odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Tuesday, 4th November 2025, ৪th November ২০২৫

ফ্রান্সে শত শত রোগীকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত সার্জনের বিচার চূড়ান্ত

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৬ May ২০২৫ ১৮:৪৭

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৬ May ২০২৫ ১৮:৪৭

ফ্রান্সের ইতিহাসের  অন্যতম ভয়াবহ যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অভিযুক্ত এক সাবেক সার্জন জোয়েল লে স্কুয়ারনেকের (৭৪) বিচারের শেষ পর্ব শুরু হয়েছে সোমবার। অভিযুক্তের আইনজীবীরা এখন চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন করবেন।

ভ্যানস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

লে স্কুয়ারনেক ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পশ্চিম ফ্রান্সের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৯৯ জন রোগীকে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ২৫৬ জনের বয়স ছিল ১৫ বছরের নিচে। অধিকাংশ ঘটনাই ঘটেছে অস্ত্রোপচারের সময় অজ্ঞান অবস্থায় বা জ্ঞান ফেরার আগ মুহূর্তে।

গত শুক্রবার প্রসিকিউশন আদালতে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ডের আবেদন করেছে এবং দাবী করেছে যে, শাস্তি শেষে মুক্তি পেলেও লে স্কুয়ারনেক যেন একটি তত্ত্বাবধান ও চিকিৎসা কেন্দ্রে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রসিকিউটর স্তেফান কেলেনবার্গার অভিযুক্তকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তুমি ছিলে শয়তান, শুধু সাদা কোট পরে এসেছিলে। ’

তিনি আরো বলেন, এই মামলার বাইরে আরো যেসব ভুক্তভোগী আছেন, তাদের জন্য ভবিষ্যতে আরেকটি বিচারের প্রয়োজন হতে পারে।

মামলায় লে স্কুয়ারনেকের বিরুদ্ধে ১১১টি ধর্ষণ এবং ১৮৯টি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার রায় বুধবার ঘোষণা করা হতে পারে। তাকে ফ্রান্সের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ যৌন হেনস্তাকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ম্যাক্সিম টেসিয়ে বলেন, তার মক্কেল ‘সম্পূর্ণ দোষী’। ধারণা করা হচ্ছে, আসামিপক্ষ স্কুয়ারনেকের অপরাধের ভয়াবহতা নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ বা প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করবে না।

যদিও ভুক্তভোগীদের আইনজীবীরা তার ক্ষমা প্রার্থনার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেন, তিনি ‘যান্ত্রিকভাবে ও বারবার একই শব্দে’ ক্ষমা চেয়েছেন। এক পর্যায়ে এক আইনজীবী রাগ প্রকাশ করলে, লে স্কুয়ারনেক বলেন, ‘আমি কোনো অভিনেতা নই।’

তবে অনেক ভুক্তভোগীর আইনজীবী লে স্কুয়ারনেকের ক্ষমা প্রার্থনার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, অভিযুক্ত বিচার চলাকালীন বরাবরই যান্ত্রিকভাবে, কখনও মিনমিন করে ক্ষমা চেয়ে গেছেন, যা তার অনুশোচনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

গত ২০১৭ সালে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন লে স্কুয়ারনেক। যদিও ২০০৫ সালে একবার শিশুর আপত্তিকর ছবি রাখার অভিযোগে তার দণ্ড হয়েছিল। এরপরও তিনি দীর্ঘদিন পেশায় বহাল থাকায় চিকিৎসা ও বিচার বিভাগের ব্যর্থতা নিয়েও তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।

গত ২০২০ সালে তিনি চার শিশুকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলায় ১৫ বছরের সাজা পান, যার মধ্যে দুজন ছিলেন তার আপন ভাগ্নি।

মামলার কয়েকটি পক্ষ ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, এই মামলাটিকে ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম পর্যায়ে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

এ মাসের শুরুর দিকে প্রায় ২০ জন ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজন আদালতের সামনে বিক্ষোভ করেন। তখন তারা মামলাটির বিষয়ে ‘রাজনৈতিক নীরবতা’ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মাত্র ১১ বছর বয়সে লে স্কুয়ারনেক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন মানোঁ লেমোয়িন। তার বয়স এখন ৩৬ বছর। এই ভুক্তভোগী বলেন, ‘তাকেই শুধু দানব বললেই চলবে না, কারণ এই দানবকে সমাজই তৈরি করেছে এবং টিকিয়ে রেখেছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: