ঢাকা | রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

কোন ধর্মই সমর্থন করে না ধর্মের নামে মানুষে মানুষে হানাহানি : তথ্যমন্ত্রী

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:০২

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:০২

 

চট্টগ্রাম, ৬ অক্টোবর, ২০১৯  : তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন ধর্মের নামে মানুষে মানুষে হানাহানি কোন ধর্মই সমর্থন করে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনকে দৃঢ় বৃত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে আমরা রাষ্ট্রকে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে দিতে চাই। এটাই হোক আজকের মহা সপ্তমীর আলোচনার মূল শপথ।
শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জেএমসেন হলে শারদীয় দূর্গোৎসবের মহাসপ্তমী উপলক্ষে আয়োজিত
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি এডভোকেট চন্দন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সহকারী ভারতীয় হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি। বিশেষ
অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সুকান্ত ভট্ট্যাচার্য, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি রাখাল দাশ গুপ্ত, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আইয়ুব খাঁন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার, মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের
সহ-সভাপতি লায়ন দিলীপ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দাশ অসিত, এডভোকেট নিখিল কুমার নাথ প্রমূখ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রচনা করার জন্যেই জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবার সম্মিলিত রক্তস্্েরাতের বিনিময়ে আমাদের লাল সবুজ পতাকার জন্ম। আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, আমরা মনে করি, আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে বাঙালি। আমাদের দ্বিতীয় পরিচয় হচ্ছে কে কোন ধর্মাবলম্বী। আমাদের দেশে একটি পক্ষ আছে তাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে ধর্ম ভিত্তিক আর দ্বিতীয় পরিচয় হচ্ছে তারা বাঙালি নাকি বাংলাদেশি সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে থাকে। তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য সেখানেই।
তিনি বলেন, মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান হিন্দুদের জন্য হিন্দুস্থান এভাবেই দেশ বিভাগ হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। আমরা বাঙালিরা সেই সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি পোষণ করিনা। আমরা যখন দেখতে পেলাম সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে আমাদের মূল পরিচয়ের উপর আঘাত এসেছে। আমাদের ভাষার উপর আঘাত এসেছে। আমাদের সংস্কৃতির উপর আঘাত এসেছে। বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথের গান গাইতে দেয়া হচ্ছে না। আমাদের বর্ণমালা পরিবর্তনের অপচেষ্টা হচ্ছে। ভাষাকে ইসলামীকরণের অপচেষ্টা হচ্ছে তখন আমরা অনুধাবন করেছি এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে থাকা সম্ভবপর নয়। তখন ভাষার আন্দোলন ও স্বাধীকারের আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের পথ বেয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়েই এই বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এই বাঙালি পরিচয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। চার থেকে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে বাঙালি জাতি সত্ত্বার উম্মেষ ঘটেছিল। তারপর বাঙালিদের জন্য এই জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। অনেকে অপব্যাখ্যা দেয়। যারা অপব্যাখ্যা দেন তারা হয়তো জানেনা প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের যে সংবিধান সেখানেও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা আছে। ইরাকের সংবিধানের মধ্যেও অতীতে ধর্ম নিরপেক্ষতা ছিল। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতা মানে প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। সেজন্যই আমাদের স্লোগান দিই ধর্ম যার যার রাষ্ট্র কিন্তু সবার।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান মিলে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি, পৃথিবীর অনেক দেশে সেটা করা সম্ভবপর হয় না। একটি রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সমস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্ম এবং বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতির মেলবন্ধন থাকতে হয়। সেখানে প্রত্যেকটি সম্প্রদায়কে মনে করতে হয়, এই মাটি ও দেশ আমার। সেটি যদি প্রত্যেকটি মানুষ মনে না করে তাহলে সে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করবে না।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। অনেক সূচকে আমরা ভারতকে পেছনে ফেলে বহুদূর এগিয়ে গেছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির পর পাকিস্তানিরা বিশ্বসভায় অনেক সময় টিপ্পনি কাটতো। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আদৌ টিকে থাকতে পারবে কিনা, তাদের মনে সন্দেহ ছিল। আজকে উপমহাদেশের মধ্যে প্রশ্ন হচ্ছে, পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে আসলে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে? এপ্রশ্ন পাকিস্তানিদের মধ্যেও।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: