
আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে ২০২৩ সালে নাগোর্নো-কারাবাখ পুনরুদ্ধারের পর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের সাথে সাথে আজারবাইজান সিরিয়ার আঞ্চলিক শত্রুদের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য ইসরাইল ও তুরস্কের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
আজারবাইজানের শীর্ষ পররাষ্ট্র নীতি উপদেষ্টা হিকমেত হাজিয়েভ নিশ্চিত করেছেন, বাকু তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যে তিন দফারও বেশি আলোচনা হয়েছে। তিনটি দেশই সিরিয়াকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখা কমাতে কাজ করছে।
বাকু থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক গ্লোবাল জার্নালিজম কাউন্সিল আয়োজিত এক সফরে বাকুতে তুর্কি সাংবাদিকদের হাজিয়েভ বলেছেন, ‘আজারবাইজান একটি চুক্তির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’
তিনি বলেছেন, ‘তুরস্ক ও ইসরাইল উভয়ই আমাদের বিশ্বাস করে।’
তুরস্কের মদদে ইসলামপন্থী এইচটিএস বিদ্রোহীদের দ্বারা সিরিয়ার শক্তিশালী শাসক বাশার আল-আসাদের উৎখাত ইসরাইলের নিরাপত্তা হুমকির জন্ম দিয়েছে।
এরপর থেকে তারা সিরিয়ার গভীরে শত শত হামলা চালিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবারের হামলা সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের হাতে উন্নত অস্ত্র আয়ত্তে আসা বন্ধ করার জন্য। ইসরাইল সিরিয়ার নতুন সরকারকে জিহাদি হিসেবে দেখে।
ইসরাইল আঙ্কারার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তারা সিরিয়াকে তুর্কি আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করার চেষ্টা করছে। যার কারণে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আজারবাইজান সিরিয়ার সমস্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে আঙ্কারার অবস্থানের সাথে ধারাবাহিকভাবে নিজেকে অন্তর্ভূক্ত করেছে।
তবে ইসরাইলের সাথেও তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে - যা আজারবাইজানের তেলের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল এবং বাকুর একটি প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী।
এখন বাকু সিরিয়ার নতুন শাসকদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। তুরস্ক এবং ইসরাইলের মধ্যে প্রযুক্তিগত আলোচনার সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে নীরব কূটনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
বাকু-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ফরিদ শাফিয়েভ এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমরা সফল হব যদি উভয় পক্ষ একে অপরের উদ্বেগকে সম্মান করে এমন একটি সাধারণ মডেলে একমত হয়।’
তিনি আরো বলেছেন, বিশেষ করে কুর্দি যোদ্ধারা ‘সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতির কারণে তুরস্কের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়’।
তিনি বলেছেন, তুরস্ক উত্তর সিরিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, কিন্তু দামেস্কের আশপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পালমিরা এবং টি-৪ বিমানঘাঁটির আশপাশে ‘একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী মোতায়েন’ রাখতে চায়।
- ইসরায়েলে তেল সরবরাহ? -
গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধের ফলে তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে গেছে। আঙ্কারা জোর দিয়ে বলেছে, আলোচনা কেবল প্রযুক্তিগত ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন তুর্কি কর্মকর্তা এএফপি’কে বলেছেন, ‘যতক্ষণ গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে, ততক্ষণ তুরস্ক ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না।’
গাজা যুদ্ধের জন্য তুরস্ক ইসরাইলের সাথে বাণিজ্য স্থগিত করেছে।
কিন্তু কিছু তুর্কি বিরোধী ব্যক্তি আঙ্কারার সমালোচনা করেছেন, দাবি করেছেন, বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে বিশেষ করে বাকু-তিবিলিসি-সেহান পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল সরবরাহ যা আজারবাইজানের তেল দক্ষিণ বন্দর সেহানে নিয়ে যায় যেখান থেকে ইসরাইলে পাঠানো হয়।
তুরস্কের জ্বালানি মন্ত্রণালয় এই দাবিগুলোকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
আজারবাইজানের হাজিয়েভ বলেছেন, কারাবাখ সংঘাতের সময় বাকু ইসরাইলের কাছ থেকে মূল্যবান সমর্থন পেয়েছিল কিন্তু তেলের বিষয়ে মন্তব্য করতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধের সময় আমরা ইসরাইলের কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছিলাম। আমরা তাদের জন্য অর্থ প্রদান করেছি এবং ইসরাইল আমাদের কূটনৈতিক সহায়তা দিয়েছে।’
তিনি বলেছেন, ‘আজারবাইজানের তেল সেহানে আসছে কিন্তু একবার সেই তেল খোলা সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজে লোড করা হলে আপনি চূড়ান্ত গন্তব্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: