে। আমরা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। তিনি বলেন, দু’দেশের সহযোগিতার সুফল অবশ্যই আমাদের জনগণ পাবে। তিনি বলেন, বৈঠকে আমাদের অংশীদারের বিষয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আমরা আমাদের সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয়েছি এবং আমাদের এই সহযোগিতাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এক সঙ্গে কাজ করতেও সম্মত হয়েছি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশ নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তুলতে চায়, বিশেষ করে, কিছু উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। যেখানে দু’দেশের যুবসমাজের সম্পৃক্ততা থাকবে। এ ছাড়া ইলেক্ট্রোনিক, তথ্য-প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ গবেষণা ও বেসামরিক পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। তাঁর দেশ দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা সৃষ্টি করতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সামগ্রী ক্রয়ে সহায়তায় ৫০০ মিলিয়ন মাকির্ন ডলারের একটি ঋণ ঘোষণা করতে পেরে আমি খুশি হয়েছি। বাংলাদেশের প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আমরা এটি বাস্তবায়ন করব।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অগ্রাধিকার খাতগুলোর প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি নতুন রেয়াতি ঋণ কর্মসূচি ঘোষণা করতে পেরে তিনি আনন্দিত।
তিনি বলেন, ‘এর ফলে গত ছয় বছরে বাংলাদেশের জন্য আমাদের সম্পদ বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ালো ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।’
মোদি উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে জ্বালানি নিশ্চয়তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে নিশ্চিত করে বলেন, ভারত আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সবার জন্য বিদ্যুৎ অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবেলায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জ্বালানি অংশীদারিত্বের বিকাশ অব্যাহত থাকবে এবং আজকে আমরা অতিরিক্ত ৬০ মেগাওযাট বিদ্যুৎ যোগ করছি, এছাড়াও বর্তমানে ভারত থেকে বাংলাদেশে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।’
মোদি বলেন, ‘বিদ্যমান আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে আরো ৫০০ মেগাওয়াট সরবরাহের জন্য ইতোমধ্যে অঙ্গীকার করা হয়েছে। আমরা থেকে নুমালিগড় থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ডিজেল তেল সরবরাহের পাইপলাইন নির্মাণের অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে হাইস্পিড ডিজেল সরবরাহের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করছে।
মোদি বলেন, পাইপলাইন নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত সরবরাহ অব্যাহত রাখার একটি সময়সূচির ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। আমরা আমাদের উভয় দেশের বেসরকারি খাতকে এই জায়গায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছি।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে বিনিযয়োগের জন্য আগামী দিনগুলোতে বিভিন্ন চুক্তি ভারতীয় কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা যায়।
তিনি সংযোগকে দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে সাফল্য এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মোদি বলেন, ‘শনিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এক সাথে আমরা বহু নতুন সংযোগের উদ্বোধন করেছি- যা আমাদের ক্রমবর্ধমান নতুন সংযোগের সঙ্গে যুক্ত করেছে। কলকাতা, খুলনা, রাধিকাপুর এবং বিরলের মধ্যে বাস ও ট্রেন সংযোগ আজ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ।’
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ জলপথের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কোস্টাল শিপিং এগ্রিমেন্ট কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
মোদি বলেন, ‘আমরা পণ্যের দ্বিমুখী ট্রান্স-শিপমেন্টের উন্নতি দেখতে চাই। আমরা বিবিআইএন মোটরযান চুক্তির প্রাথমিক বাস্তবায়ন করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। এটি উপ-আঞ্চলিক সংহতির ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে’, বলেন তিনি।
মোদি বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছে যে, ‘আমাদের বাণিজ্যিক বিষয়গুলোর আরো বৈচিত্র্য প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, কেবল দুই অর্থনীতির মধ্যে ব্যাপক ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বই নয়, বৃহত্তর আঞ্চলিক সুবিধার জন্যও তাকে বহুদূর বিস্তৃত করতে হবে।
মোদি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাতে পেরে ভারত খুশী হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন সীমান্তহাট খোলার জন্য আমাদের চুক্তি বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে সীমান্তবাসীর ক্ষমতাতায়ন এবং তাদের জীবিকার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী সক্ষমতা বৃদ্ধির সাফল্য ও প্রশিক্ষণ উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ভারতে প্রায় এক হাজার পাঁচশ’ বাংলাদেশী সরকারি কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। আমরা আমাদের বিচার বিভাগীয় একাডেমিতে প্রায় অনুরূপভাবে এক হাজার পাঁচশ’ বাংলাদেশী বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোদি বলেন, তিনি ভারতের একজন প্রিয় বন্ধু ছিলেন এবং ছিলেন বিশাল নেতা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতির জনকের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও গভীর ভালবাসার নিদর্শনস্বরূপ তার নামে আমাদের রাজধানীর একটা বিখ্যাত সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর যৌথভাবে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণেও সম্মত হয়েছি, যেটি ২০২০ সালে তার জন্ম শতবার্ষিকীতে মুক্তি পাবে।’
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র হিন্দি অনুবাদ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমিও গর্বিত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন, সংগ্রাম ও অবদান ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অব্যাহতভাবে প্রেরণা যোগাবে।
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন উপলক্ষে আমরা যৌথভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরিতেও সম্মত হয়েছি।
মোদি শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘আপনি আজ অত্যন্ত সফলভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উচ্চপ্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের এক সুনির্দিষ্ট পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের জন্য আমরা আনন্দিত।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রক্তে ও বংশপরম্পরায় জড়ানো সম্পর্কের এই বন্ধন আমাদের জনগণের জন্য ভাল ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করে।
এই বিবৃতির শুরুতেই মোদি বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানান এবং পহেলা বৈশাখের ঠিক আগে শেখ হাসিনার এই সফরকে শুভক্ষণে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
মোদি বলেন, ‘আপনার সফর আমাদের জনগণ ও দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের আরেক স্বর্ণযুগ হিসাবে চিহ্নিত হবে। আমাদের সম্পর্কের বিস্ময়কর পরিবর্তন এবং অংশীদারিত্বের অর্জনগুলো আপনার দৃঢ় ও সবল নেতৃত্বেরই সুস্পষ্ট স্বীকৃতি।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সৈন্যদের সম্মান জানানোর বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত ভারতের জনগণকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।
তিনি বলেন, ‘স্বৈরশাসন থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সৈন্যরা এক সঙ্গে যুদ্ধ করেছে জেনে প্রতিটি ভারতীয় গর্ভবোধ করছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: