
স্বাধীনতা শব্দটিকে আপন করে নিতে কতোই না সংগ্রাম করতে হয়েছে।১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে আমাদের স্বাধীনতার পথে হাটা শুরু। তারপর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ নয় মাস পরে স্বাধীনতাকে আপন করে পেলাম। এই আগ্নিঝরা মার্চে স্বাধীনতার চেতনায় আমারা নতুন করে উজ্জীবিত হই। মহান স্বাধীনতা দিবস নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের অনুভূতি ভাবনা ও প্রত্যাশা তুলে ধরছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. সামিউল ইসলাম।
স্বাধীনতায় আমাদের প্রত্যাশা
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছি ঠিকই কিন্তু এক অদৃশ্য শিকল আমাদের বন্দী করে রেখেছে। তাইতো একটি সমৃদ্ধ স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে আমরা এখনও ব্যর্থ। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যে দেশ হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্ব মানচিত্রে গুরুত্বের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমন নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে এসেছিল বাঙালিরা। আজ তেমনি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সকল সমস্যা কাটিয়ে আমরা যেন বিশ্বের বুকে বড় করে নিজেদের নাম লিখে দিতে পারি এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মোঃ ছাব্বির, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
স্বাধীনতার আনন্দ ও গৌরব
স্বাধীনতা আমাদের আত্মপরিচয়ের ভিত্তি যা রচিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। স্বাধীনতা শুধু একটি শব্দ নয় এটি আমাদের গর্ব, ত্যাগ ও বিজয়ের প্রতীক। আমরা সেই বীর শহিদদের কাছে ঋণী যাদের আত্মত্যাগে আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। তাদের আত্মত্যাগেই আজ আমরা পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গা মুক্ত বিহঙ্গ। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাবার থেকে বড় আনন্দের আর কী কিছু হতে পারে? আমাদের শহীদ ভাইদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এখন স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। তাই আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে সেই স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য। আগামীর বাংলাদেশ গড়ার জন্য।
কাজী অনুপম, ইংরেজি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
স্বপ্নের স্বাধীনতা ও আমাদের দায়িত্ব
স্বাধীনতা হলো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারা, চিন্তা-চেতনা, মত প্রকাশ ও ধর্ম পালন করতে পারা।আমার স্বপ্নের বাংলাদেশে সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষ সকল ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করবে, প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এবং কেউ এতে বাধা প্রদান করবে না। আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত থাকবে এবং সকলের মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকবে।
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। যুগে যুগে আমরা অনেক শোষকের কাছ থেকে স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু এই স্বাধীনতা রক্ষা করতে না পেরে আবারো শোষিত হয়েছি। সবশেষে ২৪ সালে সহস্রাধিক শহীদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে স্বাধীন হলাম। আমাদের এই অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। আমাদের পরে স্বাধীনতা রক্ষার ভার পরবর্তী প্রজন্মের উপর বর্তায়। তাই তাদেরকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
মোজাহিদ হোসেন
বাংলা বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
স্বাধীনতার অর্থ ও আমাদের দায়িত্ব
স্বাধীনতা ছাড়া একটা জীবন মানে আত্মা ছাড়া শরীর। এই স্বাধীনতা নামক আত্মাকে পেতে বাঙালিদের রক্ত-সাগর পাড়ি দিতে হয়েছে। রক্তস্নাত হয়ে এই সবুজ শ্যামল বাংলা পেয়েছিল স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা তখনই সার্থকতা পাবে, যখন বাংলার মানুষ মুক্তকণ্ঠে কথা বলতে পারবে, সাম্প্রদায়িক পরিচয় ভুলে একসাথে কাজ করবে, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়বে। এই স্বাধীনতা যেন শুধু ২৬ মার্চ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোতেই যেন আবদ্ধ না থাকে। এই স্বাধীনতা আমাদের বাঙালির কাছে অমূল্য সম্পদ। এই সম্পদকে রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতাকে ধারণ করতে হবে, অনুভব করতে হবে, এর সুফলতা ছাড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। তখনই আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।
অনিমা সুলতানা
ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
স্বাধীনতার স্বপ্ন: দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ
আমি দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়বিচারপূর্ণ এবং সামাজিক মূল্যবোধ সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে প্রত্যেকের মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা ও জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হবে। যে দেশে কেউ না খেয়ে একটি রাতও পার করবে না, কোন বৃদ্ধাশ্রম থাকবে না, কোন পথশিশু থাকবে না এবং যে দেশ শিশু ও নারীসহ প্রত্যেকের জন্য হবে নিরাপদ, সকলে একটি শুদ্ধ পরিবেশে বসবাস করবে। যে দেশে মানুষ হাজার বছর বাঁচার স্বপ্ন দেখবে।আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম একসময় এই দেশকে পরিচালনা করবে। তারা সচেতন হলে এই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হবে তাদের কাছে নিরাপদ। তাই তাদের এই দেশকে নিয়ে ভাবতে হবে। অসংখ্য শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষাই হবে তাদের অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম।আমাদের স্বাধীনতাকে মূল্যায়ন করতে হবে। স্বাধীনতা কেবল একটি দিন নয়, এটি জাতির প্রতি দায়িত্ব পালনের এক নিরন্তর প্রেরণা।স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়ন তখনই সম্ভব যখন আমরা একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশ গড়ার পথে অবদান রাখতে পারবো।
মিজানুর রহমান
ইংরেজি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: