ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জোর দিয়ে বলেছেন, দেশকে এগিয়ে নেয়ার সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত পরিকল্পনা (ডিটেইল প্ল্যানিং) কেবল বিএনপির কাছেই আছে, অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে নেই।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই দাবি করেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারা দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, “বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ট্র্যাক রেকর্ড আমরা অতীতে দেখেছি। তাদের কাছে কোনো প্ল্যান নেই। কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে রাষ্ট্র চলে না, জনগণের পেটের খাবার কর্মসংস্থান, জনগণের অর্থের সংস্থান হয় না। এসব কিছুর জন্য পরিকল্পনা লাগে। জনগণ আমাদের কাছে প্রত্যাশা করে, কীভাবে আমরা দেশকে পরিচালনা করব, তাদের সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করব।”
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “পুরো পরিকল্পনা জনগণ আমাদের কাছে দেখতে চায়। দেশকে এগিয়ে নেয়ার ‘ডিটেইল প্ল্যানিং’ শুধু বিএনপির আছে, আর কোনো দলের নয়।”
প্রধান প্রধান পরিকল্পনা ও ট্র্যাক রেকর্ড:
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সময় দলের দুর্নীতি দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নারী শিক্ষার বিস্তার, ক্রীড়ার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ব দূর, তরুণদের প্রশিক্ষণ, শিল্পখাতের প্রসার এবং ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মার্স কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ডসহ বিএনপির পরিকল্পনাসমূহ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি নেতা-কর্মীদের প্রতি এসব পরিকল্পনা জনগণের দ্বারগৌড়ায় পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিএনপির অতীত সফলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং অধিকার রক্ষায় (যেমন: তালপট্টির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়) বিএনপির সুস্পষ্ট ও সফল ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জীবন বাজি রেখে ভারতকে তাড়িয়ে বাংলাদেশেরই অংশ তালপট্টি দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন এবং পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গিয়েছিল একমাত্র বিএনপি।
দুর্নীতি দমন ও আইনের শাসন:
বিএনপি দেশকে দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে বারবার মুক্ত করেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির আমলে দুর্নীতির সূচক কমতে থাকে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বেগম খালেদা জিয়ার ২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তখন সরকারি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গেলে অনুমতির প্রয়োজন ছিল না। “অথচ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সেই আইন পাল্টে ফেলে।
বিএনপির রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে এসব নিয়ম পাল্টে ফেলা হবে।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “যে কোনো মূল্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। অন্যায় যে করে সে কোনো দলের হতে পারে না, সে অন্যায়কারী। অতীতে দলের কেউ অন্যায় করলে বিএনপি দলীয়ভাবে নয়, আইন দিয়ে বিচার করেছে।
আগামীতেও সেটাই করবে।”
নারী সমাজের জন্য ফ্যামিলি কার্ড:
দেশের নারী সমাজকে স্বাবলম্বী করার ওপর জোর দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রায় চার কোটি পরিবারের নারী প্রধানদের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “যারা সমাজে পিছিয়ে দুস্থ কিংবা পিছিয়ে পড়া নারী রয়েছে তারা আগে এই কার্ড পাবেন। এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী মা হিসেবে নারীরা নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।”
নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান:
দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি তারেক রহমানের আহ্বান ছিল, দল সবার আগে। তিনি বলেন, “দল যদি টিকে থাকে, বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন যদি এই দলের পক্ষে থাকে তাহলেই আমরা দেশ গড়ার কর্মসূচিগুলো সফল করতে পারবো। তাই দেশের মানুষের সমর্থন পেতে হলে, যার যার এলাকায় টিম করে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে। দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো লিফলেট আকারে ছাপিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।”
তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রত্যেকটি নেতাকর্মী একটা জিনিস মনে রাখবেন- দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সব কিছু নির্ভর করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপর। আমরা যদি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, এ দেশের অস্তিত্ব নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন দেখা দেবে।”
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই ধারাবাহিক কর্মসূচি আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: