ঢাকা | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
‘জিটুজি-প্লাস’ এসপিপিএ সিস্টেম ১ সেপ্টেম্বর থেকেই স্থগিত হয়ে যাবে বলে সে দেশের সরকার বাংলাদেশকে জানিয়েছে।

মালয়েশিয়ার দরজা আর পাঁচদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০১৮ ০৫:৪৬

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০১৮ ০৫:৪৬

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারগুলোর একটি মালয়েশিয়ার দরজা আর পাঁচদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ‘জিটুজি-প্লাস’ নামে যে এসপিপিএ সিস্টেমের আওতায় মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতো, সেই পদ্ধতি আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকেই স্থগিত হয়ে যাবে বলে সে দেশের সরকার বাংলাদেশকে জানিয়েছে।

কিন্তু মালয়েশিয়া কেন বাংলাদেশের শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করছে? এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে সাংবাদিক শেখ কবীর আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত ২১ আগস্ট মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি, জেনারেল ইন্দেরা খাইরুল দাজমি বিন দাউদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে জানানো হয়েছে যে, সে দেশের বিগত সরকার বাংলাদেশের যে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মারফত শ্রমিক নিতো, তাদের এসপিএ সিস্টেম সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই বাতিল হয়ে যাবে। যদিও ওই চিঠিতে নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি, তবে আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারছি ওই ১০টি এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় নিয়োগ পেতে একজন শ্রমিকের যেখানে মাত্র ৪০ হাজার টাকা লাগার কথা, সেই জায়গায় এই এজেন্সিগুলো চার লাখ টাকা পর্যন্ত নিতো। এই দুর্নীতির সঙ্গে মালয়েশিয়ার আগের সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন মালয়েশিয়ার নাগরিকও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে এই কথিত দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সমিতি বায়রা’র কর্তৃপক্ষ। তবে সংস্থার উপদেষ্টা মো. দলিলউদ্দিন মন্ডল বিবিসিকে বলেন, তারা চেয়েছিলেন এই রিক্রুটমেন্ট পদ্ধতি সব সংস্থার জন্যই উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। তার কথায়, এর আগে ২০১৬ সালে দুই দেশের সরকার যখন আলোচনায় বসেছিল, তখন বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৯০০ এজেন্সির নাম জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মালয়েশিয়া মাত্র ১০টি এজেন্সিকে বেছে নেয় এবং বলে যে সংখ্যাটা পরে বাড়ানো হবে। আমরা অনেকবার লিখেছি যে, প্রসেসটা ওপেন করে দেওয়া হোক, কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। এখন মালয়েশিয়াতে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকার হয়তো আগের পদ্ধতিটা পছন্দ করছে না। ঠিক বলতে পারব না কী হয়েছে, তবে আমাদের বিশ্বাস মালয়েশিয়াতে জনশক্তি রপ্তানি পাকাপাকিভাবে কিছুতেই বন্ধ হবে না।

শেখ কবীর আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, বর্তমান পদ্ধতিতে যে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মারফত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ করা হতো তা বাতিল ঘোষণা করা হলেও মালয়েশিয়ার সরকার নতুন কী পদ্ধতি চালু করতে চাইছে তা আদৌ স্পষ্ট নয়। মাহাথির মোহাম্মদের নতুন সরকার হয়তো নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করবেন। কিন্তু তাতে যে বেশ সময় লাগবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই, আর ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এদেশে শ্রমিক আসা বন্ধ থাকবে ধরেই নেওয়া যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত হবে রেমিট্যান্স খাত

বায়রা’র তথ্য অনুযায়ী গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার অভিবাসী শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় গেছে। এই সংখ্যা সৌদি আরবে যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকের সমান। এ বিষয়ে দলিলউদ্দিন মন্ডল বলেন, মালয়েশিয়ায় বন্ধ হলে সাময়িকভাবে হয়তো বিরূপ প্রভাব পড়বে। তবে মালয়েশিয়া এর আগেও বহুবার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করেছে ও আবার চালু করেছে। কাজেই আমরা আশা করছি আবার নতুন কোনো সিস্টেম চালু হবে।

তবে ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ এম. এম. আকাশ মনে করেন, মালয়েশিয়ার এই সিদ্ধান্তে রেমিট্যান্স প্রবাহে যেমন বড় ভাটা পড়ার আশঙ্কা আছে সেটা একটা দিক- কিন্তু তার চেয়েও বড় বিপদ হল বাংলাদেশের ‘ভাবমূর্তির সঙ্কট’। যে কারণেই মালয়েশিয়া এটা বন্ধ করুক, আমাদের যে কিছুটা বদনাম হয়ে গেল সেটা অস্বীকার করতে পারি না। আমি যেটুকু সমস্যাটা বুঝতে পারছি, আমাদের দিক থেকেও যে মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত ছিল না- সেটা তো পরিষ্কার। বাংলাদেশকে এখন তারই মাশুল গুণতে হবে। জনশক্তি রপ্তানির পুরো পদ্ধতিটা যতক্ষণ না পুরোপরি ‘ডিজিটাল’ করা হচ্ছে, ততদিন এই জাতীয় সমস্যা থেকেই যাবে বলে ধারণা অধ্যাপক আকাশের।

প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি মানব পাচার সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের কাজ দিয়ে দুই বছরে ২০০ কোটি মালয়েশীয় রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে। এরপরই অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করে মাহাথিরের সরকার।

গত ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে বিদেশি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করার পর সাংবাদিক সম্মেলনে মাহাথির বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে ১০টি এজেন্সিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা একচেটিয়া ব্যবসা করে প্রতি কর্মীর কাছ থেকে ২০ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে আমরা সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে অনুমোদন দেব।

সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট মাহাথির মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ কমিটির বৈঠকে ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: